মাইক্রোসফটের ‘ইসরায়েল বর্জন’ কতটা গুরুত্বপূর্ণ?

মাইক্রোসফট
ছবি: রয়টার্স ফাইল ফটো

ইসরায়েলি বাহিনীর বিরুদ্ধে গাজা ও পশ্চিমতীরে ফিলিস্তিনিদের ওপর নজরদারিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহারের অভিযোগ ওঠার পর তাদের কিছু ক্লাউড কম্পিউটিং সেবা দেওয়া বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে মাইক্রোসফট।

তদন্তে দেখা গেছে, মাইক্রোসফটের এআই ও ক্লাউড সার্ভিস ব্যবহার করে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী লাখো ফিলিস্তিনির ওপর নজরদারি চালাতে পারে।

গতকাল শুক্রবার আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে প্রশ্ন রাখা হয়, কেন মাইক্রোসফট ইসরায়েলে এসব সার্ভিস বন্ধ করে দিলো? এতে বলা হয়—গত বৃহস্পতিবার মাইক্রোসফট এই সিদ্ধান্ত নেয়। এর আগে তথা গত আগস্টে ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান ও ইসরায়েলি গণমাধ্যম প্লাস নাই হানড্রেড সেভেনটি টু ও লোকাল কল যৌথ অনুসন্ধান চালায়।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী মাইক্রোসফটের অ্যাজিউর ক্লাউড প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার ফিলিস্তিনে গণহারে নজরদারি চালিয়েছে। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে গাজায় নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে গত দুই বছরে ৬৫ হাজারের বেশি মানুষ হত্যা করেছে।

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে নিজেদের সফটওয়্যার ব্যবহার করে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করায় মাইক্রোসফটের অনেক কর্মীকে বরখাস্ত করা হয়েছে। অনেককে তুলে দেওয়া হয়েছে পুলিশের হাতে। ইসরায়েলি বাহিনীর সঙ্গে কোম্পানির ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের প্রতিবাদে পদত্যাগও করেছেন অনেকে।

প্রথমদিকে, অভিযোগ অস্বীকার করলেও পরে ইসরায়েলের সঙ্গে নিজেদের সম্পর্ক পর্যালোচনা করতে আইনি প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেয় মাইক্রোসফট।

মাইক্রোসফটের ভাষ্য

আল জাজিরার সংবাদ প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত বৃহস্পতিবার এক ব্লগ পোস্টে কর্মীদের উদ্দেশে মাইক্রোসফটের ভাইস চেয়ারম্যান ও প্রেসিডেন্ট ব্র্যাড স্মিত বলেন যে প্রতিষ্ঠানটির যোগাযোগ ও আর্থিক লেনদেনের রেকর্ডের ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে। তদন্তে অভিযোগের পক্ষে তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেছে।

তিনি তথ্যপ্রমাণের ব্যাপারে বিশদ বিবরণ না দিলেও তিনি অ্যাজিউর ও মাইক্রোসফটের এআই সেবার কথা বলেন। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী মাইক্রোসফটের এসব সেবা ব্যবহার করে।

মাইক্রোসফট
যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলে ইসরায়েলের সঙ্গে মাইক্রোসফটের অ্যাজিউর ক্লাউড প্ল্যাটফর্মের চুক্তির বিরোধিতা করে বিক্ষোভ। ছবি: রয়টার্স ফাইল ফটো

ব্র্যাড স্মিত বলেন, 'আমরা ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে মাইক্রোসফটের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছি। এর মধ্যে ক্লাউড স্টোরেজ, এআই ও প্রযুক্তিগত সেবা আছে।'

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'আমাদের সার্ভিসের শর্ত-নিয়ম মেনে চলা হচ্ছে কিনা তা নিশ্চিতের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। আমাদের পণ্য ব্যবহার করে কেউ যেন গণ-নজরদারি করতে না পারে তা নিশ্চিতে কাজ করছি।'

এই উদ্যোগের মাধ্যমে মাইক্রোসফট ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা নিলো বলে সংবাদ প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়েছে। গত মে মাসে বার্তা সংস্থা এপি জানিয়েছিল যে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা প্রতিষ্ঠান 'ইউনিট ৮২০০' গাজায় মাইক্রোসফটের নজরদারি প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে।

এর আগে প্রকাশ্যে আসে যে মাইক্রোসফট এসব উন্নতমানের এআই ও ক্লাউড পরিষেবা ইসরায়েলি বাহিনীর কাছে বিক্রি করে। এ ব্যাপারে মাইক্রোসফটের বক্তব্য ছিল, তারা এমন কোনো প্রমাণ পায়নি যাতে বলা যেতে পারে যে তাদের প্রযুক্তি গাজাবাসীর ক্ষতি করতে ব্যবহার করা হয়েছে।

মাইক্রোসফটের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর কাছে বিক্রি করা পরিষেবাগুলো পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানের নিয়মাবলী লঙ্ঘন করায় কিছু পরিষেবা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এ সিদ্ধান্ত কতটা গুরুত্বপূর্ণ?

মাইক্রোসফটের এমন সিদ্ধান্তের ফলে গাজা ও পশ্চিমতীরে ইসরায়েলি নজরদারিতে খুব একটা হেরফের হবে বলে মনে করছেন না প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা। পুরো ইসরায়েলি বাহিনীকে অ্যাজিউর, এআই ও অন্যান্য পরিষেবা থেকে বিচ্ছিন্ন করা হবে কিনা তা এখনো পরিষ্কার করেনি মাইক্রোসফট।

গাজা যুদ্ধে মাইক্রোসফটের ভূমিকার প্রতিবাদ জানানোয় চাকরিচ্যুত হওয়া হোসাম নাসর গত বৃহস্পতিবার এপিকে বলেন, 'এটি অপ্রত্যাশিত বিজয়, তবে যথেষ্ট নয়।' তার মতে, মাইক্রোসফট ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর কাছে ছোট একটি পরিষেবা বন্ধ রাখছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সঙ্গে মাইক্রোসফটের চুক্তি এখনো বলবত আছে।

মাইক্রোসফটের ভাইস চেয়ারম্যান ব্র্যাড স্মিত বলেন, গত আগস্টে যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল তা প্রাইভেসি আইনের কারণে মাইক্রোসফট নিজেও দেখভাল করতে পারেনি।

এক ইসরায়েলি নিরাপত্তা কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এপিকে বলেছেন, 'মাইক্রোসফটের এমন সিদ্ধান্তের কারণে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর অভিযানের সক্ষমতা এতটুকুও কমবে না।'

তবে এই পদক্ষেপের ফলে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর চালানো গণহত্যার বিরুদ্ধে আওয়াজ কিছুটা হলেও শক্তিশালী হলো।

Comments

The Daily Star  | English
Yunus, Charter, and Our Future

Yunus, Charter, and Our Future

Can the vision for 'New Bangladesh' ignore the poor, farmers, workers, youth, women, or employment and climate crises?

5h ago