এক্সপ্লেইনার

‘না’ ভোট ফিরছে, আবার ফিরছে না

নির্বাচনে কোনো প্রার্থীকেই ভোট দেওয়ার উপযুক্ত মনে না করলে একজন ভোটার কী করবেন? তিনি কি ভোট দিতে পারবেন না? তার মতামতের কি গুরুত্ব থাকবে না? এসব প্রশ্নের উত্তর ছিল 'না' ভোট। অর্থাৎ কোনো আসনে 'না' ভোট বেশি পড়লে ওই আসনে আবার নির্বাচন হবে।

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে 'না' ভোট দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছিল। নির্বাচন কমিশন থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী সেবার সারা দেশে না-ভোট পড়েছিল মোট ৩ লাখ ৮১ হাজার ৯২৪টি, যা মোট ভোটারের শূন্য দশমিক ৫৫ শতাংশ। তবে সেবার কোনো আসনেই সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটার 'না' ভোট দেয়নি।

২০০৮ সালের 'না' ভোটের সঙ্গে ২০২৬-এর 'না' ভোটের পার্থক্য

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর ও সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়েছে। এই তিনটি নির্বাচনে না-ভোটের সুযোগ ছিল না।

এর মধ্যে ২০১৪ সালের বিতর্কিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০টি আসনের মধ্যে ১৫৩টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থীরা বিজয়ী হন। ২০১১ সালে তত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে দেওয়া হলে বিএনপিসহ অনেকগুলো দল প্রতিবাদ জানিয়ে নির্বাচন বর্জন করে। বিতর্কিত ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ১২৭টি আসনে জয়লাভ করে।

ভবিষ্যতে যেন কেউ এভাবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে না পারেন সেই উদ্দেশ্য থেকেই এবার 'না' ভোট ফিরিয়ে আনা হচ্ছে।

তবে আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কিছুটা ভিন্ন আঙ্গিকে ফিরছে না-ভোট। সোমবার আগারগাওয়ের নির্বাচন কমিশন ভবনে নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, যদি কোনো আসনে একজন প্রার্থী থাকে, তাকে বিনা ভোটে নির্বাচিত ঘোষণা করা হবে না। কোনো আসনে যদি একজন মাত্র প্রার্থী হন তাহলে তাকেও নির্বাচনে যেতে হবে। তার বিপক্ষে 'না' প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। সেখানে পুনরায় ভোটে 'না' বিজিত হলে আর ভোট হবে না। তখন ব্যক্তি প্রার্থী বিবেচিত হবেন।

অর্থাৎ, আগামী নির্বাচনে সার্বিকভাবে সব আসনে ভোটাররা 'না' ভোট দিতে পারবেন না। কোনো আসনে মনোনয়নপত্র যাচাইয়ের পর শুধুমাত্র একজন যোগ্য প্রার্থী পাওয়া গেলেই কেবলে সেখানে ব্যালটে 'না' ভোট রাখা হবে।

নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচনে মোট ৩৮টি দল অংশ নেয়। এর মধ্যে ৩৩টি দলের পাওয়া ভোটের হারের তুলনায় 'না' ভোট বেশি পড়েছিল। অর্থাৎ, 'না' ভোটকে কোনো রাজনৈতিক দল হিসেবে বিবেচনা করা হলে র‍্যাংকিংয়ে এর অবস্থান হতো ষষ্ঠ।

নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের অভিজ্ঞতা

২০০৮-এর নির্বাচনের ৩০০ আসনের ফলাফল থেকে দেখা যায় একমাত্র পার্বত্য রাঙ্গামাটি ছাড়া আর কোনো আসনেই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভোটার 'না' ভোট পড়েনি, যাতে ফলাফল প্রভাবিত হতে পারে।

এক শতাংশের বেশি 'না ভোট' পড়েছে এমন সংসদীয় আসনগুলো হলো—রংপুর-৩ (১.২০%), যশোর-৩ (১.০৩%), খুলনা-২ (১.১০%), ঢাকা-৫ (১.৪১%), ঢাকা-৬ (১.৯৫%), ঢাকা-৭ (১.৫৭%), ঢাকা-৮ (২.৪৪%), ঢাকা-৯ (১.৩১%) ঢাকা-১০ (১.৬৩%), ঢাকা-১১ (১.৫২%), ঢাকা-১২ (২.১৩%), ঢাকা-১৩ (৩.০২%) ঢাকা-১৪ (২.৪০%), ঢাকা-১৫ (১.৮০%) ঢাকা-১৬ (১.৬৩%), ঢাকা-১৭ (২.৬৩%), ঢাকা-১৮ (১.৪২%), নারায়ণগঞ্জ-৫ (১.৫৪%), গোপালগঞ্জ-১ (১.২২%), গোপালগঞ্জ-২ (১.২৭%)।

পার্বত্য রাঙ্গামাটি আসনে 'না ভোটের' হার ছিল সর্বোচ্চ ৯.৬৬%। সেখানে ৩২ হাজারের বেশি ভোটার 'না ভোট' দিয়েছিলেন।

Comments

The Daily Star  | English
Yunus, Charter, and Our Future

Yunus, Charter, and Our Future

Can the vision for 'New Bangladesh' ignore the poor, farmers, workers, youth, women, or employment and climate crises?

3h ago