গাজার অন্তর্বর্তী শাসক হচ্ছেন প্রাক্তন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার?

যুক্তরাজ্যের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার। ফাইল ছবি: রয়টার্স
যুক্তরাজ্যের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার। ফাইল ছবি: রয়টার্স

মনে পড়ে টনি ব্লেয়ারের কথা? তিনি যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী। ইরাক যুদ্ধের অন্যতম খলনায়ক। এখন তাকেই ভাবা হচ্ছে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপত্যকার অন্তর্বর্তী শাসক হিসেবে।

গত শুক্রবার বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, যুদ্ধ-পরবর্তী গাজায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে ব্রিটিশ লেবার পার্টির সাবেক নেতা ও দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের কথা আলোচনায় আছে।

এতে আরও বলা হয়, হোয়াইট হাউস সমর্থিত এক প্রস্তাবে বলা হয়েছে যে গাজার দায়িত্ব ফিলিস্তিনিদের হাতে তুলে দেওয়ার আগে জাতিসংঘ ও উপসাগরীয় দেশগুলোর সমর্থন নিয়ে আন্তর্জাতিক অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের কথা ভাবা হচ্ছে। সেই সরকারের প্রধান হিসেবে ভাবা হচ্ছে টনি ব্লেয়ারের কথাও।

ব্রিটিশ সেনাদের সঙ্গে ব্লেয়ার। ফাইল ছবি: সংগৃহীত
ব্রিটিশ সেনাদের সঙ্গে ব্লেয়ার। ফাইল ছবি: সংগৃহীত

টনি ব্লেয়ারের কার্যালয় থেকে বলা হয়েছে যে তিনি গাজার জনগণকে বাস্তুচ্যুত করার ভাবনাকে সমর্থন করেন না।

২০০৩ সালে গণবিধ্বংসী অস্ত্র রাখার অভিযোগে ইরাকের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের বিরুদ্ধে মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটের সঙ্গে যুক্তরাজ্য যুক্ত করে নিয়ে যুদ্ধে নামেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার। সেই যুদ্ধে ব্রিটিশ-মার্কিন সেনারা সাদ্দামকে পরাজিত ও ইরাককে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেন। এখন সেই ব্লেয়ারকে ডেকে আনা হচ্ছে গণহত্যায় বিপর্যস্ত ও যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজাকে আবার গড়ে তোলার কাজে।

ইরাকের বিরুদ্ধে অভিযানের দুই সূতিকাগার--জর্জ ডব্লিউ বুশ ও টনি ব্লেয়ার। ফাইল ছবি: এএফপি
ইরাকের বিরুদ্ধে অভিযানের দুই সূতিকাগার--জর্জ বুশ সিনিয়র ও টনি ব্লেয়ার। ফাইল ছবি: এএফপি

সংবাদ প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত আগস্টে টনি ব্লেয়ার গাজা নিয়ে তার পরিকল্পনা তুলে ধরতে হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করেন। যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফ সেই আলোচনাকে 'খুবই বিস্তৃত' হিসেবে আখ্যা দেন। তবে সেই বৈঠকের খুব কম অংশই প্রকাশ্যে এসেছে।

দ্য ইকোনমিস্টের বরাত দিয়ে বিবিসি জানায়, প্রস্তাবে টনি ব্লেয়ারকে গাজা ইন্টারন্যাশনাল ট্রানজিশনাল অথরিটির (গিটা) প্রধান হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। জাতিসংঘের অনুমোদন নিয়ে গাজায় পাঁচ বছরের জন্য 'সর্বোচ্চ রাজনৈতিক ও আইনগত কর্তৃপক্ষ' প্রতিষ্ঠার কথাও ভাবা হচ্ছে।

এর আগে আন্তর্জাতিক প্রশাসকের মাধ্যমে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় পূর্ব তিমুর ও পূর্ব ইউরোপে কসোভো স্বাধীনতা পেয়েছিল।

প্রস্তাবে আরও বলা হয়, গাজার অন্তর্বর্তী সরকার প্রাথমিকভাবে মিশর থেকে কাজ করবে। গাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তখন তারা সেখানে যাবে। তাদের সঙ্গে থাকবে বহুজাতিক বাহিনী।

বিবিসির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০০৩ সালে টনি ব্লেয়ার যখন যুক্তরাজ্যকে ইরাক-যুদ্ধে টেনে আনেন তখন বিশ্বব্যাপী তার ব্যাপক বদনাম হয়। তদন্তে দেখা যায় যে তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ভুল গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সেই যুদ্ধে জড়িয়েছিলেন। কেননা, যে গণবিধ্বংসী অস্ত্রের অভিযোগে পশ্চিমের দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ইরাকে আগ্রাসন চালিয়েছিল, পরবর্তীতে সেই অস্ত্রের প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

ইরাকে আগ্রাসন চালানোর ২ মাস পর ব্রিটিশ সেনাদের সঙ্গে টনি ব্লেয়ার। ফাইল ছবি: সংগৃহীত
ইরাকে আগ্রাসন চালানোর ২ মাস পর ব্রিটিশ সেনাদের সঙ্গে টনি ব্লেয়ার। ফাইল ছবি: সংগৃহীত

২০০৭ সালে প্রধানমন্ত্রীত্ব ছাড়ার পর টনি ব্লেয়ারকে যুক্তরাষ্ট্র, ইইউ, রাশিয়া ও জাতিসংঘের পক্ষ থেকে মধ্যপ্রাচ্য দূত হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি ফিলিস্তিনের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি দুই-রাষ্ট্র সমাধানের ওপর জোর দিয়েছিলেন।

গত বৃহস্পতিবার ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস দুটি পৃথক রাষ্ট্রের মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও অন্যান্য বিশ্বনেতার সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত থাকার ঘোষণা দেন। এরপর গাজায় আন্তর্জাতিক অন্তর্বর্তী সরকারের বিষয়টি আলোচনায় আসে। পাশাপাশি আলোচনায় আসে এর প্রধান হিসেবে টনি ব্লেয়ারের নাম।

গত সপ্তাহে যুক্তরাজ্য আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিনকে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। সেসময় ফ্রান্স, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ আরও বেশ কয়েকটি দেশ ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দেয়।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের রক্তক্ষয়ী হামলার প্রেক্ষাপটে শুরু হওয়া যুদ্ধে গাজায় এখন পর্যন্ত ৬৫ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। তাদের অধিকাংশ শিশু ও নারী।

Comments

The Daily Star  | English

Khaleda Zia’s janaza held

The namaz-e-janaza of BNP Chairperson Khaleda Zia was held at the South Plaza of the Jatiya Sangsad Bhaban today

6h ago