নাইন ইলেভেনের নগরীতে মুসলিম মেয়র?

অলঙ্করণ: স্টার ডিজিটাল গ্রাফিক্স

নিউইয়র্ককে ৯/১১ এর নগরী বলা যেতে পারে। কেননা, ২০০১ সালে আজকের দিনে ইতিহাসের এক নির্মম ঘটনা ঘটেছিল এই মহানগরীতে। সেই দিনের সেই মর্মান্তিক ঘটনা শুধু যুক্তরাষ্ট্রের নয়, বদলে দেয় পুরো বিশ্বব্যবস্থাকেও।

২০০১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কের বিখ্যাত টুইন টাওয়ারে হামলায় সন্ত্রাসীরা যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ ব্যবহার করেন। বর্তমানে এক দেশ থেকে আরেক দেশে যেতে উড়োজাহাজ যাত্রীদের যে বাড়তি নিরাপত্তা বা কোনো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় ঢুকতে যে বাড়তি তল্লাশি তা বলা যায় মূলত টুইন টাওয়ার বা বিশ্ব বাণিজ্যকেন্দ্র ধ্বংসের পর থেকেই শুরু।

ধ্বংসপ্রাপ্ত সেই জায়গাটি এখন 'গ্রাউন্ড জিরো' হিসেবে পরিচিত।

সেই সন্ত্রাসী হামলায় প্রাণ হারান প্রায় তিন হাজার মানুষ। হামলাকারীদের সঙ্গে আল কায়েদার সংযোগের কারণে সারাবিশ্বে 'মুসলিমবিদ্বেষী' হাওয়া বয়ে যেতে শুরু করে। প্রায় সিকি শতাব্দী পরও সেই বিদ্বেষ এতটুকু কমেনি। বরং বেড়েছে। বিশেষ করে, নিউইয়র্ক শহরে জনবিদ্বেষ 'জাতীয় সংকট' হিসেবে চিহ্নিত।

এই সংকট নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে। আগামী ৪ নভেম্বর এই মহানগরীতে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এক গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন। বিশ্ববাণিজ্যের রাজধানী হিসেবে খ্যাত এই নগরীর মেয়র নির্বাচন হবে সেদিন। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন চারজন। দুইজন দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের। বাকি দুইজন স্বতন্ত্র।

ডেমোক্র্যেট-প্রধান অঙ্গরাজ্য হিসেবে পরিচিত নিউইয়র্ক নগরীর মেয়র প্রার্থী হিসেবে ডেমোক্র্যেটিক পার্টির মনোনয়ন পেয়েছেন জোহরান মামদানি (৩৩)। অন্যদিকে, রিপাবলিকান পার্টির মনোনয়ন পেয়েছেন কার্টিস স্লিওয়া (৭১)।

নগরীর বর্তমান মেয়র ও ডেমোক্র্যেট নেতা এরিক অ্যাডামস (৬৫) এবং অপর ডেমোক্র্যেট নেতা ও নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুয়োমো (৬৭) নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে।

৯/১১ হামলার পর ইসলামভীতি অনেক বেড়েছে উল্লেখ করে জোহরান মামদানি দ্য নিউইয়র্ক টাইমস বলেন, 'এই ভয়ঙ্কর দিন অনেক নিউইয়র্কবাসীকে সেই মুহূর্তের কথা মনে করিয়ে দেয়, যখন তাদেরকে 'অন্য' মানুষ হিসেবে গণ্য করা হতো।'

নিউইয়র্ক নগরীর মেয়রের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ৯/১১ উপলক্ষে মেয়র এরিক অ্যাডামস 'গ্রাউন্ড জিরো থ্রি হানড্রেড সিক্সটি' শিল্প প্রদর্শনী উদ্বোধন করেছেন। বক্তৃতায় তিনি নিহতদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন।

অ্যান্ড্রু কুয়োমো ওয়েবসাইটে ৯/১১ হামলায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় এই ডেমোক্র্যেট নেতার এগিয়ে আসার কথা ও প্রতিদ্বন্দ্বী মেয়র প্রার্থী জোহরান মামদানি যে হামলাকারীদের 'সমর্থক' সে কথা তুলে ধরা হয়েছে।

