চবির সদ্যবিদায়ী উপাচার্য শিরীণ আখতারের পায়ে লুটিয়ে পড়েন ছাত্রলীগ নেতা

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্যবিদায়ী উপাচার্য শিরীণ আখতারের পায়ে লুটিয়ে পড়েন ছাত্রলীগ নেতা মইনুল ইসলাম। ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) সদ্য সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতারের পায়ে লুটিয়ে পড়েন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের এক নেতা। ঘটনার একটি সিসিটিভি ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে 'চাকরির জন্য' ছাত্রলীগের এই নেতা এমন কাজ করেছেন বলে ক্যাম্পাসে আলোচনা চলছে। তবে ছাত্রলীগের এই নেতা দ্য ডেইলি স্টারের কাছে দাবি করেছেন যে, চাকরির জন্য নয় বরং ২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি চবি উপাচার্যের কার্যালয়ে ভাঙচুরের ঘটনায় তার বিরুদ্ধে চলমান তদন্ত বন্ধের অনুরোধ করতে তিনি অধ্যাপক শিরীণ আখতারের পায়ে পড়েছিলেন।

সূত্র জানায়, গত ১৯ মার্চ সকাল ৮টার দিকে বন্দর নগরীতে অধ্যাপক শিরীণ আখতারের বাসার নিচতলায় এ ঘটনা ঘটে। চবি উপাচার্য হিসেবে শেষ কর্মদিবসের দায়িত্ব পালন করতে সেসময় ক্যাম্পাসে যাচ্ছিলেন।

লিফট থেকে বের হওয়ার সময় চবি ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি মইনুল ইসলামকে উপাচার্যের পায়ে পড়ে কিছু একটা অনুরোধ করতে দেখা যায়, তবে অধ্যাপক শিরীণ চিৎকার করে সরে যান। ভিডিও ফুটেজে চবি শাখা ছাত্রলীগের আরও দুই নেতা সাবেক সহ-সভাপতি মজিবুর রহমান ও কে এম রোমেল হোসেনকেও সেখানে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।

অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার গাড়িতে উঠে যাওয়ার পরও গাড়ি সামনে গিয়ে দাঁড়ান ছাত্রলীগ নেতারা। ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

অধ্যাপক শিরীণ যখন গাড়িতে উঠেন এবং গাড়িটি ড্রাইভওয়ের বাইরে যেতে শুরু করে, তখন ছাত্রলীগ নেতাদের গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে দুই মিনিটের জন্য তাদের কথা শোনার অনুরোধ করতে দেখা যায়। তবে শেষ পর্যন্ত অধ্যাপক শিরীণ গাড়ি থেকে না নেমে দ্রুত স্থান ত্যাগ করেন।

সেদিনই অধ্যাপক শিরীণ কোনো সার্কুলার ও পরীক্ষা ছাড়াই চবিতে দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে মোট ৩৭ জন কর্মচারী নিয়োগ দেন, যা গণমাধ্যমে প্রকাশের পর সারাদেশে ব্যাপক সমালোচিত হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগ নেতা মইনুল চাকরির জন্য অধ্যাপক শিরীণের পায়ে পড়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন।

তিনি বলেন, '২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি চবি ভিসি অফিসে ভাঙচুরের ঘটনায় আমার বিরুদ্ধে চলমান তদন্ত বন্ধের জন্য ভিসি ম্যাডামকে অনুরোধ করতে সেখানে গিয়েছিলাম।'

'মেরিন সায়েন্স ইনস্টিটিউটে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে ২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি ভিসি অফিসে ভাঙচুরের একটি ঘটনা ঘটেছিল... চবি সিন্ডিকেট ছাত্রলীগের সাবেক কর্মী স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত একজন প্রার্থীকে নিয়োগ না দিয়ে কম যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থীকে নিয়োগ দেয়। তাই ছাত্রলীগের কর্মীরা তখন বিক্ষুব্ধ ছিল। পরে আমাকে ঘটনার প্রধান আসামি করা হয় এবং ৫৪১তম সিন্ডিকেট সভায় ঘটনা তদন্তের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়।'

মইনুল বলেন, 'আমি ভিসি ম্যাডামকে কয়েকবার অনুরোধ করেছিলাম অভিযোগ থেকে আমার নাম বাদ দিতে, কিন্তু তিনি তা করেননি।'

অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার গাড়ির জানালা খুলে ছাত্রলীগ নেতাদের কথা শুনছেন। ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

'যেহেতু ভিসি হিসেবে এটি তার শেষ কর্মদিবস ছিল, আমি একই অনুরোধ নিয়ে তার বাসায় গিয়েছিলাম। আমি তাকে আমার বিরুদ্ধে তদন্ত বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করেছিলাম, কারণ এটি পরবর্তীতে আমার পেশাগত ক্যারিয়ারকে বাধাগ্রস্ত করবে', যোগ করেন তিনি।

মইনুল জানান, অনুরোধ করার একপর্যায়ে তিনি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন এবং অধ্যাপক শিরীণ অনুরোধে কর্ণপাত না করায় তার পায়ে পড়ে যান।

মইনুলের দাবি, তিনি কখনো চবিতে চাকরির জন্য আবেদন করেননি।

সেখানে উপস্থিত ছাত্রলীগ নেতা মজিবুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনিও একই কথা বলেন।

'রোমেল ও আমি সেখানে গিয়েছিলাম, কারণ আমাদের বন্ধু মইনুল বলেছিল যে, তার বিরুদ্ধে চলমান তদন্ত বন্ধের অনুরোধ নিয়ে ভিসি ম্যাডামের বাসায় যাবে। আমাদের অন্য কোনো উদ্দেশ্য ছিল না… মইনুল, রোমেল বা আমি, আমরা কেউই চবিতে কোনো চাকরির পদে প্রার্থী ছিলাম না', বলেন তিনি।

মজিবুর আরও বলেন, 'আমি মইনুলের বন্ধু হিসেবে সেখানে গিয়েছিলাম।'

এ বিষয়ে চবি ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রেজাউল হক রুবেল বলেন, 'অধ্যাপক শিরীণের বাসায় যাওয়া মইনুল ও আরও দুজন আমার কমিটিতে চবি ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ছিলেন। তারা যা করেছে তা সম্পূর্ণরূপে অগ্রহণযোগ্য।'

'সাবেক ভিসি অধ্যাপক শিরীণ চবিতে নিয়োগের ব্যবসা খুলে বসেছিলেন, যা আমরা সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া বিভিন্ন অডিও ক্লিপের মাধ্যমে জানতে পেরেছি। এরই ধারাবাহিকতায় কিছু ছাত্রনেতা ভেবেছিলেন যে, এটি একটি সুযোগ যেভাবেই হোক একটা চাকরি বাগিয়ে নেওয়ার', বলেন তিনি।  

রেজাউল আরও বলেন, 'যেহেতু ভিসি হিসেবে অধ্যাপক শিরীণের শেষ কার্যদিবস ছিল সেদিন, তাই মইনুল হয়তো ভেবেছিলেন এটাই শেষ সুযোগ এবং তাই তিনি মরিয়া হয়ে উপাচার্যের পায়ে পড়েন, যা একজন ছাত্রনেতা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে তার জন্য লজ্জাজনক।'

মইনুলের বিরুদ্ধে তদন্ত বন্ধের অনুরোধ নিয়ে অধ্যাপক শিরীণের বাসায় যাওয়ার দাবি সম্পর্কে রেজাউল বলেন, 'এটা যদি সত্য হয়, তবে কেন তিনি অধ্যাপক শিরীণের শেষ কার্যদিবস বেছে নিলেন? তিনি তো এই ঘটনা ঘটার পর অনেক সময় পেয়েছিলেন ভিসিকে কনভিন্স করার। কেন এতদিন তিনি সেটা করেননি? কেন তাকে ভিসির শেষ কর্মদিবসকে বেছে নিতে হলো?' 
  
তিনি বলেন, 'মইনুল এরকম একটি লজ্জাজনক কাজ করে ছাত্রলীগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে।'

এ বিষয়ে জানতে অধ্যাপক শিরীণের ফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

Comments

The Daily Star  | English

BNP sticks to demand for polls by December

In a meeting with Chief Adviser Prof Muhammad Yunus last night, the BNP restated its demands that the next general election be held by December and the government immediately announce a roadmap to that end.

1h ago