কোনো জায়গাই নিরাপদ নেই মা ইলিশের জন্য

ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে সরকার ঘোষিত ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও দেশের পাঁচটি অভয়াশ্রমে অবাধে ধরা হচ্ছে মাছ।
রাতের অন্ধকারে ইলিশের প্রধান প্রজনন এলাকা মেঘনা, কালাবদর, তেঁতুলিয়া, বিষখালী নদীতে ধরা হচ্ছে মাছ। বিশেষ করে বরিশালের হিজলা ও মেহেন্দীগঞ্জ এবং ভোলার বিভিন্ন জায়গায় অবাধে মাছ ধরছেন জেলেরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, মৌসুমি জেলেরা নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই ছোট খাল ও নদীতে জাল ফেলছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান চালালে তারা জাল গুটিয়ে সরু খাল দিয়ে পালিয়ে যান।
চলতি মাসের শুরুতেই বরিশালের বাকেরগঞ্জ ও হিজলায় জেলেদের হামলার শিকার হয় ইলিশ রক্ষায় নিয়োজিত টহল দল। বরিশাল জেলা মৎস্য কর্মকর্তা রিপন কান্তি ঘোষ দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, এ ঘটনায় ইতোমধ্যে সাতজনকে দেশীয় বিভিন্ন অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
হিজলা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলম বলেন, 'এর মধ্যে কয়েকজন জেলে নদীতে ডাকাতির সঙ্গেও জড়িত।'
বরিশাল শহরের কাউনিয়া এলাকার একাধিক বাসিন্দা জানান, রাতে অনেক জেলে বাসাবাড়িতে গিয়ে অর্ধেক দামে তাজা ইলিশ বিক্রি করছেন।
অভিযোগ রয়েছে, কিছু মৎস্য কর্মকর্তাও নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই মাছ ধরায় সহযোগিতা করছে। বরগুনার তালতলীতে এক মৎস্য কর্মকর্তা ও তার বাবার বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এ বছর ড্রোন ব্যবহার তরে অধিকতর নজরদারী করতে পারছেন মৎস্য কর্মকর্তারা।
হিজলার মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলম বলেন, 'এখন আমরা কয়েক কিলোমিটার দূর থেকেও জেলেদের ওপর নজরদারী করে দ্রুত অভিযান চালাতে পারছি।'
বরিশালের বিভাগীয় মৎস্য অফিসের তথ্যানুযায়ী, গত ৪-৭ অক্টোবরের মধ্যে অভিযান চালিয়ে ৫৭ জনকে কারাদণ্ড ও দুই লাখ আট হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এরই মধ্যে ৬০৪ কেজি ইলিশ ও এক কোটি ৮২ লাখ টাকা মূল্যের অবৈধ জাল জব্দ করা হয়েছে।
মোট ৮৩২টি বাজার, ৮১০টি ল্যান্ডিং স্টেশন ও ৪৬৭টি নদীপয়েন্টে পরিদর্শন করেছেন মৎস্য কর্মকর্তারা।
বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য অফিসের সিনিয়র সহকারী পরিচালক মো. আনিসুজ্জামান বলেন, 'ড্রোন নজরদারি ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে আমরা ব্যাপকভাবে অভিযান চালাচ্ছি।'
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকুয়াকালচার বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক বলেন, 'প্রতি বছর সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে একটি ইলিশ প্রায় এক কোটি ডিম ছাড়তে পারে। প্রজননের আগেই ইলিশ ধরা হলে প্রজনন চক্র ব্যাহত হয়—যা ইলিশের উৎপাদনের ওপরেও ব্যাপক প্রভাব ফেলে। ইলিশের নিরাপদ প্রজনন মৌসুম নিশ্চিতের জন্য জনসচেতনতাও গুরুত্বপূর্ণ।'
পটুয়াখালী ও বরগুনায় স্থানীয় প্রশাসনের কঠোর অভিযানের মধ্যেও রাতের অন্ধকারে অনেক জেলে ইলিশ ধরছেন।
বরগুনার তালতলীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রোকনুজ্জামান খান বলেন, 'ফকিরহাট এলাকায় স্থানীয়রা কয়েকজন জেলেকে ধরে প্রশাসনের হাতে তুলে দিয়েছে।'
বরগুনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. কামরুল ইসলাম জানান, গত ৭ অক্টোবর একদিনেই পটুয়াখালীতে ২৩টি মোবাইল কোর্ট ৯৩টি অভিযান চালিয়ে প্রায় ৩৭ লাখ টাকা মূল্যের এক হাজার ৯৪৫ মিটার জাল জব্দ করেছে মৎস্য প্রশাসন। এসব অভিযানে ১০টি মামলা করা হয়েছে। একইসঙ্গে পাঁচজন জেলেকে কারাদণ্ড ও ৬৪ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
গত ৪-৭ অক্টোবর মুন্সিগঞ্জে চারটি মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ২৬টি অভিযান চালানো হয়েছে। অভিযানে ৭৩ কেজি ইলিশ ও ৩৬ লাখ টাকা মূল্যের এক লাখ ৮০ হাজার মিটার অবৈধ জাল জব্দ করা হয়েছে। তবে কাউকে গ্রেপ্তার বা জরিমানা করা হয়নি।
মুন্সিগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. গোলাম মেহেদী হাসান বলেন, 'এখনো পদ্মা-মেঘনার দক্ষিণাংশ থেকে ইলিশ উজানে এসে ওঠেনি। তবুও নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে।'
চাঁদপুরে তিন জেলেকে আটক করেছে নৌ-পুলিশ। নৌ-পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এএসএম ইকবাল জানান, অভিযানে তিনটি নৌকা, কিছু ইলিশ ও অবৈধ কারেন্ট জাল জব্দ করা হয়। নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন সময়ে এ ধরনের অভিযান নিয়মিত চলবে ।
ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা আগামী ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।
Comments