‘এটা দুর্ঘটনা না’—মিরপুরে আগুনে ছাই হয়ে গেল ছোট ব্যবসায়ীর বড় স্বপ্ন
মিরপুর-১১-তে ছয়তলা ভবনে আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা যখন ব্যস্ত, তখন গার্মেন্ট কারখানা 'বিউটি ফ্যাশন'-এর মালিক বিউটি আখতার বসে পড়েছিলেন ফুটপাতে। চোখে-মুখে গভীর হতাশা নিয়ে কেবল বললেন, 'আমার জীবনটা শেষ'।
দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপচারিতায় ৪৬ বছর বয়সী এই নারী জানান, ২২ বছর তিনি পোশাক কারখানায় কাজ করেছেন।
বিউটি বলেন, 'আট বছর আগে তিনটি পুরনো সেলাই মেশিন কিনে নিজেই কারখানা খুলেছিলাম। ৬০ জন পর্যন্ত শ্রমিক কাজ করেছে আমার কারখানায়। এখন ৩৫ জন কর্মী ছিল।'
শুক্রবার রাতে মিরপুর-১১-এর কালশী রোডের ছয়তলা ভবনের পঞ্চম তলায় আগুন লাগে। ভবনটির নিচতলায় একটি কমিউনিটি সেন্টার ছিল।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা প্রায় দুই ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।
ভবনটির সবচেয়ে উপরের তলাতেই ছিল বিউটির কারখানা—যেখান থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়।
বিউটি জানান, তিনি অন্য কারখানা থেকে সাব-কন্ট্রাক্ট নিয়ে কাজ করেন।
বলেন, 'কারখানায় শিশুদের ৪০ হাজার পিস প্যান্ট ও শার্ট প্রস্তুত ছিল। গত সপ্তাহেই কাজ শেষ করেছিলাম। তিন দিন আগে সৌদি আরব পাঠানোর কথা ছিল। কিন্তু কয়েক দিন আগে ঢাকায় বিমানবন্দরে আগুন লাগায় রপ্তানিকারক ডেলিভারি নেয়নি।'
শুমা ফ্যাশনের মালিক শুমা আখতার বলেন, 'কিছুদিন আগে চীন থেকে ১০ টন কাপড় এনেছি। পোশাক তৈরি করে সৌদি আরবে পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। বিউটির কারখানায় প্রথম ৫ টনের কাজ শেষ হয়েছিল। দুই-তিন দিন আগেই বাকি কাপড়গুলোও সেলাইয়ের জন্য পাঠিয়েছিলাম।'
তিনি বলেন, 'আমার অনেক ঋণ। ব্যবসা শেষ হয়ে গেছে। আমি নিঃস্ব হয়ে গেলাম।'
বিউটি আখতার বলেন, 'শুক্রবার বিকেল ৫টার দিকেও কারখানায় গিয়েছিলাম। ছুটির দিন ছিল। একটু দেখে আবার বন্ধ করে চলে আসি। রাতে শুনি আমার কারখানায় আগুন লেগেছে।'
রাস্তার ধারে বসে কান্নায় ভেঙে পড়া বিউটি বলেন, 'এই আড়াই হাজার বর্গফুটের বেশি জায়গাটা আমি সাড়ে তিন মাস আগে ভাড়া নিয়েছিলাম।'
বিউটি ও শুমা দুজনই সন্দেহ করছেন, ঘটনাটি নাশকতার।
বিউটি বলেন, 'এটা কোনো দুর্ঘটনা না। নিচতলার কমিউনিটি সেন্টার থেকে সিঁড়ির দিকে যাওয়ার গেটটা খোলা ছিল।'


Comments