শুল্কমুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করল নিউজিল্যান্ড-ভারত
ভারতের সঙ্গে একটি বড় আকারের শুল্কমুক্ত বাণিজ্য চুক্তিতে সম্মতি দিয়েছে নিউজিল্যান্ড। এই চুক্তির আওতায় প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ রাষ্ট্রটির ৯৫ শতাংশ রপ্তানি পণ্য বিনা শুল্কে ভারতে প্রবেশ করতে পারবে বলে জানিয়েছে দেশটির সরকার।
আজ সোমবার এই তথ্য জানিয়েছে এএফপি।
বাণিজ্য ও বিনিয়োগ মন্ত্রী টড ম্যাকক্লে জানান, এই চুক্তি আগামী বছরের প্রথমার্ধে কার্যকর হবে। এতে ভারতের প্রায় ১৪০ কোটি ভোক্তার কাছে নজিরবিহীন প্রবেশাধিকার পাবে নিউজিল্যান্ড।
ম্যাকক্লে বলেন, 'এই অসামান্য চুক্তি নিউজিল্যান্ডের রপ্তানিকারকদের সামনে ভারতের বাজারকে এমন ভাবে উন্মুক্ত করে দেবে, যা এর আগে কখনো হয়নি।'
'এতে হাজারো মানুষের কর্মসংস্থান হবে এবং হাজারো কোটি ডলারের বাড়তি ব্যবসা হবে', যোগ করেন তিনি।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, তিনি আজ সোমবার নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ক্রিস্টোফার লুক্সনের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং দুই নেতা এই চুক্তিতে সম্মতি দিয়েছেন।
কার্যালয় থেকে বলা হয়েছে, 'মাত্র নয় মাসে, নতুন রেকর্ড গড়ে এই চুক্তি চূড়ান্ত হয়েছে', যা দুই দেশের সম্পর্ককে আরও গভীরে নিয়ে যাবে।
মোদির কার্যালয়ের বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, 'উভয় নেতা একমত যে এই মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি আরও বড় পরিসরে বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও উদ্ভাবন বৃদ্ধি এবং দুই দেশের জন্য আরও অনেক সুযোগ নিয়ে আসার ক্ষেত্রে নিয়ামক হিসেবে কাজ করবে।'
An important moment for India-New Zealand relations, with a strong push to bilateral trade and investment!
My friend PM Christopher Luxon and I had a very good conversation a short while ago following the conclusion of the landmark India-New Zealand Free Trade Agreement.…
— Narendra Modi (@narendramodi) December 22, 2025
এই চুক্তি উদ্ভাবক, উদ্যোক্তা ও খামারিদের জন্য নতুন নতুন সুযোগ তৈরি করবে বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।
২০২৪ সালে নিউজিল্যান্ডের রক্ষণশীল ন্যাশনাল পার্টির নেতৃত্বাধীন জোট সরকার ভারতের সঙ্গে চুক্তি বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করেছিল। আগের বামপন্থি লেবার প্রশাসন এমন প্রতিশ্রুতি দিয়েও তা বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়েছিল।
অবশেষে আলোর মুখ দেখতে চলেছে ওই প্রতিশ্রুতি।
তবে জোটের অন্যতম অংশীদার নিউজিল্যান্ড ফার্স্ট পার্টির নেতা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইনস্টন পিটার্স এই চুক্তির সমালোচনা করেন। তিনি হুশিয়ারি দিয়ে বলেন, 'এই চুক্তি শুল্কমুক্তও নয়, ন্যায্যও নয়'।
তিনি বলেন, 'দুর্ভাগ্যজনকভাবে, এটা নিউজিল্যান্ডের স্বার্থ পরিপন্থী একটি চুক্তি। এতে ভারতকে অনেক বেশি সুবিধা দেওয়া হয়েছে, বিশেষত অভিবাসনের ক্ষেত্রে। অপরদিকে, দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য খাতসহ নিউজিল্যান্ডবাসীর জন্য এতে সার্বিকভাবে তেমন কোনো সুখবর নেই।'
চুক্তির আওতায় ভারতীয় কর্মীদের নিউজিল্যান্ড প্রবেশের পথ সুগম হয়েছে।
চুক্তি কার্যকরের পর প্রতি বছর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও কয়েকটি স্বাস্থ্যসেবা খাতে এক হাজার ৬৬৭ জন ভারতীয় সাময়িক অবস্থানের ভিসা পাবেন।
পাশাপাশি, ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সী এক হাজার মানুষ ছুটি কাটাতে নিউজিল্যান্ডে যাওয়ার ভিসা পাবেন, এবং এ সময় তারা কাজও করতে পারবেন।
অপরদিকে, নিউজিল্যান্ডের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভারতীয় শিক্ষার্থীরা সপ্তাহে ঊর্ধ্বে ২০ ঘণ্টা করে কাজ করার সুযোগও পাবেন।
পিটার্স বলেন, 'আমরা আমাদের অংশীদারকে বলেছিলাম তাড়াহুড়া করে ভারতের সঙ্গে নিম্নমানের চুক্তিতে যেও না। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে তারা আমাদের কথা না শুনেই নিজ পরিকল্পনা অনুযায়ী এগিয়ে গেছে।'
তবে ম্যাকক্লে বলেন, চুক্তিতে নিউজিল্যান্ডের পর্যটন ও পল্লী খাতের কর্মীদের স্বার্থ সুরক্ষা পেয়েছে।
তিনি বলেন, 'বাণিজ্য বাড়লে অর্থনীতিও সম্প্রসারিত হয় এবং নতুন নতুন চাকরি তৈরি হয়। নিউজিল্যান্ড-ভারত শুল্কমুক্ত বাণিজ্য চুক্তির উদ্দেশ্যে আমাদের রপ্তানিকারকদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা এবং কিউই প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিশ্বমঞ্চে অন্যদের থেকে এগিয়ে থাকতে সহায়তা করা।'


Comments