লাদাখে জেন-জি বিক্ষোভের ‘ট্রেলার’ দেখল ভারত

লাদাখের রাজধানী লেহ শহরে বিক্ষোভকারীদের দেওয়া আগুনে জ্বলছে একটি গাড়ি। ছবি: এএফপি

লাদাখে এখন হাড় কাঁপানো শীত। হিমালয়ের সাড়ে ১১ হাজার ফিট উচ্চতায় ছিমছাম ছোট শহরে এখন বিক্ষোভের আগুন জ্বলছে। আলাদা রাজ্যের মর্যাদা ও বিশেষ সংবিধানিক সুরক্ষার দাবিতে তরুণরা ফেটে পড়েছেন বিক্ষোভে। আগুন দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দল বিজেপির স্থানীয় কার্যালয়ে। সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন চার জন।

লাদাখের মানুষ দাবি আদায়ে গত ছয় বছর ধরে শান্তিপূর্ণ মিছিল ও অনশনের মতো আন্দোলন চালাচ্ছিলেন। কিন্তু সেই আন্দোলন হঠাৎ সহিংস রূপ নেওয়ায় প্রশ্ন উঠেছে—এর পেছনের কারণ কী? কেন তরুণ প্রজন্ম এতটা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠল?

জম্মু কাশ্মীর থেকে পৃথক করার পর ২০১৯ সাল থেকে লাদাখে ভারতের কেন্দ্রীয় শাসন জারি আছে। তখন থেকেই সাংবিধানিক সুরক্ষা ও পৃথক রাজ্যের মর্যাদা দাবিতে আন্দোলন করছেন লাদাখবাসী। তাদের মূল দাবি হলো, তারা নির্বাচিত স্থানীয় সরকার চান, যা কেবল পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদার মাধ্যমেই সম্ভব। গত ছয় বছর ধরে তারা শান্তিপূর্ণ মিছিল ও অনশনের মতো কর্মসূচি পালন করে আসছিলেন।

হঠাৎ কেন পরিস্থিতি সহিংস হলো?

লাদাখে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন সহিংস রূপ নেওয়ার পেছনে বেশ কিছু কারণের কথা জানিয়েছে আল জাজিরা।

আন্দোলনের অংশ হিসেবে 'লাদাখ অ্যাপেক্স বডি'র (বিভিন্ন সামাজিক-ধর্মীয় ও রাজনৈতিক সংগঠনের জোট) নেতৃত্বে চলছিল অনশন কর্মসূচি। গতকাল বুধবার এই অনশন ১৫তম দিনে গড়ায়। এর আগের দিন সন্ধ্যায় দুজন বর্ষীয়ান অনশনকারী অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় আন্দোলনের সংগঠকেরা ধর্মঘটের ডাক দেন, যা পরিস্থিতিকে উত্তপ্ত করে তোলে।

এর পাশাপাশি, মোদি সরকারের সঙ্গে আলোচনা বিলম্বিত হওয়ায় বিক্ষোভকারীদের মধ্যে, বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ কাজ করছিল।

আন্দোলনের অন্যতম নেতা, শিক্ষাবিদ সোনম ওয়াংচুক বলেন, জ্যেষ্ঠ নেতাদের অসুস্থ হয়ে পড়া এবং সরকারের গড়িমসির কারণে তরুণদের মধ্যে এই ধারণা জন্মায় যে শান্তিপূর্ণ পথে আর কাজ হচ্ছে না।

এরপরই তরুণদের বিভিন্ন গোষ্ঠী লেহ শহরের মূল প্রতিবাদস্থল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে সরকারি ভবন ও বিজেপির কার্যালয়ের দিকে স্লোগান দিতে দিতে এগিয়ে যায়। এক পর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষ বেধে যায়।

জেন-জি বিপ্লব?

সোনম ওয়াংচুক এই ঘটনাকে 'তরুণদের ক্ষোভের বিস্ফোরণ' ও 'জেন-জি বিপ্লব' বলে অভিহিত করেছেন। এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে আস্থা হারিয়ে তরুণরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাস্তায় নেমে এসেছে। তিনি সাম্প্রতিক সময়ে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে তরুণদের নেতৃত্বে হওয়া গণ-অভ্যুত্থানের সঙ্গে একে তুলনা করেন।

লাদাখের এই সংকট ভারতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একদিকে ভূরাজনৈতিকভাবে এটি চীন সীমান্তের একটি স্পর্শকাতর অঞ্চল, অন্যদিকে একটি শান্তিপূর্ণ আন্দোলন সহিংস রূপ নেওয়ায় কেন্দ্রীয় সরকারের ওপর নতুন করে চাপ সৃষ্টি হলো।

Comments

The Daily Star  | English

Khaleda Zia’s janaza held

The namaz-e-janaza of BNP Chairperson Khaleda Zia was held at the South Plaza of the Jatiya Sangsad Bhaban today

6h ago