যে অভিযোগে গ্রেপ্তার যুব মহিলা লীগ নেত্রী মিশু, পদ পেয়েছিলেন যেভাবে

সাভারে গ্রেপ্তার সেই যুব মহিলা লীগ নেত্রীর ৭ দিনের রিমান্ড চায় পুলিশ
মেহনাজ মিশু | ছবি: সংগৃহীত

কিশোরীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ঢাকা জেলা যুব মহিলা লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মেহনাজ মিশুকে (৩৫) গতকাল গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তারের পর মিশুকে গত রাতেই সংগঠন থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।

পুলিশ আজ রোববার মিশুর ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করলেও, তাকে আদালতে হাজির না করানোয় আবেদন মঞ্জুর হয়নি।

অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী ১৫ বছর বয়সী এক কিশোরীকে বিবস্ত্র করে ছবি তুলে অনৈতিক কাজে বাধ্য করার অভিযোগে গতকাল মেহনাজ মিশু, তার স্বামী আতিকুর রহমান আতিক ও অজ্ঞাত ৬-৭ জনের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ করেন কিশোরীর মা।

মামলায় মিশুর বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ আনা হয়েছে এবং যেভাবে তিনি পদ পেয়েছিলেন তা জানার চেষ্টা করেছে দ্য ডেইলি স্টার।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, অষ্টম শ্রেণীর ওই শিক্ষার্থীর বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ হয় ১০ বছর আগে। বিচ্ছেদের আগে তারা মিশুদের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। বাবা-মায়ের বিচ্ছেদের পর কিশোরী মেয়েটি বাবার কাছে থাকত।

বাবা বিদেশে চলে যাওয়ার পর মেয়েটি ফুপু ও ফুপাতো বোনের বাসায় থেকে সাভারে পড়াশোনা করত। ফুপু ও ফুপাতো বোন চাকরি নিয়ে অন্যত্র চলে গেলে ৭ মাস আগে মিশুর বাবা মঞ্জুর হোসেন মেয়েটিকে মিশুর বাসায় নিয়ে আসেন।

গত ৩-৪ মাস ধরে মেয়েটিকে অনৈতিক প্রস্তাব দেয় মিশু ও তার স্বামী আতিক। এতে রাজি না হওয়ায় বিভিন্ন সময় মেয়েটির ওপর নির্যাতন চালায় তারা।

অভিযোগে আরও বলা হয়, মিশুর বাসায় প্রভাবশালীদের আসা-যাওয়া ছিল। মিশু সম্ভ্রান্ত পরিবারের পুরুষদের তার ফ্ল্যাটে এনে মেয়েদের সঙ্গে অশ্লীল ছবি তুলে ফাঁসিয়ে টাকা আদায় করতেন।

এ ধরনের অনৈতিক কাজে রাজি না হওয়ায় কিশোরীকে মারধর ও শরীরে জ্বলন্ত সিগারেট দিয়ে পুড়িয়ে দেন মিশু ও আতিক।

গত ২৪ জুলাই রাত ১০টার দিকে ৫-৭ জন মিশুর বাসায় এলে তাদের সঙ্গে অনৈতিক কাজ করতে কিশোরীকে চাপ দেয় মিশু-আতিক দম্পতি। এতে রাজি না হওয়ায় তারা উচ্চস্বরে সাউন্ডবক্স বাজিয়ে মেয়েটিকে নির্যাতন করে। একপর্যায়ে আতিক মেয়েটিকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। পরে এ ঘটনা ধামাচাপা দিতে ২৫ জুলাই ভোরে মেয়েটিকে বাসার ৫ তলা থেকে ফেলে দিয়ে হত্যার চেষ্টা করে।

স্থানীয়রা মেয়েটিকে উদ্ধার করে সাভারের এনাম মেডিকেলে ভর্তি করে। পরে ৮ আগস্ট মেয়েটিকে হাসপাতাল থেকে ছাড়া হলে তার মা তাকে নিজের কাছে নেন। পরে মেয়েটির বাবা-মা আলোচনা করে মামলার সিদ্ধান্ত নেন।

দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপকালে মেয়েটির বাবা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, 'প্রথমে আমাদের বলা হয়েছিল এটি দুর্ঘটনা। পরে মেয়ের কাছে সব কিছু শুনে আমরা বুঝতে পেরেছি মিশু ও মিশুর স্বামীর মূল পেশা মানুষকে ফাঁসিয়ে টাকা আদায় করা। মেয়ের ওপর অমানবিক নির্যাতনের বর্ণনা শুনে আগেই মামলা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বিভিন্ন চাপে করতে পারিনি।'

মিশুকে গ্রেপ্তারের পর কোনো হুমকি পেয়েছেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'মামলা তুলে নিতে বলা হচ্ছে।'

যেভাবে পদ পেয়েছিলেন মিশু

মেহনাজ মিশু ২০২১ সালে ঢাকা জেলা যুব মহিলা লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদ পান। এর আগেও বিভিন্ন সময় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সভা ও কর্মসূচিতে অংশ নিতেন তিনি।

সূত্র জানায়, ঢাকা জেলা যুবলীগের এক শীর্ষ নেতার ভাগ্নি হওয়ার সুবাদে পদ পাওয়ার আগেই তার বেশ পরিচিতি ছিল।

তবে তার আচার-আচরণ নিয়ে সংগঠনটির পদ প্রত্যাশীদের মধ্যে মিশুকে নিয়ে বিভিন্ন নেতিবাচক গুঞ্জন ছিল।

জানতে চাইলে ঢাকা জেলা উত্তর যুব মহিলা লীগের শীর্ষ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মিশুকে কমিটিতে পদ দেওয়ার আগে আমরা আপত্তি জানিয়েছিলাম। কিন্তু দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর মিশুকে কমিটিতে যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক পদে চূড়ান্ত করতে সুপারিশ করেন। ওই সুপারিশেই কেন্দ্রীয় কমিটি পদটি বহাল রেখে অনুমোদন দেয়।'

মিশু সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'মিশুর সঙ্গে আমি এখন পর্যন্ত দুটি প্রোগ্রামে অংশ নিয়েছি। তার সম্পর্কে এত কিছু জানি না। তবে তিনি সম্ভ্রান্ত পরিবারের এটা জানি।'

মিশুকে পদ দেওয়ার বিষয়ে আপত্তি কেন ছিল, জানতে চাইলে তার উত্তর দেননি তিনি।

মিশুর পদ পাওয়ার আগে সুপারিশের বিষয়ে জানতে দুর্যোগ ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমানকে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। মোবাইলে ক্ষুদেবার্তা পাঠানো হলেও তিনি জবাব দেননি।

আজ মিশুকে আদালতে ওঠানো হয়নি

মিশুকে গ্রেপ্তারের পর গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের মাধ্যমে তাকে কেরাণীগঞ্জ কারাগারে পাঠানো হয়।

পুলিশের পক্ষ থেকে আজ তার ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হলেও, তাকে আদালতে হাজির করা হয়নি।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সাভার মডেল থানার উপপরিদর্শক জহিরুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মিশুর অপরাধের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য উদ্ঘাটনে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আজ আদালতে মিশুর ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু আদালতে হাজির না করানোয় রিমান্ড মঞ্জুর হয়নি। আগামীকাল আদালতে ওঠানো হতে পারে।'

 

Comments

The Daily Star  | English

July charter implementation: Commission races against time to find out ways

Consensus Commission has yet to find a viable mechanism to ensure that the proposed constitutional reforms under the July charter will be implemented

9h ago