দাবদাহ

ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মি থেকে বাঁচতে যা করবেন

সম্প্রতি কয়েক দিন ধরে ঢাকার তাপমাত্রা বহুগুণে বেড়ে গেছে। আর এই প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের সঙ্গে ঢাকার অতিবেগুনি রশ্মির সূচকও এখন গড়ে ১১, যা কি না 'চরম' মাত্রার সমতুল্য। আগামী কিছুদিনের মধ্যেও সূর্যের সদয় দৃষ্টি খুব একটা থাকবে না এবং দিনের চূড়ান্ত তাপমাত্রার সময়গুলোতে এই সূচকের পূর্বাভাস এখন ১২-তে গিয়ে ঠেকছে। 

দীর্ঘদিন অতিবেগুনি রশ্মি গায়ে লাগলে রোদে পোড়া ত্বক, কম বয়সে বুড়িয়ে যাওয়া এবং ত্বকে ক্যানসারের মতো সব সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে। হ্রাস পাবে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাও। পানিশূন্যতা, হিট স্ট্রোক এবং ইনফ্লুয়েঞ্জা, ডায়রিয়ার মতো রোগ-ব্যাধিও এ সময়ে খুব সাধারণ। সেই সঙ্গে চোখের দৃষ্টিতেও ক্ষতি হবার আশঙ্কা রয়েছে।

তবে নিজেকে সূর্যের প্রকোপ থেকে রক্ষা করতে কিছু কৌশল অবলম্বন করা যেতে পারে। 

খোলা জায়গা এড়িয়ে চলুন

তাপমাত্রা যখন চরমে এবং সূর্যালোক তীব্র, যা কি না ঘড়ির কাঁটায় সাধারণত সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টার মধ্যকার সময়– তখন খুব দরকার না হলে একেবারে খোলা জায়গায় না যাওয়াই ভালো। এ সময়ে খোলা জায়গায় গেলেও চেষ্টা করতে হবে কোনো ধরনের ছাউনি খুঁজে পাওয়া যায় কি না। রাস্তায় না দাঁড়িয়ে থেকে ক্যাফে, রেস্তোরাঁ, লাইব্রেরি বা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত শপিং মলের মতো নিরাপদ স্থানে আশ্রয় খোঁজা যেতে পারে। 

শিক্ষার্থী ও কর্মজীবীরা বাইকে না উঠে বাস, ট্যাক্সি বা সিএনজিচালিত বাহনে যাতায়াত করতে পারেন। এতে সূর্যরশ্মি সরাসরি আঘাত করতে পারবে না। আর যদি এয়ার কন্ডিশনকৃত স্থান না পাওয়া যায় তবে নিজেকে একটি রিচার্জেবল ফ্যান অন্তত উপহার দিন এবং যথাসম্ভব বাতাস আসা-যাওয়া করতে পারে, এমন স্থানে থাকুন। 

হালকা ও আরামদায়ক পোশাক পরিধান করুন

এমন আবহাওয়ায় পোশাকের বেলায় সুতি কাপড়ের চেয়ে ভালো কিছু হয় না। ভালোভাবে শ্বাস নেওয়া যাবে কিন্তু শক্তভাবে বোনা কাপড় পরতে হবে। এতে করে পোশাকের মধ্যে তাপ আটকা পড়বে না, ত্বক পর্যন্ত অতিবেগুনি রশ্মিও পৌঁছাতে পারবে না। মাথা সুরক্ষিত রাখতে টুপি বা স্কার্ফ ব্যবহার করা যায়। খোলা জুতোর চেয়ে স্নিকার্স বা পাম্প শু পরতে পারেন। এ ছাড়া জামা-কাপড়ের ক্ষেত্রে যদি প্রাতিষ্ঠানিক পরিসরে যেতে হয়, তাহলে হালকা রং ও ফুলহাতা পোশাক পরাটা ভালো হবে। 

সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন

অন্তত ৩০-৫০ এসপিএফ-এর (সান প্রোটেকশন ফর্মুলা) সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। ত্বকের ধরনের ওপর ভিত্তি করে মিনারেল বা কেমিক্যাল, যেকোনো ধরনের সানস্ক্রিনই বেছে নেওয়া যায়। বাইরে যাবার আধঘণ্টা আগে ত্বকে সানস্ক্রিন প্রয়োগ করতে হবে এবং প্রতি ২ ঘণ্টা পরপর আবার ব্যবহার করতে হবে। বিশেষত কেউ যদি অনেক ঘামেন বা সাঁতার কাটেন, তখন সানস্ক্রিন নিয়ে অত্যন্ত সচেতন থাকাটা জরুরি। আমাদের দেশের মতো আর্দ্র আবহাওয়ায় বেশিক্ষণ বাইরে থাকলে ওয়াটারপ্রুফ সানস্ক্রিন বেছে নেওয়াই ভালো। তবে শুধু মুখমণ্ডল আর ঘাড়েই সানস্ক্রিন লাগালে চলবে না, অতিবেগুনি রশ্মি থেকে হাত ও পায়েরও সুরক্ষা প্রয়োজন। 

নিজেকে আড়াল করে রাখুন 

বড়সড় একটা হ্যাট বা ক্যাপ চেহারা, কান এবং গলাকে একই সঙ্গে ভালোরকম সুরক্ষা দিতে পারে। আরও ভালো হয়, সঙ্গে একটা ফোল্ডেবল ছাতা বহন করলে, যা কি না সবদিক থেকেই সূর্যালোক থেকে আড়াল করে রাখবে। এ ছাড়া এই সময়ে একটু ভালো মানের, অতিবেগুনি রশ্মি থেকে সুরক্ষা প্রযুক্তি আছে এমন এক জোড়া সানগ্লাস কেনার পেছনেও অর্থ ব্যয় করাটা বিচক্ষণের কাজ হবে। 

পানিশূন্য হওয়া যাবে না 

এই গরমে পানিশূন্যতা আরেক ঝামেলার নাম। এ থেকে বাঁচতে বেশি বেশি পানি পান করতে হবে। সঙ্গে সব সময় পানির বোতল বহন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে থার্মাল বোতল হলে আরও ভালো, কেন না এতে পানি ঠান্ডাও থাকবে। এ ছাড়া নিয়মিত স্নান করলেও একটা পর্যায় পর্যন্ত ত্বকের জল-চাহিদা পূর্ণ হয়। বিশেষত কেউ যদি রোজা রেখে থাকেন, তবে সেহরি আর ইফতারে পানির পাশাপাশি বিভিন্ন পানিজাতীয় ফল ও শাকসবজি খেতে হবে। খাবারের তালিকায় রাখতে হবে শসা, তরমুজ ও সাইট্রাস সম্পন্ন ফল যেমন- মাল্টা, কমলালেবু ইত্যাদি। এ ছাড়া জরুরি পরিস্থিতির জন্য স্যালাইন ও গ্লুকোজ পাউডার সঙ্গে রাখতে পারেন।

এসব উপায়ের মাধ্যমে হয়তো সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে সম্পূর্ণ সুরক্ষা পাওয়া কখনোই সম্ভব নয়, তবে যেকোনো ধরনের চরম ক্ষতি বা পরিণতি থেকে বাঁচতে এবং পরিস্থিতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে এগুলো সহায়ক হতে পারে। অন্তত যতক্ষণ না গরম কিছুটা হলেও কমছে, ততক্ষণ তো অবশ্যই। 

 
অনুবাদ: অনিন্দিতা চৌধুরী

 

Comments

The Daily Star  | English

Water lily tug-of-war continues

The Election Commission and National Citizen Party remain locked in a heated debate over the party’s choice of electoral symbol, the water lily -- a dispute that began in June..Despite several exchanges of letters and multiple meetings between NCP and the chief election commissioner, other

1h ago