পাটগ্রাম থানায় হামলা চালিয়ে সাজাপ্রাপ্ত ২ আসামি ছিনতাই, ওসিসহ আহত ২০

পুলিশ জানায়, দুর্বৃত্তরা থানার চেয়ার, টেবিল, কম্পিউটার ও ল্যাপটপ ভাঙচুর করে, গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র তছনছ করে, ইট-পাটকেল ছুড়ে থানার জানালার কাঁচ ও দরজা ভেঙে ফেলে।

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম থানায় হামলা চালিয়ে সাজাপ্রাপ্ত দুই আসামিকে ছিনিয়ে নিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এ হামলায় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ (ওসি) অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে দুই পুলিশ সদস্যের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

গতকাল বুধবার রাতের এ হামলার ঘটনা নিয়ে প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্র জানায়, বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ২০০-২৫০ জন একযোগে থানা চত্বরে ঢুকে ভাঙচুর শুরু করে। তারা থানার চেয়ার, টেবিল, কম্পিউটার ও ল্যাপটপ ভাঙচুর করে, গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র তছনছ করে, ইট-পাটকেল ছুড়ে থানার জানালার কাঁচ ও দরজা ভেঙে ফেলে। পুলিশ তাদের বাধা দিলে উভয়পক্ষে সংঘর্ষ হয়।

পাটগ্রাম থানার ওসি মিজানুর রহমান বলেন, 'গুরুতর আহত দুই পুলিশ সদস্যকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আমিসহ ছয়জন পাটগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছি।'

তিনি আরও বলেন, 'দুর্বৃত্তরা পুলিশের কাছ থেকে জোরপূর্বক হাজতখানার তালার চাবি নিয়ে সাজাপ্রাপ্ত দুই আসামি বেলাল হোসেন ও সোহেল রানা চপলকে ছিনিয়ে নেয়।'

তিনি জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ করলেও উত্তেজনা আরও বেড়ে যায়। পরে লালমনিরহাট, হাতিবান্ধা ও কালীগঞ্জ থানা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ, সেনাবাহিনী ও বিজিবি সদস্যরা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

হামলাকারীদের সম্পর্কে ওসি জানান, 'হামলায় জড়িত অনেককে চিনতে পেরেছি। তারা স্থানীয় বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত।'

পুলিশ জানায়, বুধবার সন্ধ্যায় লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়কের সরোরবাজার এলাকায় চাঁদাবাজির সময় বেলাল ও সোহেলকে হাতেনাতে আটক করা হয়। পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উত্তম কুমার দাশ ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাদের প্রত্যেককে এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন।

বেলাল ও সোহেল স্থানীয় শ্রমিক দলের নেতা উল্লেখ করে পুলিশ জানিয়েছে, তাদের মুক্ত করতেই ওয়ালিউর রহমান সোহেলের নেতৃত্বে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা এই সংঘবদ্ধ হামলা চালিয়েছে।

তবে পাটগ্রাম উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ওয়ালিউর রহমান সোহেল এই দাবি অস্বীকার করে বলেন, 'আমি থানায় ছিলাম না। আমাদের কোনো নেতাকর্মীও এই হামলায় জড়িত নন। যাদের আটক করা হয়েছে তারা বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্তই নন।'

তিনি আরও বলেন, 'একটি রাজনৈতিক দল উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিএনপিকে জড়িয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করছে।'

সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে বেলাল হোসেন পাটগ্রাম উপজেলার মমিনপুর গ্রামের লিয়াকত আলীর ছেলে এবং সোহেল রানা চপল মির্জার কোর্ট এলাকার সামসুল হকের ছেলে।

এ ঘটনা প্রসঙ্গে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলীয় মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে রাত ১টার দিকে লিখেছেন, 'বিএনপি নেতাকর্মীরা দীর্ঘদিন ধরে পাটগ্রামে পরিবহন থেকে চাঁদা আদায় করে আসছে। চাঁদাবাজির সময় হাতেনাতে ধরা পড়লে তাদের ছিনিয়ে আনতেই পরিকল্পিতভাবে থানা ঘেরাও, হামলা ও ভাঙচুর করা হয়। হামলাকারীরা পুলিশ সদস্যদেরও মারধর করে।'

লালমনিরহাটের পুলিশ সুপার মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, 'আমি ঘটনাস্থলে আছি। ডিআইজি স্যার ও জেলা প্রশাসক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করছেন। বিস্তারিত পরে জানানো হবে।'

এই ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

15 military officers held in army custody taken to ICT amid tight security

The tribunal is set to review the progress of two cases of enforced disappearance

17m ago