ঘুষ না দেওয়ায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন, কর্তৃপক্ষ বলছে অভিযোগ ভিত্তিহীন

ছবি: স্টার

ঘুষ না দেওয়ায় ১২ দিন ধরে এক পরিবারের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে রাখার অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি ঘটেছে মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নের শেরপুর গ্রামে।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আজিজুল হায়দার বলেন, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির খুঁটি বসাতে এক লাইনম্যান ১০ হাজার টাকা নেয়। কিন্তু তাতে কাজ হয়নি। পরে বরমচাল অভিযোগ কেন্দ্রের ইনর্চাজ জয়নাল আবেদীন ১০ হাজার টাকা দাবি করেন। আমি খুঁটির জন্য ৫ হাজার টাকা দেই। আরও ৫ হাজার টাকা না দেওয়ায় গত ২৮ আগস্ট লাইন বিচ্ছিন্ন করতে আসে। এতে আমার অসুস্থ মা মাহমুদা খানম বাধা দিলে জয়নাল আবেদীন রাগান্বিত হয়ে মাকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেয়। ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে জয়নাল আবেদীন তার হাতে থাকা প্লাস দিয়ে আমার মায়ের আঙ্গুলে আঘাত করেন।

আজিজুল হায়দার বলেন, আমার মা একজন ডায়বেটিস, হার্ট ও পেসারের রোগী। বিল পরিশোধ করলেও ১২ দিন ধরে বিদ্যুৎ সংযোগ পুনঃস্থাপন করা হয়নি। বিদ্যুৎ না থাকায় আমার মায়ের পায়ের হাঁড় ক্ষয় ও কোমরের হাঁড় ক্ষয়ের জন্য থেরাপি এবং শ্বাস কষ্টের জন্য নেবুলাইজার (গ্যাস) দিতে পারছি না। ব্যক্তিগত আক্রোশের কারণে একজন গ্রাহকের বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করার পরও কোন আইনে গত ১২ দিন ধরে আমাদের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রাখা হয়েছে সেটা জানতে চাই। দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগের দাবি জানাচ্ছি।

আজিজুল হায়দার জানান, তিনি পরিশোধকৃত বিদ্যুৎ বিলের কপি নিয়ে কুলাউড়া পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে এজিএম এম নাজমুল হক তারেককে দেখান। তখন নাজমুল হক তারেক বিচ্ছিন্নকৃত বিদ্যুৎ লাইন পুনরায় সংযোগ করে দেবেন বলে ২০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন। এসময় ঘুষের টাকা না দেওয়ার অপারগতা প্রকাশ করলে নাজমুল হক তারেক আমার মিটারের লাইন সংযোগ করে দিবেন না বলে হয়রানী ও মামলার হুমকি প্রদান করেন।

সংবাদ সম্মেলনে আজিজুল হায়দারের মাতা মাহমুদা খানম ও বড়ভাই লুৎফুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

ভুক্তভোগী আজিজুল হায়দার জানান, এ ঘটনায় গত ৪ সেপ্টেম্বর মৌলভীবাজার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৫ নম্বর আমলী আদালতে এজিএম নাজমুল হক তারেক ও ইনর্চাজ জয়নাল আবেদীনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। এছাড়া শ্রীমঙ্গল পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার বরাবরে ওই ২ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আরেকটি লিখিত অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীর পরিবারের সদস্য লুৎফুর রহমান। যার অনুলিপি জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর পাঠানো হয়েছে।

অভিযুক্ত পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি বরমচাল অভিযোগ কেন্দ্রের ইনর্চাজ জয়নাল আবেদীন বলেন, ঘুষ চাওয়ার বিষয়টি ভিত্তিহীন। বকেয়া বিল থাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে এবং আমাকে মারধর করা হয়েছে।

১২ দিন ধরে গ্রাহককে কেন বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে সেবা থেকে বঞ্চিত করেছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়ার এখতিয়ার আমার নেই। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে পারেন।

কুলাউড়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির এজিএম এম নাজমুল হক তারেক বলেন, ওই গ্রাহকের ভাই আমাদের কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীনকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছেন। এ ঘটনায় আমরা মামলা করেছি। আমাদের কর্মকর্তাকে মারধর করার কারণে বিষয়টির নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আমরা বিদ্যুৎ সংযোগ দেব না।

শ্রীমঙ্গল পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী মো. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, এ বিষয়ে অবগত হয়েছি। এখানে অনিয়মের কোনো সুযোগ নেই। তদন্ত কমিটি গঠন করে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান বলেন, বিষয়টি খোঁজ নিয়ে গুরুত্বসহকারে খতিয়ে দেখা হবে।  

Comments

The Daily Star  | English

Ocean of mourners gather to pay tribute to Khaleda Zia

People from all walks of life arrive by bus, train and other modes of transport

2h ago