নির্বাচন সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর করতে ‘বদ্ধপরিকর’ প্রশাসন ও পুলিশ
আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি একই দিনে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের জন্য সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টিতে বদ্ধপরিকর বলে জানিয়েছেন বিভাগীয় কমিশনার ও পুলিশের রেঞ্জ ডিআইজিরা।
নির্বাচনের সময় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষায় অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে কঠোর ব্যবস্থা, সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার, প্রযুক্তির অপব্যবহার রোধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণের কথা জানিয়েছেন তারা।
চিহ্নিত অপরাধীদের ঢালাও জামিন বন্ধ এবং তদন্ত ও গ্রেপ্তারে তদবির বা হস্তক্ষেপ বন্ধ করার ব্যবস্থা নেওয়ার ওপরও জোর দিয়েছেন তারা। প্রয়োজনে পুলিশ ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়ার দাবি জানিয়েছে পুলিশ।
ইসির সঙ্গে সভায় বলছেন, সীমান্তবর্তী এলাকায় ভোটকেন্দ্রগুলো বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। এগুলো তত্ত্বাবধানে আরও নিরাপত্তা দরকার।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর নির্বাচন ভবনের ডিসি, এসপি, রেঞ্জ ডিআইজি, বিভাগীয় কমিশনার ও আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তাদের নিয়ে আয়োজিত এক সভায় এই দাবি জানানো হয়।
সভায় ৫৪ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিতে পুলিশ কাজ করবে বলে বক্তব্য রাখেন ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি রেজাউল করিম মল্লিক। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, 'আমরা সচেষ্ট থাকবো। কোনো দল-মত-গোষ্ঠী নির্বিশেষে কেউ বিঘ্ন সৃষ্টির চেষ্টা করলেও সে সুযোগ থাকবে না। আইনের বাইরে কিছুই করা যাবে না।'
একই দিনে দুটি নির্বাচন বড় একটা চ্যালেঞ্জ হবে জানিয়ে ইসিকে পুলিশ বলছে, নির্বাচনের দিন অসুস্থ, প্রতিবন্ধী লোক ভোট দিতে গেলে পুলিশকে বলা হয় সহযোগিতা করার জন্য। এখানে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির কর্মীদের রাখলে সুবিধা হবে।
একই দিনে দুটি ভোট হওয়ায় সময় একটি চ্যালেঞ্জ হবে মন্তব্য করে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান মুন্সী বলেন, 'এটা নিয়ে একটা অ্যাওয়ারনেস ক্যাম্পেইন করা প্রয়োজন।'
কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার মো. আনিসুজ্জামান বলেন, 'নির্বাচনে প্রচুর অভিযোগ আসে। এসব অভিযোগ আমাদের শুনতে হয়। এসব অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য ম্যাজিস্ট্রেটের সংখ্যা বাড়ানো উচিত। যদি ম্যাজিস্ট্রেট এসব সামলাতে না পারে তাহলে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও পুলিশকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেন।'
খুলনা পুলিশ সুপার এ সময়ে জেলার ভেতরে পুলিশ সদস্য বদলিতে তাদের ক্ষমতায়ন চান।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে খবর, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উদ্দেশ্য প্রণোদিত প্রচারণা চলছে মন্তব্য করেন চট্টগ্রাম পুলিশ রেঞ্জের ডিআইজি আহসান হাবীব পলাশ। তিনি বলেন, 'নেগেটিভ পোর্ট্রে করার চেষ্টা করা হচ্ছে এবং এর ইমপ্যাক্টও নেগেটিভ হচ্ছে। আমরা এটি নিয়ে ভাবছি না। এটা করা হচ্ছে যেন ভোটার টার্নআউটটা কমে যায়।'
অস্ত্র-সীমান্ত নিয়ে সরব প্রশাসন
জেলা প্রশাসকরা (ডিসি) সভায় বলেন, মাঠপর্যায়ে এখনো যে অস্ত্র রয়েছে, দ্রুত সেগুলো রিকভারি করতে আপনাদের (নির্বাচন কমিশনের) সহযোগিতা চাই। দূর অঞ্চলে যাতায়াতের জন্য হেলিকপ্টার দেওয়া দরকার।
জেলা প্রশাসকরা বলছেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে অপতথ্য প্রচার তাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। তারা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করছেন। অনেক উপজেলায় গাড়ি পুড়ে গেছে ৫ আগস্টের পর। সেসব উপজেলায় গাড়ি প্রয়োজন। আবার সীমান্ত জেলাগুলোতে নিরাপত্তা বাড়ানো প্রয়োজন বলেও উল্লেখ করেন তারা।
এ সময়ে তারা দাবি জানান, রাতে যেন স্থানীয় নেতারা অপরাধীদের জন্য তদবির করতে না আসে।
খুলনার বিভাগীয় কমিশনার মো. মোখতার আহমেদ বলেন, 'এই নির্বাচনে চ্যালেঞ্জিং তিন ফ্যাক্টরের মধ্যে প্রথমটি হলো অস্ত্র উদ্ধার। অস্ত্রগুলো উদ্ধার করতে হবে।'
সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার খান মো. রেজা-উন-নবী সীমান্ত অঞ্চলে অস্ত্র উদ্ধার এবং অপরাধ সংগঠনের অপরাধীর পালিয়ে যাওয়া ঠেকাতে বর্ডারে বিজিবির কঠোর নজরদারি ব্যবস্থার আহবান জানিয়েছেন। গোয়েন্দা তথ্যের সমন্বয়ের তাগিদও দেন তিনি।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, 'একটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো অবৈধ অস্ত্রগুলো। এগুলো দ্রুত উদ্ধার করতে আপনাদের সহযোগিতা প্রয়োজন।'

Comments