হেলাল হাফিজ নেই, যেভাবে উদযাপন হচ্ছে কবির জন্মদিন

প্রতি বছরের মতো এবারও কবি হেলাল হাফিজের জন্মদিন উদযাপন করা হচ্ছে। তবে এবার তিনি নেই। প্রয়াত এই কবির ৭৮তম জন্মদিন উপলক্ষে নিজ জেলার ভক্তরা স্মরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন।
এক আড্ডার মাধ্যমে কবির কাব্যগ্রন্থ থেকে কবিতা পাঠ এবং আবেগ প্রকাশের আয়োজন করছে 'হিমু পাঠক আড্ডা'। আর নেত্রকোনা শহরের দত্ত উচ্চ বিদ্যালয়ও অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে।
এতে কবির শৈশব, কৈশোর, যৌবন, কবিতা ও কবিত্ব নিয়ে স্থানীয় কবি, লেখক, শিক্ষক ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা আলোচনা করবেন। এ ছাড়া, আগামী ১০ অক্টোবর জাতীয় শিল্পকলায় 'নান্দিক' ম্যাগাজিনের উদ্যোগে আরও একটি আলোচনা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে।
জন্মদিনে পারিবারিক আয়োজন নিয়ে জানতে চাইলে নেত্রকোনায় শিক্ষকতা করা কবির ভাই নেহাল হাফিজ দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, জন্মদিনে ভাইকে তিনি গভীরভাবে স্মরণ করছেন।
আরও জানালেন, ৯ অক্টোবর ঢাকায় এসে ভাইয়ের কবর জিয়ারত করবেন। আজ মঙ্গলবার বিকেলে নেত্রকোনায় একটি বিশেষ আয়োজন রয়েছে। তাতে পরিবারের সদস্যরা থাকবেন।
তিনি বলেন, 'হেলাল হাফিজের সারাজীবন কেটেছে কেবলমাত্র কবিতাকে ভালোবেসে। শেষের দিকে খুব আফসোস করেন একটা পারিবারিক পরিবেশ, জীবন-স্নেহ, ছায়া ও মায়ার জন্য। নিঃসংকোচে বহুবার আমার পরিবারে আসার কথা বললেও ফিরিয়ে দেন। ব্যতিক্রম, অনন্য এক জীবন কবিতার জন্য বেছে নেন তিনি।'
বাংলা ভাষার অন্যতম জনপ্রিয় কবি হেলাল হাফিজ ১৯৪৮ সালের ৭ অক্টোবর নেত্রকোনায় জন্মগ্রহণ করেন। বাবা খোরশেদ আলী তালুকদার। মায়ের নাম কোকিলা বেগম।
ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের সময় হেলাল হাফিজ 'নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়' নামে একটি কবিতা লিখে রাতারাতি খ্যাতি অর্জন করেন। তখন তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।
তারপর ১৯৮৬ সালে তার প্রথম সাড়া জাগানো কবিতার বই 'যে জলে আগুন জ্বলে' প্রকাশিত হয়। সেই বইয়ের ৫৬টি কবিতা দিয়ে কবি বাংলা কবিতার জগতে জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছান হেলাল হাফিজ।
২৫ বছর পর ২০১২ সালে বের হয় কবির 'কবিতা একাত্তর'। এই বইয়ের ইংরেজি অনুবাদের নাম হয় 'দ্য টিয়ার্স দ্যাট ব্লেজ'। কবিতা একাত্তরে প্রথম গ্রন্থের ৫৬টি কবিতার সঙ্গে নতুন ১৫টি নতুন কবিতা যুক্ত হয়। পরে এর সঙ্গে আরও ১৭টি নতুন কবিতা যুক্ত হয়ে প্রকাশিত হয় 'এক জীবনের জন্মজখম'।
২০২৪ সালের ১৩ ডিসেম্বর ঢাকায় মারা যান হেলাল হাফিজ। কবিতায় অসামান্য অবদানের স্মারক হিসেবে তাকে ২০১৩ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার দেওয়া হয়। ২০২৫ সালে তিনি মরণোত্তর একুশে পদক পান।
এ ছাড়াও তিনি পেয়েছেন- যশোর সাহিত্য পরিষদ পুরস্কার (১৯৮৬), আবুল মনসুর আহমদ সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৭), নেত্রকোনা সাহিত্য পরিষদের কবি খালেকদাদ চৌধুরী পুরস্কার ও সম্মাননা।
Comments