ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ৩ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আইজিপির কাছে অভিযোগ

গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছাড়া আটকের চেষ্টা, মারধর ও টাকা লুটের অভিযোগ এনে তিন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পুলিশ মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান।

বিষ্ণুপুর ইউপি চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন ভূঁইয়া লিখিত অভিযোগে বলেন, ক্ষমতাসীন উপজেলা চেয়ারম্যানের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ না নেওয়ার ক্ষোভে কোনো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছাড়াই গত ২৭ মে তাকে আটক করতে যায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর থানার একদল পুলিশ। সেসময় তারা ওই চেয়ারম্যানকে মারধর এবং তার ঘরে ভাঙচুরসহ ২৫ লাখ টাকা লুট করে নেয়।

গত ২৪ জুন আইজিপি বরাবর অভিযোগটি দায়ের করেন জামাল উদ্দিন ভূঁইয়া। পুলিশ সদর দপ্তরের সিকিউরিটি সেলের একজন অতিরিক্ত ডিআইজি অভিযোগপত্রটি গ্রহণ করেন বলে জানা গেছে।

ইউপি চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন ভূঁইয়ার অভিযোগ, ওই পুলিশ কর্মকর্তা এখন তাকে এবং তার অনুসারীদের ফৌজদারি মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন।

যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে সেই তিন পুলিশ কর্মকর্তা হলেন—বিজয়নগর থানায় কর্মরত পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) হাসান জামিল খান, উপপরিদর্শক (এসআই) পীযুষ কান্তি দে এবং স্থানীয় চম্পকনগর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এসআই) মো. রবিউল ইসলাম।

লিখিত অভিযোগে ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, তিনি নির্বাচনে ভোটগ্রহণের আগে তাদের আত্মীয় 'আনারস' প্রতীকের উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী আল-জাবের ওরফে জাবেদের পক্ষে কাজ করেন। নির্বাচনে তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ছিলেন সেসময়কার উপজেলা চেয়ারম্যান নাছিমা মুকাই আলী। নাছিমার পক্ষে অন্যায়ভাবে প্রভাবিত হয়ে অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তারা গত ২৭ মে দুপুরে চেয়ারম্যানের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে তার নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে বলে মৌখিক দাবি করেন। সেসময় গ্রেপ্তারি পরোয়ানার কাগজপত্র দেখাতে বলা হলে ওই পুলিশ কর্মকর্তারা জোরপূর্বক জামাল চেয়ারম্যানকে আটক করে নিয়ে যেতে টানাহেঁচড়া শুরু করেন।

অভিযোগে আরও বলা হয়, ওই সময় পুলিশ ইন্সপেক্টর হাসান জামিল খান তাকে গালাগাল করেন এবং নাকে-মুখে চড় মারেন। তখন এসআই রবিউল ইসলাম তার হাতে থাকা পিস্তলের বাট দিয়ে কপালে আঘাত করেন। এসআই পীযুষ কান্তি দে তার হাতে থাকা লাঠি দিয়ে চেয়ারম্যানের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করেন। অন্যান্য পুলিশ সদস্যরা চেয়ারম্যানের বসতঘরে থাকা আসবাবপত্র ভাঙচুর করে এবং ওয়ারড্রোবের তালা ভেঙে নগদ ২৫ লাখ টাকা লুট করে নিয়ে যায়।

অভিযোগে আরও বলা হয়, পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি চলার সময় চেয়ারম্যানের বাবা আব্দুল হক ভূঁইয়াকে আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। পুলিশ কর্মকর্তারা তখন 'আনারস' প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা থেকে বিরত থাকতে হুমকি দেন বলেও জানান তিনি। পরে প্রতিবেশীরা তাকে উদ্ধার করে বিজয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়।

তিনি বিষয়টি সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও জেলার পুলিশ সুপারকে জানালেও কোনো ফল পাননি বলে লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেন।

বিষয়টি নিয়ে জানতে অভিযুক্ত তিন পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। অভিযোগ অস্বীকার করে বিজয়নগর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হাসান জামিল খান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা চেয়ারম্যানের বাবার নামে আদালত কর্তৃক ইস্যুকৃত সাজা পরোয়ানা তামিল করতে তাদের বাড়িতে গিয়েছিলাম। সেদিন চেয়ারম্যানের সঙ্গে আমাদের দেখাই হয়নি। তার বাবাকে আটকানোর কারণে আক্রোশবশত তিনি আমাদের নামে উল্টা-পাল্টা বলছেন।'

উপপরিদর্শক পীযূষ কান্তি দে বলেন, 'হাসান জামিল স্যারের সঙ্গে আপনার কথা হয়েছে। এ বিষয়ে তার বক্তব্য ও আমার বক্তব্য একই।'

স্থানীয় চম্পকনগর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সাব-ইন্সপেক্টর রবিউল ইসলাম বলেন, 'আমরা আমাদের পুলিশ সুপার স্যার ও ওসি স্যারের নির্দেশেই ওয়ারেন্টের আসামি ধরতে চেয়ারম্যানের বাড়িতে গিয়েছিলাম, আসামিকেও ধরেছি। এর বাইরে আমাদের সঙ্গে কোনো ঘটনা ঘটেনি। এখন চেয়ারম্যান আমাদের নামে বানোয়াট অভিযোগ করছেন, যার সবটুকুই মিথ্যা।'

বাবার মামলার বিষয়ে জামাল উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, গ্রামে পুরোনো দলাদলির জেরে বাবার নামে ৪২০ ধারার একটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছিল। পরে তিনি আদালত থেকে জামিন নিয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন বলেন, আমার কাছে কেউ কোনো লিখিত অভিযোগ দেয়নি। পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এ ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা পেলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Comments

The Daily Star  | English
justice system

Can justice be dispensed in an unjust manner?

We must never forget for a moment that rule of law must be practised in its totality, and not through convenient segments.

20h ago