ডেইলি স্টার কার্যালয়ে হামলা-অগ্নিসংযোগ: তদন্ত প্রতিবেদন ২৭ জানুয়ারির মধ্যে জমার নির্দেশ

শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুর খবরে সংঘবদ্ধ উত্তেজিত জনতা দ্য ডেইলি স্টারের ভবনে ঢুকে ভাঙচুর চালায়, এরপর আগুন ধরিয়ে দেয়। তারা ভেতরে আটকে পড়া কর্মীদের উদ্ধারে বাধা দেয় এবং ভবন থেকে মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে যায়। ছবি: স্টার

দ্য ডেইলি স্টার কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আগামী বছরের ২৭ জানুয়ারির মধ্যে জমা দিতে পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকার এক আদালত।

আজ মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট মো. জামশেদ আলম এই আদেশ দেন বলে জানিয়েছেন আদালতের এক কর্মচারী।

এ ছাড়া, এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ৯ জনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তারা হলেন: মো. মাইনুল ইসলাম (২২), জুলফিকার আলী সৌরভ (২২), মো. আলমাস আলী (৩২), মো. জুবায়ের হোসেন (২১), আয়নুল হক কাশেমী (৩০), আব্দুর রহমান পলাশ (৩০), মো. জান্নাতুল নাঈম (২১), মো. কারী মুয়াজবীন আ. রহমান (৩৪) ও মো. ফয়সাল আহমেদ (২৪)। 

দ্য ডেইলি স্টারের অপারেশন বিভাগের প্রধান মিজানুর রহমান গতকাল তেজগাঁও থানায় ৩৫০–৪০০ জন অজ্ঞাত আসামির বিরুদ্ধে এ মামলা করেন।

মামলায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ৬ (১), বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৫ (৩) ও সাইবার নিরাপত্তা অধ্যাদেশের ২৬ (১) ধারা যুক্ত করা হয়েছে।

মামলার বিবরণ অনুযায়ী, গত ১৯ ডিসেম্বর রাত প্রায় ১২টা ২৫ মিনিটে দেশীয় অস্ত্র, লাঠি ও দাহ্য পদার্থ নিয়ে হামলাকারীরা দ্য ডেইলি স্টার ভবনের সামনে জড়ো হয় এবং পত্রিকাটির বিরুদ্ধে উসকানিমূলক স্লোগান দিতে থাকে।

এর আগে কিছু অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উসকানিমূলক পোস্ট দিয়ে লোকজনকে হামলায় অংশ নিতে উৎসাহিত করে।

রাত ১২টা ৩৫ মিনিটের দিকে হামলাকারীরা জোরপূর্বক গেট ও কাচের দরজা ভেঙে ভবনের ভেতরে ঢুকে পড়ে। তারা ভেতরে ঢুকে কর্মীদের মারধর, অফিসের জিনিসপত্র ভাঙচুর, মূল্যবান সামগ্রী লুট এবং আসবাবপত্র ও গুরুত্বপূর্ণ নথিতে আগুন দেয়।

এই হামলায় ২০০টির বেশি কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ক্যামেরা ও প্রিন্টারসহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক যন্ত্র নষ্ট হয়, যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ৫ কোটি টাকা।

এ ছাড়া, বিভিন্ন লকারে রাখা প্রায় ৩৫ লাখ টাকা লুট করা হয়।

হামলাকারীরা ভবনের প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় আগুন ধরিয়ে দেয়, এতে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ ও নথিপত্র মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-সংক্রান্ত হিসাব ও কর নথিও ছিল। অন্য তলাগুলোতেও ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট হয়।

হামলাকারীরা ইচ্ছাকৃতভাবে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা, সেন্ট্রাল এসি, লিফট, বৈদ্যুতিক তার নষ্ট করে এবং বৈদ্যুতিক সাবস্টেশনেও আগুন লাগানোর চেষ্টা করে।

এ ছাড়া, প্রমাণ নষ্ট করার জন্য একাধিক সিসিটিভি ক্যামেরা ও নেটওয়ার্ক রেকর্ডার ধ্বংস করা হয়।

এই ঘটনায় মোট ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৪০ কোটি টাকা, যা পরবর্তী মূল্যায়নের পর আরও বাড়তে পারে।

এই হামলায় সাংবাদিক ও কর্মচারীদের জীবন মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়ে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের যৌথ প্রচেষ্টায় ৩০ জন কর্মীকে উদ্ধার করা হয়।

হামলার কারণে ১৯ ডিসেম্বর দ্য ডেইলি স্টারের ছাপা সংস্করণ প্রকাশ বন্ধ রাখতে হয় এবং অনলাইন কার্যক্রমও ১৭ ঘণ্টা বন্ধ ছিল।

 

Comments

The Daily Star  | English

Farewell

Nation grieves as Khaleda Zia departs, leaving a legacy of unbreakable spirit

9h ago