শেভ না করলে মার্কিন সেনাবাহিনী থেকে বিদায়

আমেরিকার যেসব সেনাসদস্য এক বছরের বেশি সময় ধরে শেভ করেননি, তাদেরকে আর ওই বাহিনীতে প্রয়োজন নেই। ওই সেনাদের বিদায় করে দেওয়া উচিৎ। এমনটাই বলেছেন ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ।
গত বুধবার বার্তা সংস্থা এপির বরাত দিয়ে ওয়াশিংটন পোস্ট এই তথ্য জানিয়েছে।
সেনাবাহিনীর নির্ধারিত মানদণ্ড অনুযায়ী, মার্কিন সেনাদের সবসময় ক্লিন শেভড অবস্থায় থাকতে হবে।
শুধুমাত্র অসুস্থতাজনিত কারণে এই নিয়মের ব্যতিক্রম হতে পারে। তবে সে ক্ষেত্রেও রয়েছে বিশেষ নিয়ম—যদি কেউ অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে দাঁড়ি শেভ করার বাধ্যবাধকতা থেকে রেহাই চান, তাহলে তাদেরকে শুরুতে সেনাবাহিনীর চিকিৎসাকর্মীদের কাছ থেকে সুপারিশ আদায় করতে হবে।
তারপর সেই সুপারিশের ভিত্তিতে এক বছর চিকিৎসা নিতে হবে। এক বছর চিকিৎসার পরও যারা সুস্থ হবেন না বা দাঁড়ি শেভ করবেন না, তাদেরকে সেনাবাহিনী থেকে বের করে দেওয়া হবে।
এতদিন পর্যন্ত কমান্ডারের বিশেষ অনুমতি নিয়ে এই নিয়ম থেকে রেহাই পাওয়া যেত। ওই নীতি বেশ কয়েক দশক ধরে চালু ছিল। তবে এখন পরিস্থিতি বদলাতে যাচ্ছে।
২০ আগস্টের একটি সরকারি মেমো গত সোমবার প্রকাশ পেলে নতুন নীতিমালার বিষয়ে তথ্য জনসম্মুখে আসে।
পিএফবি রোগীদের ক্ষেত্রে ছাড়
যেসব সেনা সিউডোফোলিকিউলিটিস বারবেয়ি বা পিএফবি নামের রোগে আক্রান্ত, তারা দাঁড়ি কামানোর বাধ্যবাধকতা থেকে রেহাই পেয়ে থাকেন। এই রোগে আক্রান্ত হলে শেভ করার পর দাঁড়ি জট পাকিয়ে ত্বকের সঙ্গে আটকে যায় এবং ত্বকে অস্বস্তি দেখা দেয়। এই রোগে কম-বেশি সবাই আক্রান্ত হতে পারে। তবে কৃষ্ণাঙ্গদের ক্ষেত্রে এর প্রকোপ বেশি দেখা দেয়।
অর্থাৎ এখন থেকে শুধু পিএফবি বা এ ধরনের গুরুতর রোগে আক্রান্ত হলেই কেবল মার্কিন সেনারা দাঁড়ি রাখার অনুমতি পাবেন।

এ বিষয়টি সম্পর্কে নতুন তথ্য জানা গেছে। সরকারি 'মেমো' অনুযায়ী, এখন থেকে শুধু চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এ ধরনের অনুমতি দেওয়া হবে।
অর্থাৎ, কোনো শারীরিক বা চিকিৎসা সংক্রান্ত কারণ দেখা দিলেই শুধু দাঁড়ি না কামানোর অনুমতি পাওয়া যাবে।
শাস্তির বিধান
যেসব সেনা এক বছরের বেশি সময় পার হয়ে যাওয়ার পরও দাঁড়ি কামাননি, বা যাদের 'উল্লেখিত চিকিৎসা' এক বছরেও শেষ হয়নি, তাদেরকে সেনাবাহিনী থেকে 'বের করে দেওয়ার' নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
হেগসেথ ওই মেমোতে বলেন, 'যোদ্ধাদের দাঁড়ি কামিয়ে রাখার যে মানদণ্ড আমরা তৈরি করেছি, সেটা বজায় রাখতে সেনা দপ্তরকে সব সময় সতর্ক থাকতে হবে।'
কঠোর নীতিমালা চালু
যুক্তরাষ্ট্রে বহুবছর ধরে সেনাদের শারীরিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে শিথিল মানদণ্ড বজায় রাখা হয়েছে। একজন সেনা দেখতে কেমন হবেন, সেটা নিয়ে কর্তৃপক্ষ মাথা ঘামানোর প্রয়োজন বোধ করেনি বললেই চলে। এটি লম্বা চুল, দাঁড়ি ও অন্যান্য বিষয়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ছিল। সেনাদের বিশেষ অনুরোধেও অনেকবার এসব মানদণ্ড শিথিলের নজির রয়েছে।
তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর নতুন করে এসব ক্ষেত্রে কঠোর নীতিমালার প্রয়োগ দেখা যাচ্ছে।
হেগসেথের মেমোতে বলা হয়েছে, 'মার্কিন সেনাবাহিনীর মানদণ্ড মতে সেনা সদস্যদের সবসময় ক্লিন শেভড ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন অবস্থায় থাকতে হবে।'

তবে কোনো সেনা গোঁফ রাখতে পারবেন কী না, সে বিষয়টিও স্পষ্ট করা হয়নি।
বিশেষ অভিযানে নিয়োজিত সেনাদের ক্ষেত্রে এই নীতির কোনো ব্যতিক্রম করা হবে কী না, সেটাও হেগসেথ তার বার্তায় জানাননি। যুদ্ধক্ষেত্রে বা আলাস্কার মতো বৈরি পরিবেশে মোতায়েন থাকা সেনাদের জন্য শেভ করা বেশ ঝামেলা ও ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে শেভ করে সংক্রামক রোগেও আক্রান্ত হতে পারেন তারা। এ বিষয়গুলো নিয়েও কিছু বলা হয়নি।
এ সপ্তাহে সেনাবাহিনীও আলাদা করে সেনাদের চেহারা ও বেশভূষার হালনাগাদ মানদণ্ড প্রকাশ করেছে।
সেখানে বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। বিশেষত নারীদের ক্ষেত্রে নখ, চুলের স্টাইল, কানের দুল ও মেকআপের গ্রহণযোগ্য মানদণ্ড আরও কঠোর করা হয়েছে।
জানুয়ারিতে মার্কিন বিমানবাহিনী একটি নতুন নীতি চালু করেছে। নেইল পলিশের নীতিতে বড় খড়গ নেমে এসেছে। আগে যেখানে মার্কিন বৈমানিকরা ঊর্ধ্বে ৬০টি রঙের নেইল পলিশ ব্যবহার করতে পারতেন—নতুন নীতিতে সেই সংখ্যা কমিয়ে তিনটি করা হয়েছে।
সামাজিক মাধ্যমে সমালোচনা
ইতোমধ্যে সামাজিক মাধ্যমে এক্সে নতুন এই নীতির সমালোচনা দেখা দিয়েছে।
শিখ সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্বকারী একটি এক্স হ্যান্ডলে উল্লেখ করা হয়েছে, এই নীতিতে ধর্মীয় কারণে যারা দাঁড়ি রাখেন, তারা প্রভাবিত হবেন কী না, তা তারা যাচাই করার চেষ্টা করছেন।
সাবেক সেনারাও সমালোচনা করে পোস্ট করছেন বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে।
Comments