সমাজমাধ্যম এক্স-এ বার্তায় ৯/১১-কে স্মরণ করেছেন রিপাবলিকান পার্টির মেয়র প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়া। দিনটিকে নিউইয়র্ক নগরীর ইতিহাসে 'অন্ধকারতম দিন' হিসেবে আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, 'মেয়র নির্বাচিত হলে আমি তাদেরকে গুরুত্ব দেব যারা সেদিন প্রথম সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন।'

জরিপে এগিয়ে জোহরান

অলঙ্করণ: স্টার ডিজিটাল গ্রাফিক্স

মেয়র নির্বাচনে চার শীর্ষ প্রার্থীর তিন জনের জন্ম নিউইয়র্ক নগরীতে। শুধু জোহরান মামদানির জন্ম উগান্ডার রাজধানী কাম্পালায়। ১৯৯১ সালে। নিউইয়র্কের সরকারি ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, জোহরান সাত বছর বয়সে তার পরিবারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন। সেই হিসাবে ২০০১ সালে টুইন টাওয়ার ধ্বংসের সময় তার বয়স ছিল ১০ বছর।

জনজরিপে দেখা যাচ্ছে, বর্তমানে ৩৩ বছর বয়সী এই অভিবাসী নিউইয়র্কে জন্ম নেওয়া বর্ষীয়ান প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের তুলনায় বেশ এগিয়ে আছেন।

গত মঙ্গলবার প্রকাশিত দ্য নিউইয়র্ক টাইমস ও সিয়েনার যৌথ জরিপে দেখা যায়—জোহরান মামদানির পক্ষে মত দিয়েছেন ৪৬ শতাংশ, অ্যান্ড্রু কুয়োমোর পক্ষে ২৪ শতাংশ, কার্টিস স্লিওয়ার পক্ষে ১৯ ও এরিক অ্যাডামসের পক্ষে নয় শতাংশ ভোটার।

দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের ভাষ্য, জোহরান মামদানির সমর্থকরা ভিন্ন ভিন্ন ধর্ম ও বর্ণের মানুষ। তবে তরুণ ও উচ্চ শিক্ষিতদের মধ্যে তার সমর্থন খুব বেশি।

জরিপে আরও বলা হয়—জোহরান মামদানি ও অ্যান্ড্রু কুয়োমোর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হলে মামদানিকে ৪৮ শতাংশ ও কুয়োমোকে ৪৪ শতাংশ ভোটার সমর্থন জানিয়েছেন।

মূলত আবাসন ও নিত্যপণ্যের খরচ কমানো নিয়ে জোহরান মামদানি যে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন তা ভোটারদের বেশি আকৃষ্ট করছে বলেও নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

গতকাল ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে ভিন্ন এক জরিপের বরাত দিয়ে বলা হয়, নতুন জনজরিপে দেখা যাচ্ছে যে নিউইয়র্কের মেয়র প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জোহরান মামদানি বেশ এগিয়ে আছেন।

এতে আরও বলা হয়—বোস্টনের এমারসন কলেজ পোলিং, পিক্স ইলেভেন ও দ্য হিলের যৌথ জরিপে দেখা যাচ্ছে যে ভোটারদের ৪৩ শতাংশ জোহরান মামদানির ও ২৮ শতাংশ অ্যান্ড্রু কুয়োমোর পক্ষে মত দিয়েছেন।

সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের নির্বাচনে নিউইয়র্ক নগরীতে প্রায় ৫৬ লাখ ভোটার নিবন্ধিত হয়েছিলেন। এ বছরের নির্বাচনে তা ৫৫ লাখ থেকে ৬০ লাখ হতে পারে। আগামী ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত নিউইয়র্কে ভোটার নিবন্ধনের সুযোগ থাকবে।

এখন প্রশ্ন—ঠিক ২৪ বছর পর এই ৯/১১-র নগরী কি একজন মুসলিম মেয়র পেতে যাচ্ছে?

 

Comments

The Daily Star  | English

Shibli Rubayat, Reaz Islam banned for life in market over scam

In 2022, asset management firm LR Global invested Tk 23.6 crore to acquire a 51 percent stake in Padma Printers, a delisted company, from six mutual funds it manages

2h ago