ঈদযাত্রায় এবারও বঙ্গবন্ধু সেতুর উভয় প্রান্তে যানজট-ভোগান্তির আশঙ্কা

ঈদযাত্রায় এবারও বঙ্গবন্ধু সেতুর উভয় প্রান্তে যানজট-ভোগান্তির আশঙ্কা
এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ড থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু অভিমুখে রাস্তা প্রশস্ত করণের কাজ চলছে। মির্জা শাকিল/স্টার

এবারও সড়ক পথে ঈদ যাত্রায় সুখবরের আশা নেই দেশার উত্তরাঞ্চলের মানুষের। প্রতি বছরের মতো এবারও বঙ্গবন্ধু সেতুর উভয় প্রান্তে সম্ভাব্য যানজট-ভোগান্তির আশঙ্কা করছেন যাত্রী, পরিবহন শ্রমিক ও সংশ্লিষ্টরা। এ ছাড়া যানজট হবে না এমন নিশ্চয়তা দিতে পারেনি কতৃপক্ষ।

প্রতিবছর ঈদের আগে-পরে যানজটে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় কয়েক লাখ মানুষকে। 

হাইওয়ে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, উত্তরের প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত এই মহাসড়ক দিয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় প্রতিদিন ২৬টি জেলার কমপক্ষে ১১৬টি রুটের ১৮ থেকে ২০ হাজার যানবাহন চলাচল করে। তবে ঈদের আগে সেটা বেড়ে ৫০ থেকে ৬০ হাজার পর্যন্ত হয়। ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত যানবাহনের কারণে সৃষ্টি হয় প্রচণ্ড যানজটের। 

ওই সড়কে নিয়মিত চলাচলকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সড়ক দুর্ঘটনা, রাস্তায় যানবাহন বিকল হয়ে পড়া, ট্রাফিক আইন অমান্য করে চালকদের বেপড়োয়া গাড়ি চালনা ও প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণেও স্বাভাবিক যানচলাচল বাধাগ্রস্ত হয়।

মির্জা শাকিল/স্টার

জানা গেছে, গাজীপুরের চন্দ্রা থেকে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা পর্যন্ত ৫৫ কিলোমিটার নতুন মহাসড়কে মুটামুটি স্বাচ্ছন্দেই গাড়ি চলতে পারে। কিন্তু ৪ লেন মহাসড়ক দিয়ে এসে এলেঙ্গার পর থেকে বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব প্রান্ত পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার এলাকা ২ লেনের সড়কে প্রবেশের পর শ্লথ হয়ে যায় যানবাহনের গতি। সৃষ্টি হয় যানজট।

বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্বপাড় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, যানজট যাতে সৃষ্টি না হতে পারে সে জন্য এ বছরও সেতুর পূর্ব লিংক রোডে গাড়ির চাপ কমাতে প্রয়োজনে বিকল্প হিসেবে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর লিংক রোড দিয়ে গাড়ি বাইপাস করে দেবেন।

তিনি আরও বলেন, 'মালবাহী গাড়িগুলো ধীরে চলে, আর দ্রুতগামী গাড়িগুলো তাকে ওভারটেক করতে চায়। আর ওভারটেক যানজটের আরেকটি কারণ। তাই সেরকম পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে আমরা মালবাহী গাড়িগুলো ভূঞাপুর দিয়ে বাইপস করে দেবো।'

এদিকে ব্যস্ততম এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ডের ফুট ওভারব্রিজটি সরিয়ে ফেলা হয়েছে। ফলে সেখানে মহাসড়কে যানবাহন থামিয়ে মানুষ রাস্তা পারাপার হচ্ছে। এতে যানজট বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।

এলেঙ্গা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ জাহিদ হাসান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'তাদের না জানিয়ে, কোনো আলাপ-আলোচনা ছাড়াই এলেঙ্গার জরাজীর্ণ ফুটওভারব্রিজটি সরিয়ে ফেলেছে সড়ক বিভাগ। ফলে ঈদে এই জায়গায় রাস্তা পারাপার এবং যানচলাচল স্বাভাবিক রাখতে হিমসিম খেতে হবে। গাড়ি থামিয়ে রাস্তা পারাপার করাতে হবে। এতে যানজট বাড়তে পারে।'

গতকাল শুক্রবার সরেজমিনে দেখা যায়, এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ড থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু অভিমুখে রাস্তা চওড়া করার কাজ চলছে। 

