ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধ কানাডাকে ঠেলে দিচ্ছে চীনে

বাণিজ্যযুদ্ধ
সিউলে দক্ষিণ কোরিয়ায় এশিয়া-প্রশান্ত অর্থনৈতিক সহযোগিতা সম্মেলনে কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি ও চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং। ছবি: রয়টার্স

উত্তর আমেরিকার দুই প্রতিবেশী দেশ যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা। এই দুই দেশের সুসম্পর্ক বিশ্ব-রাজনীতির ইতিহাসে বেশ আলোচিত। এই দুই দেশের সীমানাকে আদর্শ সীমানা হিসেবে গণ্য করা হয়।

কিন্তু, চলতি বছরের শুরুতে মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প এই সুপ্রতিবেশীর সঙ্গে শুল্কযুদ্ধ শুরু করায় ওয়াশিংটন ডিসির সঙ্গে অটোয়ার সম্পর্ক নাজুক হয়ে পড়ে।

ঘনিষ্ঠ মিত্র কানাডার সব পণ্যের ওপর ট্রাম্প ৩৫ শতাংশ শুল্ক ধার্য করায় দুই দেশের সম্পর্ক ক্রমশ তিক্ত হয়ে পড়ছে।

আজ বৃহস্পতিবার সিএনএন-এর এক প্রতিবেদনের শিরোনাম করা হয়, ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধ কানাডাকে চীনের ঘনিষ্ঠ করে তুলছে। এতে বলা হয়, মাত্র এই বছর আগে যা ভাবাই যেত না তাই এখন ঘটছে। কানাডা ও চীনের শীর্ষ নেতারা পাশাপাশি দাঁড়িয়ে হাসিমুখে করমর্দন করছেন।

২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রে জালিয়াতির অভিযোগ কানাডার পুলিশ চীনা প্রযুক্তিবিদ মেং ওয়ানঝুকে ভ্যানকুভার থেকে গ্রেপ্তার করে। কয়েকদিন পর বেইজিং কানাডার দুই নাগরিককে গোয়েন্দাগিরির অভিযোগে জেলে পাঠায়। কানাডা এই অভিযোগ উড়িয়ে দেয়। যুক্তরাষ্ট্র মেং ওয়ানঝুর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে নিলে চীনও কানাডার দুই নাগরিককে ছেড়ে দেয়।

এ ঘটনায় কানাডা ও চীনের কূটনৈতিক সম্পর্ক চরম তিক্ত হয়ে পড়ে। অটোয়া ও বেইজিংয়ের মধ্যে অবিশ্বাস গভীর হয়। কিন্তু, ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র কানাডাকে দীর্ঘদিনের 'শত্রু' চীনের কাছে ঠেলে দিয়েছে বলে সংবাদ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

এতে আরও বলা হয়, গত মাসে কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনিতা আনন্দ বেইজিংয়ে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইর সঙ্গে দেখা করেন। চলতি মাসে কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি দক্ষিণ কোরিয়ায় এশিয়া-প্রশান্ত অর্থনৈতিক সহযোগিতা সম্মেলনে যোগ দিয়ে পরে চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিংয়ের সঙ্গে দেখা করেন। গত আট বছরের মধ্যে এটি ছিল দুই দেশের শীর্ষ নেতার প্রথম বৈঠক।

সংবাদ প্রতিবেদনে কানাডা ও চীনের শীর্ষ নেতাদের প্রায় ৪০ মিনিটের বৈঠককে 'টার্নিং পয়েন্ট' হিসেবে অভিহিত করা হয়। তখন তারা দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়ন ও বাণিজ্য বাড়ানোর বিষয়ে গুরুত্ব দেন। বৈঠকের পর কানাডা এক বার্তায় জানায় যে প্রধানমন্ত্রী কার্নি চীনে গিয়ে শির সঙ্গে বৈঠকের পরিকল্পনা করছেন।

এরপর কানাডা থেকে চীন মন্ত্রী পর্যায়ে সফর হয় ও দুই দেশের শীর্ষ কর্মকর্তারা ফোনে কথা বলেন। চীন থেকে পর্যটকরা যেন কানাডায় যেতে পারেন সে বিষয়েও আলোচনা চলছে। এর ফলে কানাডার পর্যটন আরও উজ্জীবিত হবে।

কানাডার কর্মকর্তারা বলছেন, চীনের সঙ্গে ব্যবসা চাঙা করতে আরও সময় লাগতে পারে। কোনো কোনো বিশ্লেষক মনে করছেন যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কানাডার সম্পর্ক ভালো না থাকায় চীন এই সুযোগ কাজে লাগাতে চাচ্ছে।

চীনের বন্দিদশা থেকে মুক্তি পাওয়া কানাডার সেই দুই নাগরিকের একজন সিএনএন-কে বলেন, 'বেইজিং চাচ্ছে ওয়াশিংটন ও অটোয়ার মধ্যে দূরত্ব বেড়ে যাক। বেইজিং মনে করে পশ্চিমের দেশগুলো ঐক্যবদ্ধ হয়ে চীনের বৈশ্বিক উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে।'

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের মতো কানাডাও চীনা পণ্যের ওপর উচ্চহারে শুল্ক চাপালেও কানাডা বুঝতে পারছে যে এক সঙ্গে দুই শীর্ষ অর্থনীতির দেশের সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যাওয়া সম্ভব না। আর এমন বাস্তবতায় কানাডা ও চীনের শীর্ষদের করমর্দন দেখা যাচ্ছে। অর্থাৎ, দূরত্ব কমছে অটোয়া ও বেইজিংয়ের মধ্যে।

Comments

The Daily Star  | English

Khaleda Zia’s body being taken to Manik Mia Avenue for janaza

Janaza will be held at Manik Mia Avenue at 2pm

2h ago

Farewell

10h ago