চট্টগ্রামে ব্যবসায়ী হত্যার নেপথ্যে কী, খুঁজছে পুলিশ

চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে প্রকাশ্যে গুলি করে ব্যবসায়ী মো. আব্দুল হাকিমকে হত্যার ঘটনায় এখনো অস্ত্রধারীদের শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। তবে তারা বলেছে, হত্যার মূল কারণ উদঘাটনে তদন্ত চলছে।
নিহতের পরিবারের দাবি, হাকিম রাউজানের বিএনপি রাজনীতির সক্রিয় কর্মী এবং কেন্দ্রীয় বিএনপির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ অনুসারী ছিলেন। তবে দলীয় পদে ছিল না।
এদিকে, হত্যার দুই দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো মামলা করা হয়নি।
মঙ্গলবার বিকেলে মাদুনাঘাট এলাকায় আবদুল হাকিমের প্রাইভেট কার থামিয়ে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনার ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এক বিজ্ঞপ্তিতে জানান, হাকিম দলের কোনো কর্মী নন—যা নিয়ে দলের ভেতরে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে।
বুধবার বিকেলে স্থানীয় সাংবাদিকদের এই বিষয়ে গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, 'আমি হতাশ রিজভী সাহেবের কথা শুনে, এটি দুঃখজনক। শুধু দুঃখজনক নয় এটি লজ্জাকর ব্যাপার। উনি কী করে বললেন, তিনি বিএনপির কর্মী নন? এটা আমি মেনে নিতে পারছি না।'
তিনি আরও বলেন, 'রিজভী সাহেব কী বলেছেন সেটা জিজ্ঞেস করবেন না। তার (হাকিমের) দোষ সে কোনো পদে নেই, সে একজন বিএনপির কর্মী, জাতীয়তাবাদের সৈনিক।'
হাকিমের ভাই পারভেজ আলম জানান, নিহত হাকিমের 'হামিম অ্যাগ্রো' ও 'দেশ হারবাল' নামে ভেষজ ওষুধ এবং অন্যান্য ব্যবসা ছিল।
তিনি বলেন, 'মঙ্গলবার হাকিম বাগানবাড়ি থেকে খামারে গিয়েছিল। শহরে ফেরার পথে দুর্বৃত্তরা গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যা করে। বুকে গুলি লাগে। আমাদের পরিবারের কারও সঙ্গে কোনো বিরোধ ছিল না। আমরা শুধু সুবিচার চাই'।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হাটহাজারী সার্কেল) কাজী তারেক আজিজ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'হেলমেট ও মাস্ক পরা কয়েকজন মোটরসাইকেল আরোহী এসে গুলি করে পালিয়ে যায়। একাধিক সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। এর মধ্যে তিনজনকে বৃহস্পতিবার ৫৪ ধারায় আদালতে পাঠানো হয়েছে।'
তিনি আরও বলেন, 'হত্যার মূল কারণ এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে আমরা সর্বোচ্চটা দিয়ে তদন্ত করছি। আশা করি, অস্ত্রধারীদের শনাক্ত করা সম্ভব হবে।'
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা পুলিশের একজন কর্মকর্তা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'হাকিম সম্প্রতি রাউজানে বালুর ব্যবসা শুরু করেন। হাকিমের ফোন চেক করে গিয়াস কাদেরের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগের তথ্য পাওয়া গেছে, যা তাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের ইঙ্গিত দেয়।'
পুলিশ সূত্রে আরও জানা যায়, হাকিমের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও অস্ত্রসহ সাতটি মামলা ছিল। ২০১৯ সালে র্যাব-৭ তার 'দেশ হারবাল' কারখানায় অভিযান চালিয়ে নকল ওষুধ জব্দ করে।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাউজান উপজেলা বিএনপির দুই প্রভাবশালী নেতা গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী ও গোলাম আকবর খোন্দকারের অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষ, পাল্টাপাল্টি হামলা ও হত্যার ঘটনা বেড়েছে। তবে এসব ঘটনায় গিয়াস কাদের ও গোলাম খন্দকার দুই পক্ষই সংবাদ সম্মেলন করে একে অপরকে দোষারোপ করেছেন।
গত এক বছরে রাউজানে অন্তত এক ডজন হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে, যার মধ্যে বিএনপির সাতজন নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন।
Comments