নেপালে জেন-জি প্রজন্মের কণ্ঠস্বর কে এই সুদান গুরুং

সুদান গুরুং। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

নেপালের সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে সহিংস বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগ করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলি। 

গত ৪ সেপ্টেম্বর ২৬টি সামাজিকমাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল দেশটির সরকার। এর প্রতিবাদে রাস্তায় নামেন তরুণরা। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সেই বিক্ষোভ সহিংসতায় রূপ নেয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে এ পর্যন্ত ১৯ জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে।

নেপালে আন্দোলন শুরুর পর সবচেয়ে বেশি আলোচনায় এসেছে সুদান গুরুংয়ের নাম। বলা হচ্ছে, এই আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন ৩৫ বছরের এই যুবক। 

সুদান গুরুংয়ের নেতৃত্ব

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম নিউজ এইটটিনের প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিবাদের সামনের সারিতে ছিলেন সুদান গুরুং। তিনি যুবকেন্দ্রিক এনজিও হামি নেপালের সভাপতি। যে এনজিওটি ধীরে ধীরে একটি নাগরিক আন্দোলনে পরিণত হয়।

ভারতের আরেক সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডের প্রতিবেদনে বলা হয়, আগেই ইনস্টাগ্রামে দেওয়া এক পোস্টে গুরুং নিশ্চিত করেন, তার প্রতিষ্ঠান আনুষ্ঠানিকভাবে র‍্যালি আয়োজনের আবেদন করেছে। র‌্যালিতে শিক্ষার্থীদের স্কুল ইউনিফর্ম ও হাতে বই নিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়। অর্থাৎ, ওই আন্দোলনকে শান্তিপূর্ণ প্রতিরোধের প্রতীক হিসেবে উপস্থাপন করা হয়।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ব্ল্যাকআউটের আগে হামি নেপাল সামাজিকমাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিবাদ রুট ও নিরাপত্তা নির্দেশাবলী জানিয়ে দিত। সুদানের বার্তায় ছিল শৃঙ্খলা, অহিংসা ও প্রতীকের ওপর জোর। তিনি শিক্ষার্থীদের প্ল্যাকার্ড বা স্লোগান নয়, বরং স্কুল ইউনিফর্ম পরে বই হাতে নিয়ে ভবিষ্যতের প্রতীক হয়ে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।

কে এই সুদান গুরুং

ফ্রি প্রেস জার্নালের প্রতিবেদনে বলা হয়, হামি নেপালের সভাপতি সুদাং ‍গুরুং তৃণমূলের নেতা। একসময় পার্টি আর নাইটলাইফ ইভেন্ট আয়োজনের জন্য পরিচিত গুরুংয়ের যুবনেতা হয়ে ওঠাটা ছিল অপ্রত্যাশিত, কিন্তু সচেতন সিদ্ধান্ত। তিনি ২০১৫ সালের ভূমিকম্পের পর যুবক-নেতৃত্বাধীন এই এনজিও প্রতিষ্ঠান করেন। ওই ভূমিকম্পে তার সন্তানের মৃত্যু হয়। যে ঘটনা তার জীবনের পথ বদলে দেয়।

এক সময়ের ইভেন্ট অর্গানাইজার সুদান গুরুং পরে দুর্যোগ, ত্রাণ ও নাগরিক কাজের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। প্রাতিষ্ঠানিক অস্বচ্ছতার বিরুদ্ধেও গুরুংয়ের প্রতিবাদের আগের ইতিহাস আছে। 

তিনি এর আগে 'ঘোপা ক্যাম্প' আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। যেখানে বিপি কৈরালা ইনস্টিটিউট অব হেলথ সায়েন্সেসে স্বচ্ছতার দাবি তোলা হয়। তার সংগঠন 'ধারনের' মেয়র হার্কা সাম্পাংয়ের সঙ্গে আগের কয়েকটি প্রচারণায়ও কাজ করেছে। ইসরায়েলে আটকে পড়া নেপালি নাগরিকদের দেশে ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টায় সমন্বয় করেছে। এ বিষয়ে তিনি ইউটিউব চ্যানেলে সুশান্ত প্রধানের একটি সাম্প্রতিক পডকাস্ট সাক্ষাৎকারে আলোচনা করেন।

সুদান বর্তমানে সবচেয়ে আলোচিত জেন-জি প্রজন্মের কাছে দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। হয়ে ওঠেন জেন-জি প্রজন্মের কণ্ঠস্বর।

জেন-জির আন্দোলন

সোমবার হাজার হাজার জেন-জি যুবক কাঠমান্ডুর রাস্তায় নামেন। যাদের বেশিরভাই শিক্ষার্থী। তারা পার্লামেন্ট ভবনের বাইরে বিশাল র‍্যালি করেন। আন্দোলনকারীরা সরকারের সামাজিকমাধ্যমের নিষেধাজ্ঞা অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানান।

কাঠমান্ডু পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, আন্দোলনকারীরা পার্লামেন্ট কমপ্লেক্সে প্রবেশের চেষ্টা করলে সংঘর্ষে পরিণত হয়। পুলিশ জলকামান, টিয়ার গ্যাস এবং সরাসরি গুলি ব্যবহার করে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে। ফলে উত্তেজনা দ্রুত রাজধানীর বাইরে পোখারা, বুটওয়াল, ভাইরাহওয়া, ভারতপুর, ইটাহারি ও দামাকে ছড়িয়ে পড়ে।

দ্য হিমালিয়ান টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, কাঠমান্ডুর সিভিল হাসপাতাল, ট্রমা সেন্টারসহ বিভিন্ন হাসপাতাল আহতদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। কয়েকটি কেন্দ্র অন্য হাসপাতালে রোগী পাঠাতে শুরু করে।

সরকার কাঠমান্ডু, ললিতপুর, পোখারা, বুটওয়াল এবং সুনসারাই জেলার ইটাহারিতে কারফিউ জারি করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে।

'নেপো কিড' আন্দোলন

ইন্ডিয়া টুডের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আন্দোলনের তীব্রতা আরও বাড়িয়ে দেয় ভাইরাল ক্যাম্পেইন 'নেপো কিড'। এই ক্যাম্পেইনটি অনলাইনে জনপ্রিয়তা পায়। যুব নেপালিদের নেতৃত্বে এই আন্দোলন ছিল রাজনীতিবিদ ও ক্ষমতাশালী এলিটদের সন্তানদের সুবিধাভোগী জীবন ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে।

Comments

The Daily Star  | English
chocolate trend in Bangladesh

Mimi, nostalgia and new bites

Local, global brands offer treats for all budgets, with young people driving the demand

13h ago