জোহরান মামদানিকে হারাতে মরিয়া কারা?

নিউইয়র্কে এক ফুটবল টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন জোহরান মামদানি। ছবি: এএফপি

সপ্তাহ না ঘুরতেই দ্বিতীয়বার দেখা হলো তাদের—জোহরান মামদানি, অ্যান্ড্রু কুয়োমো ও কার্টিজ স্লিওয়ার। এক মঞ্চে দাঁড়িয়ে আবারও তারা চেষ্টা করলেন জনগণের মন জয় করার। আগামী ৪ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া নিউইয়র্ক নগরীর মেয়র নির্বাচনের আগে এটিই তাদের আনুষ্ঠানিক শেষ বিতর্ক। তাই অন্যের ওপর নিজের শ্রেষ্ঠত্ব তুলে ধরতে সবাই সচেষ্ট ছিলেন।

এই তিন প্রার্থীর মধ্যে জনজরিপে এগিয়ে আছেন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির মনোনয়ন পাওয়া জোহরান মামদানি। তার পরের অবস্থানে আছেন নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের সাবেক গভর্নর, বর্ষীয়ান ডেমোক্র্যাট নেতা ও মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যান্ড্রু কুয়োমো।

নির্বাচনে জোহরান মামদানির জয়কে ঠেকাতে মরিয়া অনেকে। শুধু প্রার্থীরাই নন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও চান জোহরান মামদানির পরাজয়। তিনি চান তার রিপাবলিকান পার্টির মনোনীত প্রার্থী স্লিওয়া নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াক। ট্রাম্পের পছন্দ কুয়োমো। তার বিশ্বাস, জোহরান মামদানিকে হারাতে কুয়োমোর বিকল্প নেই। আর স্লিওয়ার ভাষ্য, তিনি সরবেন না।

গতকাল বুধবার এই তিন প্রার্থীই বিতর্কের মঞ্চে দাঁড়িয়েছিলেন তাদের নিজ নিজ 'আমলনামা' নিয়ে। সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, জোহরান মামদানি তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি—বিনা ভাড়ায় বাস, বাড়ি ভাড়া না বাড়ানো, সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা ও ধনীদের ওপর কর বাড়ানোর কথা আবারও বললে অ্যান্ড্রু কুয়োমো এগুলোকে 'অবাস্তব' বলে মন্তব্য করেন। তিনি সরকারি কাজ পরিচালনায় নিজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে জোহরান মামদানিকে 'অনভিজ্ঞ' তকমা দেন।

অ্যান্ড্রু কুয়োমো জানান, জোহরান মামদানি নির্বাচিত হলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিউইয়র্কের সরকারি তহবিল কমিয়ে দেবেন। আরও জানান, ট্রাম্প বলেছেন মামদানি বিজয়ী হলে তিনি নিউইয়র্ক দখল করে নেবেন। তাই ভোটারদের সতর্ক করে দিয়েছেন যাতে তারা ভুল না করে। তার ভাষ্য, 'ট্রাম্প বলেছেন, তার পছন্দ অ্যান্ড্রু কুয়োমো। তিনি চান কুয়োমো মেয়র হোক। এটা শুধু নিউইয়র্কবাসীর জন্য মঙ্গলময় হবে না, এটি ট্রাম্পের জন্যও মঙ্গলময় হবে।'

আরও এক ধাপ এগিয়ে কুয়োমো বলেন, 'জোহরান মামদানিকে ট্রাম্প শিশু মনে করেন। ট্রাম্প তার পশ্চাৎদেশ বরাবর লাথি মারবেন।'

এসব কথার পরিপ্রেক্ষিতে জোহরান মামদানি তার প্রতিপক্ষ কুয়োমোকে 'ট্রাম্পের পুতুল' বলে আখ্যা দেন।

তবে দেড় ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলা এই বিতর্কের একটি অংশে ছিল ফিলিস্তিন ইস্যু।

এক মঞ্চে তিন প্রতিদ্বন্দ্বী জোহরান মামদানি, অ্যান্ড্রু কুয়োমো ও কার্টিজ স্লিওয়ার। ছবি: এএফপি

কেন মরিয়া?

