জাতিসংঘে ৩ ‘ষড়যন্ত্রের’ তত্ত্ব দিলেন ট্রাম্প, দাবি করলেন তদন্তের

জাতিসংঘে বক্তব্য রাখছেন ট্রাম্প। ছবি: এএফপি
জাতিসংঘে বক্তব্য রাখছেন ট্রাম্প। ছবি: এএফপি

নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে যোগ দিয়েছেন বিশ্বের শীর্ষ নেতারা। তাদের মধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও আছেন। তবে তার এই 'সফর' সুখের হয়নি। একের পর এক ঝামেলায় পড়েছেন তিনি। দাবি করেছেন, তিনি তিন ষড়যন্ত্রের' শিকার।

আজ বৃহস্পতিবার এই তথ্য জানিয়েছে সিএনএন।

তিন 'অশুভ' ঘটনা

গতকাল বুধবার ট্রাম্প তার সমাজমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে বলেন, 'জাতিসংঘে গতকাল যা ঘটেছে, তা প্রকৃত অর্থে অপমানজনক—একটি নয়, দুইটি নয়, তিনটি অশুভ ঘটনা ঘটেছে!'

জাতিসংঘের সদরদপ্তরে বন্ধ হয়ে যাওয়া এসকেলেটর, নষ্ট টেলিপ্রম্পটার ও অডিও নিয়ে দুর্ভোগ পোহান ট্রাম্প। তিনি এই ঘটনাকে 'ষড়যন্ত্র' হিসেবে আখ্যা দিয়ে এর যথাযথ তদন্তের দাবি করেছেন।

এসকেলেটর বন্ধ হয়ে যাওয় হেঁটে উপরে উঠতে বাধ্য হন ট্রাম্প ও তার স্ত্রী মেলানিয়া। ছবি: এএফপি
এসকেলেটর বন্ধ হয়ে যাওয় হেঁটে উপরে উঠতে বাধ্য হন ট্রাম্প ও তার স্ত্রী মেলানিয়া। ছবি: এএফপি

গত মঙ্গলবার সকালে জাতিসংঘে বক্তব্যের শুরুতেই তিনি ওই তথাকথিত ষড়যন্ত্রের প্রতি ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, 'আমি জাতিসংঘের কাছ থেকে দুইটি জিনিস পেয়েছি: একটি নষ্ট এসকেলেটর ও অন্যটি নষ্ট টেলিপ্রম্পটার।'

পরের পোস্ট তিনি বক্তব্য দেওয়ার সময় 'অডিও' নিয়ে কারিগরি সমস্যায় ভোগার কথাও উল্লেখ করেন।

উল্লেখ্য, টেলিপ্রম্পটার এমন একটি যন্ত্র যা বক্তাকে বক্তব্য রাখায় সহায়তা করে। ওই যন্ত্রের ছোট স্ক্রিনে পরের লাইন বা এর অংশবিশেষ ফুটে উঠে, যা দেখে বক্তা বুঝতে পারেন এরপর কোন কথাগুলো বলতে হবে।

জাতিসংঘের ব্যাখ্যা

জাতিসংঘের মহাসচিবের মুখপাত্র স্টেফান দুজারিক গতকাল সন্ধ্যায় এক বিবৃতিতে বলেন, 'ইতোমধ্যে এ বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রক্রিয়া শুরুর নির্দেশ দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী মিশনকে নিজেই জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব।'

যুক্তরাষ্ট্র যেসব ঘটনা উল্লেখ করেছে, সেগুলোর কারণ খুঁজে পেতে যা যা করণীয়, সে বিষয়ে জাতিসংঘ শতভাগ স্বচ্ছতায় সংশ্লিষ্ট মার্কিন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে প্রস্তুত।

জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস ও তার মুখপাত্র স্টেফান দুজারিক। ফাইল ছবি: রয়টার্স
জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস ও তার মুখপাত্র স্টেফান দুজারিক। ফাইল ছবি: রয়টার্স

মুখপাত্র দুজারিক ব্যাখ্যা দেন, একটি 'বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা' স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু হয়ে যাওয়ায় এসকেলেটর বন্ধ হয়।

মার্কিন প্রতিনিধিদলের এক ভিডিওগ্রাফার অজান্তে ওই নিরাপত্তা ব্যবস্থা চালু করে দেন বলে উল্লেখ করেন দুজারিক। দীর্ঘ বক্তব্যে বিষয়টির খুঁটিনাটি জানান তিনি।

ষড়যন্ত্রের দাবি

বিশ্লেষকদের মতে, এ ধরনের ছোটখাটো বিষয় নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশে আন্তর্জাতিক সংস্থাটির প্রতি ট্রাম্পের সার্বিক বৈরী মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। গত সপ্তাহে একাধিকবার জাতিসংঘের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন ট্রাম্প।

এসব কারিগরি সমস্যা নিয়ে লেখা পোস্টে ট্রাম্প আরও বলেন, 'বলাই বাহুল্য, যে কাজের জন্য জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল, সে কাজটিই তারা করতে পারছে না।'

'প্রথমত, বক্তব্য দেওয়ার জায়গাটিতে পৌঁছানোর জন্য নির্ধারিত এসকেলেটরটি জোরে শব্দ করে বন্ধ হয়ে গেল।'