এ বিষয়ে সাউথ এশিয়া সাব রিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশন (সাসেক-২) প্রকল্পের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আব্দুল মোমেন লিমিটেডেরে প্রজেক্ট ম্যানেজার মো. রবিউল আউয়াল দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ড থেকে ভূঞাপুর লিংক রোড পর্যন্ত ১২০০ মিটার রাস্তা প্রশস্তকরণের কাজ ঈদের আগেই শেষ হবে। এতে এই স্থানে স্বাচ্ছন্দ্যে যানবাহন চলতে পারবে।  

ঢাকা থেকে গাইবান্ধা রুটের বাস চালক মো. বাবু মিয়া সড়কের নির্মাণ কাজ দেখিয়ে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ওই যে ওইটুকুই। এলেঙ্গায় এই একটুখানি রাস্তা চওড়া করার চলমান কাজটি ছাড়া আর কোথাও কিছু করা হয়নি। সব কিছু আগের ঈদের মতোই আছে। তাই মনে হচ্ছে এবারও একই রকম যানজট হবে।'  

বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম প্রান্ত থেকে সিরাজগঞ্জ অংশে হাটিকুমরুল মোড় পর্যন্ত ২২ কিলোমিটার রাস্তায় ৪ লেনের কাজ চলায় এবারও এখানে যানজটের যথেষ্ঠ সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান বাবু। তিনি বলেন, 'পশ্চিম প্রান্তের সড়কে এই অবস্থায় স্বাভাবিক গতিতে গাড়ি চালানো যাবে না।' 

বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম পাড় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রওশন ইয়জদানী ডেইলি স্টারকে জানান, সেতুর পশ্চিম প্রান্ত থেকে হাটিকুমরুল পর্যন্ত প্রায় ২০টি পয়েন্টে কিছু কিছু সমস্যা রয়েই গেছে। যা ঈদের আগে আর সমাধান করা সম্ভব হবে না। এ ছাড়া এ পথে সেতু থেকে ৭ কিলোমিটার পরে ঝাওয়াইল নামে একটি ব্রিজ আছে সেখানে গাড়ির গতি শ্লথ হয়ে যেতে পারে। 

তিনি বলেন, 'এরপরও যদি বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে এক লেনেই গাড়ি পশ্চিমে যায়, যদি গতবারের মতো পূর্ব প্রান্তের চাপ কমাতে সেতু দিয়ে পশ্চিম অভিমুখে ২ লেনেই গাড়ি পার করার চেষ্টা করা না হয়, আশা করছি যানজট হবে না।'

নীলফামারীর ডিমলার কাওসার আহম্মেদ ঢাকার একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করেন। তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গ্রামে মা-বাবা, ভাই-বোন ছাড়াও আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বা্ন্ধব রয়েছে। সারা বছরে ওই ২ ঈদেই তিনি বাড়ি যান। কিন্তু যমুনা সেতুর কাছে যানজটের কষ্ট যেন মাফ নেই। আশাকরি কতৃপক্ষ ব্যবস্থা নেবে, যাতে ভোগান্তি ছাড়াই বাড়ি যেতে পারি।'

টাঙ্গাইলের ট্রাফিক ইনস্পেক্টর (প্রশাসন) দেলোয়ার হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ঈদের সময় অনেক আনফিট গাড়ি রাস্তায় নামে। তারা জানে  এ সময় ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি থামিয়ে তাদের নামে মামলা দিতে পারবে না। এ ছাড়া ঈদের ঠিক আগে এক সঙ্গে গার্মেন্টসগুলো ছুটি দিলে শ্রমিকরা খোলা ট্রাকে সহ যে যেভাবে পারেন বাড়ির পথে রওনা হয়ে যান। এ ক্ষেত্রে গার্মেন্টস কতৃপক্ষের উচিত হবে পরিকল্পিতভাবে পর্যায়ক্রমে ছুটি দেওয়া।'

এদিকে ঈদ সামনে রেখে সড়ক পথে উত্তরাঞ্চলের মানুষের ঘরে ফেরা নির্বিঘ্ন করতে টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সারের সভাপতিত্বে তার কার্যযালয়ে ২৯ মার্চ এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। 

সভায় পুলিশ সুপার সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন, সার্ভিস লেনে চলাচলকারী থ্রি হুইলারসহ ছোট যানবাহনগুলো যেন মহাসড়কে উঠতে না পারে। এ ছাড়া তিনি জানান, মানুষ যাতে নির্বিঘ্নে বাড়ি ফিরতে পারে সেজন্য মহাসড়কে ৭ শতাধিক পুলিশ দায়িত্ব পালন করবে।
  

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh alleges border abuse by BSF

Those pushed-in allege torture, abuses in India

A Bangladeshi woman has alleged that India’s Border Security Force (BSF) tied empty plastic bottles to her and her three daughters to keep them afloat, then pushed them into the Feni river along the Tripura border in the dark of night, in a chilling account of abuse at the border.

6h ago