মগবাজারে দেশি-বিদেশি সব খাবার এক টেবিলে পেতে

মগবাজার

মগবাজার মোড় আর ইস্কাটনের মাঝপথে থাকা 'অ্যাট দ্য টেবিল' এখন ঢাকাবাসী অনেকের জন্যই নিয়মিত আড্ডার জায়গা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই ফুড কোর্টটি যে জায়গায় অবস্থিত, তা বোধহয় এ শহরের সবচেয়ে ব্যস্ত রাস্তাগুলোর একটি। আর তাই তো এ জায়গায় এমন উঁচু দরের ফুড কোর্ট শুরু করাটা একটু অবাক করে।

কিন্তু ঠিক এই জায়গাতে হওয়ার জন্যই যেন টিকে গেল অ্যাট দ্য টেবিলের পসরা। এই এলাকার আশপাশে সবসময়ই সংস্কৃতিমনা মধ্যবিত্তের আনাগোনা রয়েছে। তাদের জন্য গুলশান, বনানী— এমনকি ধানমন্ডিতে যেতেও অনেক সময় ট্রাফিকের ভোগান্তি পোহাতে হয়।

২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে শুরু হওয়া এই ফুডকোর্ট এরইমধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এখানকার খাবার ভালো, পরিবেশটাও দেখতেও খুব বিলাসবহুল। আর আশপাশে অনেক যানজট থাকলেও এই জায়গাটায় যাওয়াটা বেশ সহজ। বেইলি রোড ও ইস্কাটন এলাকার কমবয়সী লোকজনের আনাগোনাতেই মূলত ফুড কোর্টটি প্রাণমুখর হয়ে ওঠে।

এক সময় ঢাকায় বাইরে গিয়ে খাওয়ার মানে ছিল বিকেলের চা-শিঙাড়া কিংবা মাঝেসাঝে চাইনিজ ডিনার। কিন্তু আজ এই শহরের স্বাদ এমনভাবেই বদলে গেছে যে এখানে হরহামেশাই ভিন্ন সংস্কৃতির খাবারের পসরা বসে। আর এ ধরনের ফুড হলগুলোতে বৈচিত্র্যময় খাবারের দুনিয়ায় আরো বেশি ঘুরে আসা যায়।

ইনডোর প্লাজাতে বেশ বড় জায়গা জুড়ে দোতলা করা হয়েছে এখানে, সেইসঙ্গে বাইরে বসার জায়গাও আছে। ফুড কাউন্টারে রয়েছে জাপানিজ, মেক্সিকান, মিডল ইস্টার্ন, ইন্ডিয়ান এবং অন্য বহু দেশি খাবার। ফিউশনও বাদ যায়নি। নাচোস, বার্গার, পিজ্জা ও আইসক্রিমের পাশাপাশি এখানে ব্যাংকক স্টাইল থাই চায়ের একটি কাউন্টারও রয়েছে। 

'চা থাই অ্যান্ড টা' কাউন্টারে পাওয়া যায় জনপ্রিয় থাই টি লাতে, মাচা লাতে। এছাড়াও থাই টক-মিষ্টি টোস্ট স্ন্যাকও রয়েছে। দেশি চায়ের মেন্যুতে পাওয়া যাবে তন্দুরি চায়ের অফার। এই কাউন্টারটি চালান এক মিষ্টি জুটি। একজন বাংলাদেশি, অন্যজন থাই বংশোদ্ভূত। তাদের জুটির কারণেই যেন এই চায়ের স্টলটি অন্য এক মাত্রা পেয়েছে। তাই তো এখানে থাই আর দেশি– দুই ধরনের মেন্যুই রয়েছে।

এই ফুড কোর্টের কাছাকাছিই থাকেন উঠতি বয়সী আরশান সুফি।

আইসড লাতের এই ভক্ত বলেন, 'ঠান্ডা, ক্রিম আর অন্য রকম মিষ্টির মিশেলে যে মাচা লাতে এখানে পাওয়া যায়, ওটা ছাড়া আমার ক্লাসের পরের সুগার রাশ পরিপূর্ণ হয় না।'

তার মায়ের আবার জাসমিন হানি অ্যান্ড লেমন টি চাই, একেবারে সতেজ আর সুগার ফ্রি।

আরশান বলেন, 'আমরা মা-ছেলে মিলে প্রতিদিনই প্রায় কাজের শেষে এখানে চলে আসি।'

এদিকে দোকানি জুটি বলেন, 'থাই চায়ের মধ্যে মিষ্টি আর ঝালের এমন একটা মিশেল রয়েছে, যা গরম-ঠান্ডা দুইভাবেই খাওয়া চলে। থাই চায়ের দুনিয়ায় ছাত্রামুই (ChaTraMue) ব্র্যান্ডের ব্ল্যাক টি অনেক বেশি জনপ্রিয় ও ক্লাসিক ঘরানার চা। অন্যদিকে লাতে বানানো হয় খোলা চা পাতায় দারুচিনি, আদা, লেমনগ্রাস, জয়ত্রী, এলাচ আর সেইসঙ্গে কনডেন্সড বা ফোটানো তরল দুধ মিশিয়ে। ঠান্ডা, গরম দুইভাবেই খুব চলে এই পানীয়টি। থাই স্ট্রিট ড্রিংকের মতো এ চায়ের কমলা আভা সবার মন জয় করে নিয়েছে।'

এছাড়া উত্তরায়, ঢাকা বিমানবন্দরের কাছেই শেফ'স টেবল নতুন যাত্রা শুরু করেছে সেন্টারপয়েন্টের ৬ তলায়। অন্য আঁটোসাটো ফুড হলগুলোর মতো নয় এটি। ভিন্নধর্মী খাবার আর খোলামেলা আবহের কারণে এটি অন্য মাত্রা পেয়েছে।

ঢাকায় ফুড কোর্টের অভাব নেই, কিন্তু ঠিকঠাক গুছিয়ে, পরিষ্কার ও স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশের ফুড কোর্ট খুব একটা বেশি নেই। বর্তমানে এই দুটো নতুন জায়গাই তাই ঢাকা শহরের অন্যতম জনপ্রিয় ফুড কোর্ট হয়ে উঠেছে। অনেকেই পরিবার, বন্ধুবান্ধব নিয়ে যখন ইচ্ছা চলে যাচ্ছেন বাহারি খাবার খেতে আর খোলামেলা পরিবেশে সময় কাটাতে। আর কিড'স জোন থাকায় বাচ্চাদের নিয়ে প্লে ডেট বা জন্মদিনের পার্টিও আয়োজন করা যাচ্ছে। গাড়ি পার্কিংয়েরও সুব্যবস্থা রয়েছে।

ঢাকার খাবারের দুনিয়া দিন দিন তার রূপ পাল্টাতেই থাকে। আর এমনি করেই এ শহরের নিত্যদিনের রেস্তোরাঁতে পরিণত হচ্ছে অ্যাট দ্য টেবল ও শেফ'স টেবলের মতো ফুড কোর্টগুলো। মানসম্পন্ন খাবার, আরাম আর ছিমছাম সাজসজ্জার কারণে সবার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে এই ভিন্ন মাত্রার নতুন জায়গাগুলো।

 

 

Comments

The Daily Star  | English

Hasina can’t evade responsibility for Khaleda Zia’s death: Nazrul

In 2018, Khaleda walked into jail, but came out seriously ill, he says

7h ago