২০৫ তম জন্মদিনে বিদ্যাসাগর

বীরসিংহ গ্রামে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জন্মস্থান, ছবি: সংগৃহীত

কুসংস্কারে আচ্ছন্ন সমাজকে পরিবর্তন করে ভারতবর্ষকে যিনি আলোকিত করেছেন সেই সংগ্রামীর ২০৫তম জন্মদিন আজ। তিনি বাংলা সাহিত্য ও সমাজ সংস্কারের অগ্রদূত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। ১৮২০ সালের এই দিনে কলকাতার মেদিনীপুর জেলার বীরসিংহ গ্রামে এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্ম হয়।

দারিদ্রতা শিক্ষালাভের আগ্রহকে কমাতে পারেনি। বিদ্যাসাগরের পাণ্ডিত্য কেবল বাংলা ভাষা ও সাহিত্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না; বেদান্ত, তর্কশাস্ত্র, জ্যোতির্বিজ্ঞান ও সমাজগঠনেও তার অবদান উল্লেখযোগ্য। তাকে ঘিরে প্রচলিত আছে যে, রাতে ঘরে আলো জ্বালানোর সামর্থ্য না থাকায় রাস্তায় ল্যাম্পপোস্টের নিচে বসেই পড়াশোনা চালিয়ে গেছেন তিনি। কলকাতায় আসার পর তিনি বিভিন্ন ভাষা ও সংস্কৃতিতে দক্ষ হন। 

শিক্ষা ছাড়াও সমাজ সংস্কারে তার অবদান অসামান্য। সতীদাহ প্রথা উচ্ছেদ, বিধবা বিবাহ আইন পাশ এবং নারীদের শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করাসহ অসংখ্য উদ্ভাবনী পদক্ষেপ তিনি নিয়েছেন। এছাড়া বাংলা ব্যাকরণ, লিপি সংস্কার ও হোমিওপ্যাথি শাস্ত্রে তার পাণ্ডিত্য চিরস্মরণীয়। তিনিই প্রথম বাংলায় যথিচিহ্নের প্রচলন ঘটিয়েছেন।

বিদ্যাসাগরের কাজের প্রভাব আজও বাঙালি সমাজে স্পষ্ট। শিক্ষার প্রকৃত অর্থ ও মানবিক মূল্য বোঝানোর ক্ষেত্রে তিনি যুগান্তকারী ভূমিকা রেখেছেন। বিবিসি বাংলার 'সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি কে?' জরিপে শ্রোতাদের মনোনীত শীর্ষ বিশজন বাঙালির মধ্যে অষ্টম স্থানে রয়েছেন তিনি। ১৮৯১ সালে জীবনাবসান হলেও, তার জীবন ও কাজ আজও বাংলা সাহিত্য ও সমাজ সংস্কারের জন্য প্রেরণার উৎস হয়ে আছে।

বাংলার নবজাগরণের এই পুরোধা ব্যক্তিত্ব দেশের আপামোর জনসাধারণের কাছে পরিচিত 'দয়ার সাগর' নামে। বাঙালি সমাজে আজও এক স্মরণীয় ব্যক্তিত্ব তিনি। শিশুপাঠ্য বর্ণপরিচয় সহ একাধিক পাঠ্যপুস্তক ও সংস্কৃত ব্যাকরণ গ্রন্থ রচনা করেছেন। তাকে বাংলা গদ্যের প্রথম শিল্পী বলে অভিহিত করেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। মাইকেল মধুসূদন দত্ত তার মধ্যে দেখতে পেয়েছিলেন প্রাচীন ঋষির প্রজ্ঞা। 

ভারতীয় চলচ্চিত্র পরিচালক কালী প্রসাদ ঘোষ ১৯৫০ সালে ঈশ্বরচন্দ্রের জীবনী নিয়ে বাংলা ভাষার জীবনীমূলক চলচ্চিত্র বিদ্যাসাগর (১৯৫০) তৈরি করেছিলেন, যেখানে পাহাড়ি সান্যাল প্রধান ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। ১৮৩৯ সালে তার অগাধ জ্ঞান এবং সংস্কৃতি ও শিক্ষার প্রতি অবদানের স্বীকৃতিতে সংস্কৃতি কলেজ তাকে 'বিদ্যাসাগর' উপাধি প্রদান করে।

উল্লেখ্য ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জন্মের ২০০ বছর উপলক্ষে রাজ্যে ইংরেজি শিক্ষার প্রয়োজনীয়তার গুরুত্ব অনুধাবন করে রাজ্য সরকার ১০০টি বাংলা মাধ্যম স্কুলে ইংরেজি মাধ্যম চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। জানা গেল, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর প্রতিষ্ঠিত মেট্রোপলিটান ইনস্টিটিউশন বড়বাজার ব্রাঞ্চ স্কুলটিতে ইংরেজি মাধ্যম চালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিদ্যাসাগর মহাশয় কলকাতায় প্রথম যে স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেন, সেটির নাম মেট্রোপলিটান ইনস্টিটিউশন (মেন) (বর্তমান ঠিকানা কলকাতা-৬, বিদ্যাসাগর কলেজ সংলগ্ন)। 

Comments

The Daily Star  | English

Tug-of-war over water lily continues

The Election Commission and National Citizen Party remain locked in a heated debate over the party’s choice of electoral symbol, the water lily -- a dispute that began in June.

3h ago