‘সমাজের মনস্তত্ব পরিবর্তনে বইয়ের বিকল্প নেই’

'জ্ঞান হচ্ছে আলো, অজ্ঞানতা হচ্ছে অন্ধকার। জ্ঞানের আলো যেখানে আসে সেখানে অন্ধকার থাকতে পারে না। বইয়ের মাধ্যমে বিকশিত হয় জ্ঞান-বিজ্ঞান, ইতিহাস, সাহিত্য থেকে শুরু করে নৈতিকতা ও জীবনবোধ। তাই জ্ঞান অর্জন ও সমাজ পরিবর্তনে বইপড়ার ভূমিকা অপরিসীম।'
বিলকিছ আলম পাঠাগারের আয়োজনে 'সমাজ পরিবর্তনে বই পড়ার ভূমিকা ও বই বিনিময় উৎসব' শীর্ষক আলোচনায় বক্তারা এ কথাগুলো বলেন।
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) অনুষ্ঠানটি উদ্বোধন করেন জুলাই শহীদ জামশেদুর রহমানের বাবা শাহ্ আলম। তিনি বলেন, 'The more you learn, the more you read' অর্থাৎ আপনি যত বেশি জ্ঞান অর্জন করবেন, তত পড়ার প্রতি আগ্রহ বাড়বে এবং নতুন কিছু জানতে চাইবেন।'
তার ভাষ্য, 'আমি একজন শহীদের বাবা হিসেবে অনুরোধ করছি, আপনারা যদি বই না পড়েন, তাহলে মন ও সমাজের অন্ধকার ঘুচবে না। আমার ছেলে বই পছন্দ করতো, সমাজ নিয়ে স্বপ্ন দেখতো। তার স্বপ্ন সবার মাঝে ছড়িয়ে যাক, এই প্রত্যাশা করছি।'
পাঠাগারের উপদেষ্টা মাওলানা নুরুল আলমের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. পেয়ার আহম্মেদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন সমাজসেবক ও ব্যাংকার আগা আজিজুল ইসলাম চৌধুরী। বিশেষ আলোচক ছিলেন সংবিধান বিশেষজ্ঞ আরিফ খান, গবেষক ড. কাজল রশীদ শাহীন, কথাসাহিত্যিক ফয়সাল আহমেদ। সংগ্রামী জীবনের গল্প বলেন পাঠাগারের পাঠক ডা. আবদুল হালিম। স্বাগত বক্তব্য দেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক জামাল হোসেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ইমরান মাহফুজ। পাঠাগারের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন কাজী মঈন উদ্দিন ও জাগ্রত তরুণের তানভির হোসেন।
প্রধান অতিথি পেয়ার আহম্মেদ বলেন, 'কেবল ক্লাসে প্রথম হলে হবে না, সমাজ-জীবনে চরিত্র গঠনেও এগিয়ে থাকতে হবে। মা-বাবার স্বপ্ন পূরণে সৃজনশীল চর্চা অনেক সহায়ক ভূমিকা রাখে।'
আরিফ খান বলেন, বইয়ের সংস্পর্শে একজন মানুষের জীবন আমূল বদলে যেতে পারে। তার জন্য বই ও বইয়ের মানুষ অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আজকের এমন আয়োজন আরও বেশি বেশি দরকার সমাজে।
কাজল রশীদ শাহীন বলেন, একজন মানুষ কেবলমাত্র বই পড়েই সমাজের যে কোন কিছু হতে পারে। ডাক্তার, উকিল, ইঞ্জিনিয়ার, কবি, লেখক, সাংবাদিক ও শিক্ষক—যে কোনো পেশায় ভালো করতে পারে মনোযোগসহ বই পড়লে। আমার জীবনে এমন দৃষ্টান্ত অনেক আছে। তখন তিনি তার বন্ধু ইস্রাফিলের একটা গল্প বলেন এবং উপস্থিত সবাই উপভোগ করেন।

আয়োজনের অন্যতম দিক ছিল, উৎসবমুখর পরিবেশে শিক্ষার্থীরা নিজের পড়া বইটি জমা দিয়ে নতুন বই সংগ্রহ করতে পেরেছে। যাকে আয়োজকরা নাম দিয়েছে বই বিনিময় উৎসব। এই ইতিবাচক আয়োজন থেকে একে অপরকে জানার সংস্কৃতিকেও উৎসাহিত করে। এ সময় ওই বিদ্যালয়সহ উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও শিক্ষার্থী প্রায় তিন শতাধিক উপস্থিত ছিলেন।
Comments