গত ৩ নির্বাচনে ‘কমান্ডিং’ পুলিশ কর্মকর্তাদের ভূমিকা যাচাই হচ্ছে

পুলিশের ভাতা বৃদ্ধি

গত তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় 'কমান্ডিং রোলে' থাকা রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী পুলিশ কর্মকর্তাদের শনাক্ত করা হচ্ছে। আগামী ফেব্রুয়ারির নির্বাচনকে সামনে রেখে বিতর্কিত পুলিশ কর্মকর্তাদের শনাক্ত করার প্রক্রিয়ায় গতি আনা হয়েছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের সূত্র জানিয়েছে, পরিদর্শক থেকে ডিআইআইজি পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। গত তিন নির্বাচনে দলনেতা হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তাদের আগামী নির্বাচনে দায়িত্ব দেওয়া হবে না।

পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেছেন, তাদেরকে এরই মধ্যে কঠোর যাচাই-বাছাইয়ের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। শুধু নিজেদের রাজনৈতিক মতাদর্শই নয়, নিকটাত্মীয়দের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নিয়েও প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছে তাদেরকে।

যোগাযোগ করা হলে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম বলেন, গত তিনটি নির্বাচনে যারা 'কমান্ডিং রোলে' ছিলেন, তাদের আসন্ন নির্বাচনে কোনো দায়িত্ব দেওয়া হবে না। তিনি গত ১ সেপ্টেম্বর দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আশা করছি, ডিসেম্বরের মধ্যে যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া শেষ করতে পারব।'

নির্বাচনের প্রস্তুতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'প্রায় দুই লাখ পুলিশ সদস্যের মধ্যে প্রায় দেড় লাখ সদস্যকে নির্বাচন পরিচালনায় সহায়তা করার জন্য প্রয়োজন হতে পারে।'

তিনি আরও বলেন, আগামী ৭ সেপ্টেম্বর থেকে ঢাকায় পুলিশের নির্বাচনী প্রশিক্ষণ শুরু হবে। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি তা শেষ হতে পারে। একই সময়ের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্রের তালিকাও তৈরি করা হবে বলে জানান তিনি।

অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী সংসদ নির্বাচন ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পুলিশের মনোবলে ঘাটতির কারণে এই নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা ঠিক রাখা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে।

আগের নির্বাচনগুলোতে বিতর্কিত ভূমিকার কারণে বাহিনীর বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নের মুখে পড়েছিল। অনেক পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পক্ষপাতমূলক ভূমিকা পালন এবং নির্বাচনের আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভরতে সহায়তার অভিযোগ উঠেছিল।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে ২০০ জনেরও বেশি কর্মকর্তাকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে বা বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে, যারা গত তিনটি নির্বাচনে কমান্ডিং পদে ছিলেন। এই সময়ে প্রায় ১৫ হাজার জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই কনস্টেবল। এতে পুলিশ সদস্যের মোট সংখ্যা ১ লাখ ৯৩ হাজারে দাঁড়িয়েছে।

২০২৪ সালের নির্বাচনে সারা দেশে প্রায় ১ লাখ ৭৪ হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছিল, যেখানে ২০১৮ সালের নির্বাচনে এই সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৭০ হাজার। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলেছেন, জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধারে বাহিনীটি ১৯৯১, ২০০১ এবং ২০০৮ সালের নির্বাচনে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালনের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাবে।

যাচাই-বাছাই

গত মাসে পুলিশ সদর দপ্তর সারা দেশের সব ইউনিটকে পুলিশ কর্মকর্তাদের পটভূমি, গণ-অভ্যুত্থানের সময় তাদের ভূমিকা এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের রেকর্ড পরীক্ষা করার নির্দেশ দেয়।

ডিএমপির ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড অ্যানালাইসিস বিভাগ ৩০ জুলাই পুলিশের সব ইউনিটকে একটি চিঠি পাঠায়। এতে এসআই এবং এএসআই পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের বিস্তারিত তথ্য এবং তাদের পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়স্বজনের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার তথ্য সংগ্রহ করতে বলা হয়। এই চিঠির একটি অনুলিপি ডেইলি স্টারের হাতে এসেছে।

কোনো তথ্য গোপনের চেষ্টা করা হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে চঠিতে সতর্ক করা হয়েছে।

যাচাই-বাছাইয়ের মধ্য দিয়ে যাওয়া বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা বলেছেন, মূল্যায়নকারীদের কিছু প্রশ্ন তাদের কাছে 'বিব্রতকর' মনে হয়েছে। ডিএমপির একজন পরিদর্শক বলেন, আগস্টের শুরুতে তিনি স্পেশাল ব্রাঞ্চ (বিশেষ শাখা) থেকে একটি ফোন কল পান।

তিনি বলেন, 'জিজ্ঞাসাকারী আমার শ্বশুরবাড়ির ঠিকানা জানতে চান এবং চাচা-খালাসহ অন্যান্য আত্মীয়দের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা সম্পর্কে জানতে চান।' ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, 'চাকরির ২০ বছর পর আত্মীয়স্বজন সম্পর্কে এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে আমি বিব্রত বোধ করেছি।' তিনি যোগ করেন, নির্বাচনের আগে যাচাই-বাছাই নতুন কিছু নয়, তবে অতীতে কখনো এমন প্রশ্ন করা হয়নি।

নারায়ণগঞ্জের একজন পরিদর্শক জানান, প্রায় দেড় মাস আগে জেলা বিশেষ শাখা (ডিএসবি) তার ব্যাপারে যাচাই-বাছাই করে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই পরিদর্শক বলেন, 'ডিএসবি আমার আগের কর্মস্থল এবং অতীতের নির্বাচনগুলোতে কমান্ডিং অফিসার হিসেবে আমার ভূমিকা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছে।'

নতুন সরঞ্জাম ও যানবাহন পাচ্ছে পুলিশ

আইজিপি বাহারুল আলম জানান, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে পুলিশ জানুয়ারি মাসে সদস্যদের জন্য 'বডি-ওর্ন ক্যামেরা' চালু করবে। এই ডিভাইসের মাধ্যমে পুলিশ সদর দপ্তর, আঞ্চলিক কার্যালয় এবং নির্বাচন কমিশন থেকে মাঠ পর্যায়ের কার্যক্রম সরাসরি পর্যবেক্ষণ করা যাবে।

তিনি আরও জানান, অক্টোবরের মধ্যে বিদেশ থেকে ওয়াকি-টকিসহ বিভিন্ন যোগাযোগ সরঞ্জাম এবং পুলিশি টহলের জন্য যানবাহন আসার কথা রয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

Pori Moni clinches Best Actor Female (Popular) for ‘Rongila Kitab’

Directed by Anam Biswas, the Hoichoi original series premiered in late 2024 and follows the turbulent journey of Supti, a pregnant woman forced to flee with her husband after being falsely accused of a crime

23m ago