পটভূমির পর এবার আসা যাক মূল আলোচনায়। ফিলিস্তিনের প্রতি জোহরান মামদানির জোরালো সমর্থন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পসহ অনেককেই ভীষণ উদ্বিগ্ন করেছে। ইসরায়েলের বাইরে সবচেয়ে বেশি ইহুদি থাকেন যুক্তরাষ্ট্রে। আবার তাদের বড় অংশের বসবাস নিউইয়র্কে। মেয়র প্রার্থীদের পাশাপাশি ইহুদি সম্প্রদায়ের অনেকে জোহরান মামদানির বিরুদ্ধে 'ইহুদিবিদ্বেষ'-এর অভিযোগ আনছেন।

বিরোধীদের অনেকে চাচ্ছেন জোহরান মামদানিকে 'বিতর্কিত' প্রার্থী হিসেবে প্রচার করতে।

গত ২০ অক্টোবর ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম দ্য জেরুসালেম পোস্ট জানায়, জোহরান মামদানির বিজয় থামাতে দুই দিনে তিন মিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ অনুদান হিসেবে দিয়েছেন নিউইয়র্ক নগরীর ব্যবসায়ীরা।

ধনী ব্যবসায়ীদের অনেকে 'ফর আওয়ার সিটি', 'বেটার ফিউচার মেয়র', 'ডিফেন্ড এনওয়াইসি' ও 'ফিক্স দ্য সিটি'সহ নানা নামে সংগঠন তৈরি করে জোহরান মামদানিকে নির্বাচনে পরাজিত করার চেষ্টা করছেন।

এর কয়েকদিন আগে, পলিটিকো সাময়িকীতে বলা হয়—ট্রাম্পপন্থি ব্যবসায়ীরা জোহরান মামদানিবিরোধী জনমত গড়ে তুলতে দুই হাতে অর্থ ঢালছেন। তাদের অনেকে নাম প্রকাশে আগ্রহী নন।

ট্রাম্প ও ট্রাম্পপন্থিরা কেন জোহরান মামদানির বিরুদ্ধে এত মরিয়া তা যেন বোঝা গেল আজ বৃহস্পতিবার ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েলের এক প্রতিবেদনের শিরোনাম দেখে। এতে বলা হয়, ৬৫০-র বেশি মার্কিন ইহুদি ধর্মগুরু বা র‌্যাবাই জোহরান মামদানির বিরুদ্ধে চিঠি লিখেছেন। তাদের মধ্যে নিউইয়র্ক নগরীর র‌্যাবাই ছিলেন ৬০ জন। তাদের আশঙ্কা, জোহরান মামদানি নির্বাচিত হলে 'যায়নবাদ-বিরোধিতা' রাজনৈতিক ভিত্তি পাবে।

যায়নবাদী ইহুদি ধর্মগুরুদের এমন বক্তব্যে যেন 'থলের বেড়াল' বেরিয়ে এলো। তাদের কথায় আরও পরিষ্কার হয়ে গেল যে, নিউইয়র্কের ভালো-মন্দ তাদের বিবেচ্য নয়। তাদের মাথাব্যথা 'যায়নবাদ' নিয়ে। অর্থাৎ, যায়নবাদীরা বিশ্বের যেখানেই বসবাস করুক না কেন ইসরায়েলই তাদের 'মাতৃভূমি'। এমন বোধ-ভাবনা নিয়েই কি তাহলে যায়নবাদীরা জোহরান মামদানিকে মেয়র নির্বাচনে পরাজিত করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন?

ইহুদি অধ্যুষিত নিউইয়র্ক নগরীতে দাঁড়িয়ে জোহরান মামদানি বারবার বলছেন, তিনি ইসরায়েলকে ইহুদি রাষ্ট্র হিসেবে মানেন না। তিনি চান সেই দেশে বসবাসকারী সব ধর্মাবলম্বী মানুষ সমান অধিকার নিয়ে থাকবেন। তার মতে, নিউইয়র্কে আসলে যুদ্ধাপরাধী নেতানিয়াহুকে গ্রেপ্তার করা উচিত। 

আর এতেই যেন গা জ্বলছে যায়নবাদীদের। এ কারণেই জোহরান মামদানির জনস্বার্থমূলক নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও তারা তার জনপ্রিয়তা নিয়ে এত উদ্বিগ্ন।

Comments

The Daily Star  | English
Yunus, Charter, and Our Future

Yunus, Charter, and Our Future

Can the vision for 'New Bangladesh' ignore the poor, farmers, workers, youth, women, or employment and climate crises?

4h ago