‘পূজায় কারে পরামু নতুন জামা’

গত বছর জুলাই আন্দোলনে গুলিতে নিহত হয় ৬ বছরের ছোট্ট রিয়া গোপ। ছবি: সংগৃহীত

বাড়ির পাশেই মন্দির। পূজামণ্ডপে চলছে শারদীয় দুর্গোৎসবের মহাযজ্ঞ। চারদিকে আলোকসজ্জায় চোখ ধাঁধিয়ে ওঠার উপক্রম। সারাবছর প্রত্যাশা, প্রস্তুতি, নতুন পোশাক, আনন্দ– সব মিলিয়ে এক মহোৎসবের আমেজ। কিন্তু এর কিছুই ছুঁতে পারেনি জুলাই অভ্যুত্থানে প্রাণ হারানো শিশু রিয়া গোপের পরিবারের সদস্যদের।

২০২৪ সালের ১৯ জুলাই চারতলা বাড়ির ছাদে খেলার সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায় ছয় বছরের রিয়া। তারপর থেকে তাদের বাড়িটিতে সময় যেন থমকে গেছে। শোকস্তব্ধ ঘরের প্রতিটি কোণ যেন এখনও রিয়ার অনুপস্থিতির গল্প বলে। পূজার আনন্দ আর স্পর্শ করে না একমাত্র সন্তান হারানো মা বিউটি ঘোষকে।

'আমার কোনো পূজা নাই। কেনাকাটাও করি নাই। কার জন্য কেনাকাটা করমু, কারে পরামু নতুন জামা। পূজা আসলেই মা আমার কত কিছু আবদার করত,' এই বলে ডুকরে কেঁদে ওঠেন বিউটি।

নারায়ণগঞ্জ শহরের নয়ামাটি এলাকায় রিয়াদের চারতলা বাড়ি। বাবা দীপক কুমার গোপ তখন বাড়িতে ছিলেন না। একটি ঘরে বসে ছিলেন রিয়ার ঠাকুমা। একটু পরে আসলেন মা বিউটি ঘোষ।

মেয়ের কথা উঠতেই কেঁদে ওঠেন বিউটি। গত কয়েকটা বছর সব আয়োজন ছিল মেয়েকে ঘিরেই। নানা আবদার পূরণেই ব্যস্ত থাকতে হতো দীপক-বিউটি দম্পতিকে।

'আজ পূজার দিনে আমার ঘরটা কত কলকল করত। মা আমার চুড়ি লাগব। জামার সাথে মিলাইয়া জুতা লাগব। একটা না, দুইটা জামা লাগব। মা আমার এইটা লাগব, ওইটা লাগব। আর আমি এখন কিছু কিনতে পারতেছি না। আমারে কেউ কয় না, মা আমারে এইটা দাও, ওইটা দাও। আমারে কেউ মা কইয়াও ডাকে না।'

বিবাহিত জীবনের দীর্ঘ অপেক্ষার পর কোলজুড়ে এসেছিল রিয়া। একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে কিছুতেই আর স্বাভাবিক হতে পারেননি। বাড়ি থেকে সচরাচর বেরও হন না।

'ভালো লাগে না, কিচ্ছু ভালো লাগে না। আমি আমার মেয়ের মায়া ছাড়তে পারছি না। ওর ডাক ছাড়তে পারছি না। ওর আদুরে আদুরে কথা আমি ভুলতে পারছি না, কিচ্ছু ভুলতে পারছি না। সোনা মারে, সোনা মা, তুই কই গেলি সোনা মা,' বলতে বলতে আবারও কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

চোখের পানি মুখতে মুছতে বিউটি বলেন, 'বছর ধইরা আমি ঘোরের মধ্যে আছি। আমি তো ওরে ভুলতে পারি না। সবাই কাঁদতে মানা করে কিন্তু আমি তো ভুলতে পারি না। আমার দেহের মধ্যে আত্মা নাই, খালি খাঁচাটা আছে। আমি বাঁইচা নাই। আমার ভেতরটা শুধু কাঁদে।'

গতবছরও পূজায় বাড়ির বের হননি পরিবারের কেউ। এবারও তেমন কোনো পরিকল্পনা নেই বলে জানালেন রিয়ার বৃদ্ধা ঠাকুমা। তাদের ঘরে এখন আর উৎসবের আনন্দ নেই, কেবল নীরব শোকের মাতম।

গতবছর ১৯ জুলাই বিকেলে বাড়ির ছাদে খেলার সময় শিশু রিয়া গুলিবিদ্ধ হয়। পাঁচদিন পর ২৪ জুলাই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় রিয়া।

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশের একাধিক সূত্র জানায়, ওইদিন শহরে আন্দোলনকারীদের দমাতে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে সড়কে নেমে আসেন আওয়ামী লীগের তৎকালীন সংসদ সদস্য শামীম ওসমান। অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র থেকে শামীম ওসমান ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীকে মুহুর্মুহু গুলিও ছুড়তে দেখা যায়।

রিয়ার মৃত্যুর ১১ মাস পর গত ১ জুলাই আওয়ামী লীগের অজ্ঞাত পরিচয়ের ২০০ নেতা-কর্মীকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে পুলিশ।

Comments

The Daily Star  | English

Hasina can’t evade responsibility for Khaleda Zia’s death: Nazrul

In 2018, Khaleda walked into jail, but came out seriously ill, he says

4h ago