ঘুরে আসতে পারেন হাতির বাংলো

চট্টগ্রামের সেন্ট্রাল রেলওয়ে বিল্ডিংয়ের (সিআরবি) পাহাড়ের সবুজে ঘেরা পরিবেশে, লালখান বাজার এলাকার লেডিস ক্লাবের পাশ দিয়ে এগিয়ে গেলে চোখে পড়ে একটি ব্যতিক্রমী স্থাপনা। নাম তার 'হাতির বাংলো'। দূর থেকে দেখলে মনে হয়, একটি বিশাল হাতি যেন শুঁড় তুলে দাঁড়িয়ে আছে। সেজন্যেই স্থানীয়দের কাছে এ বাংলোটির নাম 'হাতির বাংলো'।
হাতির বাংলোর ইতিহাস
১৮৯৩ সালে চট্টগ্রাম থেকে ফেনী পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের দায়িত্ব পরে ব্রিটিশ প্রকৌশলী ব্রাউনজার ওপর। তিনিই সেই সময়ে এই বাংলোটি নির্মাণ করেন। মূলত রেলওয়ে কর্মকর্তাদের আবাসনের জন্যই ১৯ শতকের মাঝামাঝি সময়ে এটি তৈরি করা হয়েছিল। স্থাপনাটি 'ফেরোসিমেন্ট' দিয়ে নির্মিত, যা সেই সময়ের জন্য একটি আধুনিক নির্মাণ প্রযুক্তি ছিল। বাংলোর স্থাপত্যে হাতির আদল ব্যবহার করে একে বিশেষভাবে নান্দনিক করা হয়েছে।
স্থাপত্যশৈলী ও বৈশিষ্ট্য
হাতির বাংলোটি মূলত ১৩২ বছরের পুরোনো ডুপ্লেক্স বাড়ি। এই বাংলোর নিচতলায় চারটি কক্ষ ও দোতলায় একটি শয়নকক্ষ রয়েছে। বাংলোর সামনে ও পেছনে মোট ১২টি গোলাকার জানালা রয়েছে, যা হাতির চোখের মতো দেখতে। বারান্দার দু'পাশে হাতির শুঁড়ের আদলে নির্মিত দুটি গোলাকার ছিদ্র রয়েছে। বাংলোর এসব বৈশিষ্ট্য একে একটি জীবন্ত হাতির মতো করে তুলেছে। বাংলোর চারপাশে সবুজ গাছপালা ও পাখির কিচিরমিচির শব্দ পরিবেশকে আরও মনোমুগ্ধকর করে তোলে।
বর্তমান অবস্থা
বর্তমানে বাংলোটি অবহেলায় পড়ে আছে। দরজা-জানালা ভেঙে গেছে, দেয়ালে শ্যাওলাও জমেছে, পলেস্তারা খসে পড়েছে। থাকার জন্য এটি একদম অনুপযোগী। তবে এখনো এটি দর্শনার্থীদের আকর্ষণ করে। অনেকেই এখানে ছবি তোলেন, শর্টফিল্মের শুটিং করেন। বাংলোর ভেতরে এখন কোনোরকমভাবে একজন রেলওয়ে কর্মচারী বসবাস করেন।
হাতির বাংলো চট্টগ্রামের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি সংরক্ষণ করা জরুরি, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এই স্থাপত্যের সৌন্দর্য ও ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারে।
সম্প্রতি এই বাংলোটি ঘুরে এসেছেন পর্যটক এলিজা বিনতে এলাহি। তিনি জানান, চট্টগ্রামের অনেক স্থানীয়রাই জানেন না এই বাংলোটি সম্পর্কে। এটা খুব খারাপ লাগার বিষয়। আর বাংলোটির অবস্থাও জরাজীর্ণ। কর্তৃপক্ষের উচিত বাংলোটিকে সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া। তাহলে এটি একটি দারুণ পর্যটন কেন্দ্র হয়ে উঠবে।
তিনি আরও বলেন, 'এ বাংলোটি কেন নির্মিত, কত সালে নির্মিত, এর বিশেষত্ব কী—এগুলো ছোট্ট একটা বোর্ডে লিখে দিলেও এর ইতিহাস সম্পর্কে অনেকেই জানবে, তাদের আগ্রহ জন্মাবে।'
Comments