জাতিসংঘে বক্তব্য দিচ্ছেন ট্রাম্প। ছবি: এএফপি
জাতিসংঘে বক্তব্য দিচ্ছেন ট্রাম্প। ছবি: এএফপি

'কপাল গুণে আমি আর মেলানিয়া ওই ধারালো স্টিলের সিঁড়িতে হুমড়ি খেয়ে পড়ে যাইনি। আমরা শক্ত করে রেলিং ধরে রেখেছিলাম। না হলে চরম বিপর্যয় হতো,' যোগ করেন তিনি।

ট্রাম্প বলেন, 'এটা নিঃসন্দেহে ষড়যন্ত্র।'

সপ্তাহান্তে লন্ডন টাইমসে প্রতিবেদন প্রকাশ পায়। সেখানে বলা হয়েছে, জাতিসংঘের কর্মীরা ট্রাম্পকে হেনস্থা করতে এসকেলেটর ও লিফট বন্ধ রাখা নিয়ে কৌতুক করেছেন।

'যারা এই কাজ করেছে, তাদের গ্রেপ্তার করা উচিৎ,' বলে মনে করেন ট্রাম্প।

পোস্টে ট্রাম্প জানান, সাধারণ পরিষদে বক্তব্যের শুরুতেই টেলিপ্রম্পটার 'অকেজো' হয়ে যায়।

পরে টেলিপ্রম্পটার চালু হলেও ট্রাম্প তার বক্তব্যের শেষে বলেন, 'মিলনায়তনে অডিও ঠিক মতো কাজ করছিল না।'

এরপর বিদ্রূপাত্মক সুরে ট্রাম্প বলেন, 'বিষয়টা এমন, সঙ্গে থাকা দোভাষীদের ইয়ারপিস কানে না লাগালে কোনো বিশ্বনেতা আমার কথাই শুনতে পেতেন না।'

ট্রাম্প জানান, যথাযথ তদন্তের দাবি জানিয়ে তিনি জাতিসংঘের নেতৃত্বের কাছে ইমেইল পাঠাবেন। তিনি এসকেলেটরের আশেপাশের ভিডিও ফুটেজও দেখতে চাওয়ার দাবি করেছেন।

এ কাজে মার্কিন গোয়েন্দারা সহায়তা করবে বলেও জানান তিনি।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আরও বলেন, 'এটা কাকতালীয় ঘটনা নয়। জাতিসংঘে তিনবার ষড়যন্ত্রের ঘটনা ঘটেছে। তাদের লজ্জিত হওয়া উচিৎ। আমি এই চিঠির কপি মহাসচিবকে পাঠাব। এ নিয়ে অবিলম্বে তদন্তের দাবি জানাব।'

দায়ী কে?

জাতিসংঘ ও প্রশাসন একে অপরকে এই 'কারিগরি ত্রুটির' জন্য একে অপরকে দায় দিয়েছে। জাতিসংঘের এক কর্মকর্তা জানান, প্রেসিডেন্টের টেলিপ্রম্পটার পরিচালনার দায়িত্ব হোয়াইট হাউসের। অপরদিকে, হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তার দাবি, যন্ত্রটি জাতিসংঘ সরবরাহ করেছিল।

জাতিসংঘে মার্কিন রাষ্ট্রদূত এক্স পোস্টে বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক ফোরামে নিরাপত্তা ও সম্মানহানির হুমকি বরদাশত করবে না। এ বিষয়টিতে আমরা সর্বোচ্চ সহযোগিতা ও দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপের প্রত্যাশা করছি।'

ট্রাম্পের সঙ্গে সুর মিলিয়ে তিনি বলেন, 'এ ধরনের ত্রুটি গ্রহণযোগ্য নয়। এতে একটি ভঙ্গুর প্রতিষ্ঠানের গুরুতর নিরাপত্তা ঝুঁকির প্রতিফলন ঘটেছে।'

গত মঙ্গলবার বিকেলে হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব ক্যারোলিন লেভিট এসব ঘটনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব ক্যারোলিন লেভিট। ছবি: এএফপি
হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব ক্যারোলিন লেভিট। ছবি: এএফপি

তিনি এক পোস্টে বলেন, 'প্রেসিডেন্ট ও ফার্স্ট লেডি যখন এসকেলেটরে পা রাখতে যাচ্ছেন, তখন যদি জাতিসংঘের কোনো কর্মী ইচ্ছা করে তা বন্ধ করে দিয়ে থাকেন, তাহলে তাকে অবিলম্বে বরখাস্ত করে বিষয়টি তদন্ত করে দেখতে হবে।'

তার এই দাবিকে প্রতিষ্ঠা করতে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টাইমসের এক প্রতিবেদনের স্ক্রিনশট শেয়ার করেন লেভিট। সেখানে বলা হয়, 'ট্রাম্পের আগমনকে ঘিরে জাতিসংঘের কর্মীরা ঠাট্টা করে বলছিলেন, তারা এসকেলেটর ও লিফট বন্ধ করে দেবেন আর প্রেসিডেন্টকে বলবেন, আমাদের টাকা ফুরিয়ে গেছে। এখন আপনাকে সিঁড়ি দিয়ে হেঁটে উঠতে হবে।'

Comments

The Daily Star  | English

Dhaka Customs House to remain open 24/7 over the next two days

The step has been taken to keep trade activities running after the Dhaka airport fire

1h ago