চলে গেলেন প্রথম এভারেস্ট অভিযানের শেষ জীবিত সদস্য কাঞ্ছা শেরপা

মাউন্ট এভারেস্টের চূড়ায় প্রথমবার পৌঁছানো পর্বতারোহী দলের সদস্য কাঞ্ছা শেরপা। ফাইল ছবি: এএফপি
মাউন্ট এভারেস্টের চূড়ায় প্রথমবার পৌঁছানো পর্বতারোহী দলের সদস্য কাঞ্ছা শেরপা। ফাইল ছবি: এএফপি

বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু পর্বত মাউন্ট এভারেস্টের চূড়ায় প্রথমবার পৌঁছানো পর্বতারোহী দলের শেষ জীবিত সদস্য কাঞ্ছা শেরপা মারা গেছেন।

৯২ বছর বয়সে গতকাল বৃহস্পতিবার নেপালের কাঠমান্ডু জেলার কাপানে নিজ বাড়িতে মারা যান তিনি।

আজ শুক্রবার এই তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরা।

কাঞ্ছা শেরপা ১৯৫৩ সালে তেনজিং নোরগে ও স্যার এডমন্ড হিলারিকে এভারেস্টের চূড়ায় পৌঁছাতে সাহায্য করেছিলেন। নেপাল মাউন্টেনিয়ারিং অ্যাসোসিয়েশন কাঞ্ছা শেরপাকে একজন "ঐতিহাসিক ও কিংবদন্তি ব্যক্তিত্ব" হিসেবে অভিহিত করেছে।

অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ফুর গেলজে বলেন, 'কাঞ্ছা শেরপার মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। তার অনুপস্থিতি এক অপূরণীয় ক্ষতি।'

তেনজিং চোগ্যাল শেরপা জানান, সম্প্রতি তার দাদা কাঞ্ছা শেরপার গলায় কিছু সমস্যা হয়েছিল। তবে ৯২ বছর বয়সী পর্বতারোহীর তেমন কোনো গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা ছিল না বলেই তিনি জানান।

কাঞ্ছা শেরপা ৩৫ জনের একটি দলের সদস্য ছিলেন। ওই দলটি শেরপা গাইড তেনজিং নোরগে ও নিউজিল্যান্ডের এডমন্ড হিলারিকে ১৯৫৩ সালের ২৯ মে এভারেস্টের ৮,৮৪৯ মিটার (২৯,০৩২ ফুট) উঁচু চূড়ায় পৌঁছাতে সাহায্য করেছিল।

হিলারি ও তেনজিংয়ের সঙ্গে চূড়ার আগের শেষ ক্যাম্পে পৌঁছানো তিন শেরপার একজন ছিলেন কাঞ্ছা।

কাঞ্ছা ১৯৩৩ সালে এভারেস্টের পাদদেশে নামচে গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তখন শেরপা সম্প্রদায়ের বেশিরভাগ মানুষ কৃষিকাজ করতেন, যদিও তারা পর্বতারোহণের গাইড হিসেবে বিখ্যাত।

তিনি শৈশব ও যৌবনে তিব্বতে আলু ব্যবসা করে সামান্য আয় করতেন। পরে তিনি ও তার কয়েকজন বন্ধু ভারতের দার্জিলিংয়ে গিয়ে পর্বতারোহণের প্রশিক্ষণ নেন। এরপর তিনি বিদেশি পর্বতারোহীদের সঙ্গে কাজ শুরু করেন।

বাবার সঙ্গে তেনজিং নোরগের বন্ধুত্বের কারণে কাঞ্ছা শেরপা তেনজিং এবং হিলারির পোর্টার হিসেবে কাজ পান। ১৯৫৩ সালের অভিযানের পর তিনি আরও দুই দশক হিমালয় পর্বতে কাজ করেন। তবে তার অনেক বন্ধু পর্বতারোহণে মারা গেলে তার স্ত্রী তাকে এই বিপজ্জনক কাজ বন্ধ করতে বলেন। কাঞ্ছা নিজে কখনো এভারেস্টের চূড়ায় ওঠেননি।

ট্রেকাররা মাউন্ট এভারেস্টের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করছেন। ছবি: নেপাল
ট্রেকাররা মাউন্ট এভারেস্টের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করছেন। ছবি: নেপাল

২০২৪ সালের মার্চে অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কাঞ্ছা শেরপা বলেন, তিনি তার সন্তানদেরও পর্বতারোহী হতে নিষেধ করেছিলেন।

জীবনের শেষ দিকে কাঞ্ছা এভারেস্টের অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজম গন্তব্য হয়ে ওঠা নিয়ে মিশ্র অনুভূতি পোষণ করতেন। হাজার হাজার মানুষ চূড়ায় উঠেছে, আর পর্বতটি ভিড় ও আবর্জনার জন্য দুর্নাম কুড়িয়েছে।

ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটিতে এপ্রিলে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে বলা হয়, প্রতি পর্বতারোহণ মৌসুমে ৬০০ জনেরও বেশি মানুষ এভারেস্টের চূড়ায় ওঠার চেষ্টা করেন। এর ফলে পর্বতটি দূষিত হচ্ছে, স্থানীয় জলাশয় নষ্ট হচ্ছে এবং স্থানীয় মানুষ স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছে।

ম্যাগাজিনটি আরও জানায়, ভিড়ের কারণে পর্বতারোহীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা হিমশীতল আবহাওয়ায় লাইনে দাঁড়াতে হয়। চূড়ায় পৌঁছালেও ভিড়ের কারণে দাঁড়ানোর জায়গা থাকে না।

২০২৪ সালে কাঞ্ছা শেরপা মানুষকে পর্বতের প্রতি শ্রদ্ধা রাখার আহ্বান জানান। শেরপারা এভারেস্টকে মা দেবী কোমোলাংমা হিসেবে পূজা করে। তিনি বলেন, 'পর্বতারোহীর সংখ্যা কমালে পর্বতের জন্য ভালো হতো। শেরপাদের কাছে কোমোলাংমা সবচেয়ে বড় দেবতা। কিন্তু মানুষ পর্বতে ধূমপান করে, মাংস খায় আর সেগুলো ফেলে দেয়।'

Comments

The Daily Star  | English

Tribunal sends 15 army officers to jail

Chief prosecutor says chief prosecutor says government and jail authorities will decide where to house the accused

2h ago