‘বাংলাদেশ যত এগিয়ে যাবে ফররুখ আহমদ আরও প্রাসঙ্গিক হবে’
ত্রিশ থেকে চল্লিশের দশকে বাংলা ভাষার সাহিত্য যে গতি প্রকৃতি ছিল সে পথে যাননি ফররুখ আহমদ। সম্পূর্ণ নিজস্ব ভাবনা ও ভাষার স্বাতন্ত্র্যতা নিয়ে এগিয়েছেন। তাকে যারা ইসলামী রেনেসাঁর কবি বলে তারা তাকে পূর্ণাঙ্গ পড়েননি। ফররুখ আহমদ কোন ঘরানার না, তিনি বাংলা ভাষার স্বাধীন ও শক্তিশালী কবি। বাংলাদেশ যত এগিয়ে যাবে ফররুখ আরও প্রাসঙ্গিক হবে।
কথাগুলো বলছিলেন কবি ফররুখ আহমদের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ফররুখ গবেষক ড. মাহবুব হাসান।বৃহস্পতিবার রাতে বটতলায় এই আয়োজনে আরও উপস্থিত ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু)র ভিপি আব্দুর রশিদ জিতু, সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক খোরশেদ আলম ও সুমন সাজ্জাদ। আলোচক হিসেবে ছিলেন গবেষক কাজল রশীদ শাহীন, মাহবুব মুকুল, বোরহান মাহমুদ, আবিদ আজম, মঈন মুনতাসীর ও ইমরান মাহফুজ। কবিতা পড়েছেন শাকিল মাহমুদ, দিদার মুহাম্মদ ও তানজিলা ফেরদৌস।
আলোচনায় কাজল রশীদ শাহীন বলেন, ফররুখ আহমদ নিয়ে আমাদের অনেকের মাঝে কুয়াশাচ্ছন্ন ধারনা আছে। এমন ধারনা নিয়ে অনেকে ফররুখ আহমদকে মূল্যায়ন করছে। যা তার প্রতি অন্যায্য আচরণ। ফররুখ যে মানের কবি তাকে নিয়ে আলোচনা করতে আমাদের আরও সতর্ক হতে হবে। বিশেষ করে আহমদ ছফার কলাম 'কবি ফররুখ আহমদের কি অপরাধ' লেখাটি অনেক প্রশ্নের জবাব হাজির করে। তা সবার পড়া দরকার।
অধ্যাপক খোরশেদ আলম বলেন, বাস্তবে ফররুখের উপর যে অভিযোগ করা হয়, তা অনেকের মধ্যেই ছিলো, অথচ তারা চরিত্র বদল করে ফররুখের গায়ে কালিমা লাগানোর চেষ্টা করেছেন; আহমদ ছফা এর সুন্দর জবাব দিয়েছেন। বলেছেন ফররুখ আহমদ সাহিত্যের অথৈ দরিয়া, যেখানে সাহিত্য-উত্তরসূরিরা সাঁতরে বেড়ানোর পয়গাম খুঁজে পাবেন; ফররুখ লিখেছেন, 'রাত পোহাবার কতো দেরি, পাঞ্জেরি;' তিনি উত্তরও দিয়েছেন, 'তোরা চাসনে কিছু/ কারো কাছে/ খোদার মদদ ছাড়া, তোরা পরের উপর ভরসা ছেড়ে/ নিজের পায়ে দাঁড়া; জুলাই অভ্যুত্থানের পর এই চিন্তা অনেক প্রাসঙ্গিক।
অধ্যাপক সুমন সাজ্জাদ বলেন, ছাত্র ও শিক্ষক জীবনের প্রায় ২৫ বছরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কবি ফররুখ আহমদ নিয়ে আলোচনা করতে দেখিনি। কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদের আয়োজনেও এমন আলাপ হয়নি, একাডেমিক সিলেবাসে যুক্ত করতে বুদ্ধিবৃত্তিক লড়াই করতে হয়েছে আমাদের। এমন একটা অলিখিত নিষেধাজ্ঞা ফররুখ আহমদ নিয়ে ছিল। আসলে বড় কবিদের নিয়ে এমন লড়াই থাকে। আমাদের লড়াই সংগ্রাম করেই এগিয়ে যেতে হবে। তবে আজকের দিনে কেবল ফররুখ না, আরও যারা বাংলাদেশ পন্থার কবি আছেন তাদের সবাইকে নিয়ে আলোচনা জারি রাখতে হবে। তিনি 'সাত সাগরের মাঝি' বা 'সিরাজাম মুনীরা'র মতো কাব্যগ্রন্থের ওপর আলোকপাত করেন।
আলোচনা শেষে সবাইকে ধন্যবাদ দিয়েছেন জাকসু সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম ও সাহিত্য সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম বাপ্পি।


Comments