স্বাভাবিক হচ্ছে ইন্টারনেট সেবা, পথে নেমে আফগানদের উচ্ছ্বাস

আফগানিস্তানে মোবাইল ও ইন্টারনেট সংযোগ ফেরার পর মোবাইলে কথা বলছেন এক ব্যক্তি। ছবি: রয়টার্স
আফগানিস্তানে মোবাইল ও ইন্টারনেট সংযোগ ফেরার পর মোবাইলে কথা বলছেন এক ব্যক্তি। ছবি: রয়টার্স

হঠাৎ করেই আফগানিস্তানের তালেবান সরকার গত সোমবার থেকে দেশটির ইন্টারনেট ও টেলিযোগাযোগ সেবা বন্ধ করতে শুরু করে। একদিনের মধ্যেই পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় এই গুরুত্বপূর্ণ সেবাগুলো। এতে দেশজুড়ে ক্ষোভ ও নিন্দার ঝড় বয়ে যায়।

তালেবানের ওই উদ্যোগের প্রায় ৪৮ ঘণ্টা পর ইন্টারনেট সেবা আবারও চালু করা হচ্ছে। এতে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছেন আফগান নাগরিকরা।

স্থানীয় সাংবাদিকেরা জানান, যোগাযোগ ব্যবস্থা ধীরে ধীরে আবারও স্বাভাবিক হচ্ছে। ইন্টারনেট পর্যবেক্ষণ সংস্থা নেটব্লকস জানিয়েছে, নেটওয়ার্ক ডেটা অনুযায়ী 'সংযোগ আংশিকভাবে চালু' হয়েছে।

সরকারঘনিষ্ঠ এক সূত্র বিবিসি আফগানকে নিশ্চিত করেছে যে, তালেবান প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ইন্টারনেট আবারও চালু করা হয়েছে।

৪৮ ঘণ্টার এই ব্ল্যাকআউট আফগানিস্তানে ব্যবসা-বাণিজ্য ও ফ্লাইটে ব্যাঘাত সৃষ্টি করেছিল। পাশাপাশি জরুরি সেবায় প্রবেশ সীমিত করেছিল। এতে নারীদের আরও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়।

বিশ্লেষকদের মতে, ২০২১ সালে তালেবান গোষ্ঠী আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলের পর দেশটিতে নারীদের অধিকার ব্যাপকভাবে খর্ব হয়েছে।

বুধবার সন্ধ্যায় রাজধানী কাবুলে হাজারো আফগান নাগরিক পথে নেমে ইন্টারনেট ফিরে আসার খবরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আফগান বিবিসিকে বলেন, 'সবার মুখে হাসি, সবাই ফোনে আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে কথা বলছেন।'

'ইন্টারনেট সেবা চালু হওয়ায় নারী থেকে শুরু করে পুরুষ ও তালেবান সদস্য—সবাই ফোনে কথা বলছিলেন। এখন শহরে আরও ভিড় দেখা যাচ্ছে', যোগ করেন তিনি।

কাতারে জ্যেষ্ঠ তালেবান মুখপাত্র সুহাইল শাহীনের বক্তব্য, বুধবার দুপুরের মধ্যে 'সব ধরনের যোগাযোগব্যবস্থা' চালু করা হয়েছে।

তবে তালেবান সরকার ইন্টারনেট ও টেলিযোগাযোগ সেবা বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা দেয়নি।

গত মাসে উত্তরাঞ্চলের প্রদেশ বালখের তালেবান গভর্নরের মুখপাত্র জানিয়েছিলেন, 'অনৈতিক কাজকর্ম ঠেকাতে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করা হচ্ছে।'

ক্ষমতায় ফেরার পর থেকে তালেবানরা ইসলামি শরিয়া আইন অনুযায়ী কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করছে। ১২ বছরের বেশি বয়সী মেয়েদের শিক্ষার সুযোগ তালেবান বন্ধ করে দিয়েছে।

আফগান নারীরা বিবিসিকে জানান, এমন পরিস্থিতিতে বহির্বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষায় একমাত্র উপায় ছিল ইন্টারনেট। 

দেশটিতে নারীদের চাকরির সুযোগও ব্যাপকভাবে সীমিত হয়েছে। সর্বশেষ গত সেপ্টেম্বরে সেখানকার বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচি থেকে নারীদের লেখা বই সরিয়ে দেয় তালেবান সরকার।

গত সোমবার ইন্টারনেট বন্ধ হওয়ার পর জাতিসংঘ জানায়, বহির্বিশ্বের সঙ্গে আফগানিস্তানের যোগাযোগ প্রায় পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল।

জাতিসংঘ আরও সতর্ক করে বলেছিল, এই ব্ল্যাকআউট আফগান জনগণের জন্য বড় ক্ষতির কারণ হতে পারে এবং অর্থনীতিকে দুর্বল করতে পারে। পাশাপাশি সেখানকার মানবিক সংকট আরও বাড়াতে পারে।

Comments