মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ খুলনাবাসীর ‘মশারি মিছিল’

মশার উপদ্রবে অতিষ্ট খুলনাবাসীর মশারি মিছিল। ছবি: হাবিবুর রহমান

মশার উপদ্রব চরম আকার ধারণ করায় ব্যতিক্রমী প্রতিবাদে নেমেছেন খুলনার নাগরিক সমাজ। আজ শনিবার খুলনা নগরীর পিকচার প্যালেস মোড়ে সমাবেশ করে বের করা হয় 'মশারি মিছিল'। মিছিলটি হাদিস পার্ক থেকে শুরু হয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক মোড় ঘুরে আবার হাদিস পার্কে গিয়ে শেষ হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা, পরিবেশকর্মী, শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এ মিছিলে অংশ নেন। কেউ মাথার ওপর মশারি ধরে, কেউ আবার গায়ে জড়িয়ে নগরীর প্রধান সড়কে মিছিল করেন। স্লোগান দেন--'মশার রাজত্ব চলবে আর কত?', 'আমরা করব কী, মশা যদি না মরে?', 'সিটি করপোরেশন, জবাব দাও!'

নগরবাসীর অভিযোগ, খুলনার বিভিন্ন এলাকায় মশার উপদ্রব ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। মশা নিধন কার্যক্রম অপ্রতুল, নিয়মিত লার্ভিসাইড স্প্রে করা হয় না। জলাবদ্ধতা ও অপরিচ্ছন্ন ড্রেনের কারণে মশা বংশবিস্তার করছে।

নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট বাবুল হাওলাদার বলেন, 'মশারি মিছিল মূলত প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য আয়োজন করা হয়েছে। আমাদের এই প্রতিবাদে যদি দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়, তবে নগরবাসী উপকৃত হবে।' তিনি আরও বলেন, 'সম্প্রতি খুলনায় ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ বেড়েছে। কিন্তু খুলনা সিটি করপোরেশন যথেষ্ট আন্তরিকতার সঙ্গে মশা নিধনে কার্যকর ভূমিকা রাখছে না।'

নাগরিক নেতা মাহবুবুর রহমান মুন্না বলেন, 'দৌলতপুর, খালিশপুর, শিববাড়ি, গল্লামারী, বসুপাড়া, মুজগুন্নীসহ বিভিন্ন এলাকায় মশার উৎপাত ব্যাপকভাবে বেড়েছে। সন্ধ্যা নামতেই অসহনীয় হয়ে উঠছে মশার উপদ্রব।'

১৬ নম্বর ওয়ার্ডের ভাঙ্গা গেট এলাকার বাসিন্দা শরিফুল ইসলাম সেলিম বলেন, 'গরমের শুরুতেই মশার উপদ্রব বেড়ে স্বাভাবিক জীবন ব্যাহত হচ্ছে। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আশপাশে প্রচুর ঝোপঝাড় থাকায় সেখানে মশার নিরাপদ আবাস গড়ে উঠেছে। মাঝে মাঝে সিটি করপোরেশনের মশা নিধন কার্যক্রম দেখা গেলেও তা পর্যাপ্ত নয়।'

তিনি আরও বলেন, 'শুধু খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রোগীদের স্বজনেরা যে পরিমাণে মশার কয়েল কেনেন, তাতেই বোঝা যায় মশার উপদ্রব কতটা। কোটি কোটি টাকা ব্যয় করেও কেন এই সমস্যার সমাধান করা যাচ্ছে না, তা আমরা বুঝতে পারি না।'

সরকারি হিসাব অনুযায়ী, ২০২৪ সালে খুলনায় কয়েক শ ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়, যাদের অনেকে মারাত্মক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হন। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর ৭০৭ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হন, এর মধ্যে পাঁচজনের মৃত্যু হয়। এছাড়া অন্যান্য সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল মিলিয়ে মোট ভর্তি রোগী সংখ্যা ১,৩৩৩ জন, এর মধ্যে মৃত্যু হয় ১৭ জনের।

চলতি বছর খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এখন পর্যন্ত ১৪ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন, যাদের মধ্যে দুজন মারা গেছেন।

খুলনা সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মো. আব্দুল আজিজ বলেন, 'আমরা মশা নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি। নিয়মিত ফগিং কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে এবং প্রতিটি ড্রেনে ওষুধ ছিটানো হচ্ছে।'

এদিকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক মো. মিজানুর রহমান বলেন, 'গরমের শুরু থেকেই মশাবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে রোগীরা হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। কর্তৃপক্ষ যদি দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা না নেয়, তবে ডেঙ্গুর প্রকোপ আরও বাড়তে পারে এবং জনস্বাস্থ্য বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে।'

Comments

The Daily Star  | English

Officials for polls duty: BNP to oppose hiring from select entities

Party will ask EC not to pick people from Islami Bank, Al-Arafah Islami Bank, Islami Bank Hospital, Ibn Sina Trust

9h ago