‘ধ্বংসাত্মক’ বিক্ষোভের পর ‘ভীতিকর’ নেপাল

নেপালে বিক্ষোভের পর সব কিছুর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে সেনাবাহিনী। ছবি: এএফপি

ধ্রুব শ্রেষ্ঠ; অবসরপ্রাপ্ত এক নেপালি বেসামরিক কর্মচারী। দেশটিতে গৃহযুদ্ধ থেকে রাজনৈতিক উত্থান পর্যন্ত কয়েক দশকের অশান্তি দেখে এসেছেন তিনি। 

তবে ৭৬ বছর বয়সী এই ব্যক্তির অভিমত, চলতি সপ্তাহের সহিংসতার সঙ্গে এর কোনো কিছুই তুলনীয় নয়।

আজ শুক্রবার কাঠমান্ডুতে সেনাবাহিনী সাময়িকভাবে কারফিউ তুলে নেওয়ার সময় তিনি এএফপিকে বলেন, 'আমি ছাত্রজীবন থেকে বিভিন্ন সহিংসতা দেখে আসছি, কিন্তু এমন দাঙ্গা কখনো হয়নি।'

দুর্নীতিবিরোধী তরুণ বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশ গুলি চালানোর পর গত মঙ্গলবার থেকে বিশৃঙ্খলা ও ধ্বংসযজ্ঞে নিমজ্জিত হয় নেপাল।

পরের দিন সেনারা সব কিছুর নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার আগে বিক্ষোভকারীরা পার্লামেন্ট, সরকারি ও রাষ্ট্রপতির কার্যালয় এবং সদ্য চালু হওয়া হিলটন হোটেলে আগুন দেয়।

ধ্রুব শ্রেষ্ঠ বলেন, 'এমন পরিস্থিতিতে যে কেউ ভয় পাবে। এটা কেউ কল্পনাও করতে পারেনি।'

তবে আজ নেপালের রাস্তাঘাট ছিল অনেকটাই শান্ত, চারদিকে পুড়ে যাওয়া যানবাহনের চিহ্ন, সেনারা পুড়ে যাওয়া সরকারি ভবনগুলো পাহারা দিচ্ছে।

ছবি: এএফপি

গৃহযুদ্ধের অবসান ও ২০০৮ সালে রাজতন্ত্র বিলুপ্তির পর সবচেয়ে মারাত্মক সহিংসতায় তিন কোটি জনসংখ্যার এ দেশটিতে অন্তত ৫১ জন নিহত হয়েছেন। 

জেল ভেঙে পালিয়ে গেছেন প্রায় সাড়ে ১২ হাজার কয়েদি। যাদের হন্যে হয়ে খুঁজছে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী।

রাজনৈতিক শূন্যতা পূরণে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কির নাম ঘোষণা করেছে দেশটির রাষ্ট্রপতির কার্যালয়।

আজ শুক্রবার রাষ্ট্রপতির প্রেস উপদেষ্টা কিরণ পোখারেল এক বিবৃতিতে বলেন, 'প্রেসিডেন্ট রামচন্দ্র পাওদেল সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কিকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেবেন। আজ রাত ৯টায় তার শপথ নেওয়ার কথা রয়েছে।'

ছবি: এএফপি

ভীতিকর সংকট

নেপালের সাধারণ নাগরিকরা দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার প্রত্যাশায় আছেন। দৈনন্দিন বেঁচে থাকার ওপরই এখন তাদের সব ফোকাস।

সাময়িক কারফিউ বিরতিতে শত শত বাসিন্দা খাবার কেনার জন্য বাইরে বের হয়েছেন ঠিকই, তবে তাদের আশঙ্কা আরও অনেকদিন হয়তো বাড়িতে লুকিয়ে থাকতে হবে।

একটি বাজার থেকে খাদ্যসামগ্রী কেনার সময় ধ্রুব শ্রেষ্ঠ বলেন, 'পরিস্থিতি স্পষ্টতই ভীতিকর ও উদ্বেগজনক।'

এএফপি বলছে, নেপালে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের দাবির পাশাপাশি অর্থনৈতিক দুরবস্থার বিষয়টিও বিক্ষোভকে ট্রিগার করেছে।

বিশ্বব্যাংকের মতে, নেপালের ৮২ শতাংশ কর্মশক্তি অনানুষ্ঠানিক কর্মসংস্থানে জড়িত, যা বিশ্বের সর্বোচ্চ হারের মধ্যে রয়েছে।

ছবি: এএফপি

রাস্তার এক স্টলে চায়ে চুমুক দিতে দিতে নির্মাণ শ্রমিক অনুপ থাপা বলেন, 'আমাদের মতো লোকেদের জন্য এটা কঠিন, যাদের দিন এনে দিন খেতে হয়।'

'আমার কোনো সঞ্চয় নেই। কাজ ছাড়া বেঁচে থাকা কঠিন', বলেন তিনি।

৭৩ বছরের অচ্যুত থাপালিয়া ধ্বংসযজ্ঞ দেখতে বের হয়েছিলেন। তিনি আগুনে পোড়া সিংহ দরবার ও পার্লামেন্ট ভবন দেখে কেঁদে দেন।

তিনি বলেন, 'চোখে অশ্রু নিয়ে ফিরে এলাম। এটা ছিল আমাদের গর্ব।'

থাপালিয়া দুর্নীতি অবসানের জন্য বিক্ষোভকারীদের দাবির প্রতি সমর্থন জানান, তবে সহিংসতায় 'না' সূচক জবাব দেন।

তিনি বলেন, 'এটি বুদ্ধের দেশ। আমরা শান্তিপ্রিয় মানুষ। আমাদের শান্তিতেই থাকা উচিত।'

Comments

The Daily Star  | English

Restoring party discipline now key task for Tarique

Leaders hope his return will help strengthen unity within party

8h ago