‘মরণ জাল’ খেয়ে ফেলছে দেশি মাছ, বিপাকে পেশাদার জেলেরা

সারডোব এলাকায় ধরলা নদীতে পেতে রাখা ‘মরণ জাল’। ছবি: এস দিলীপ রায়

ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার, গঙ্গাধর ও জিনজিরামসহ ২৬ নদ-নদীর জেলা কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট। এ দুই জেলায় অসংখ্য খাল, বিল ও ছোট বড় জলাশয় রয়েছে। 

কিন্তু এসব নদ-নদী ও জলাশয়ে এখন আর মিলছে না আশানুরূপ দেশি মাছ। এতে বিপাকে পড়েছেন মাছ শিকারের ওপর নির্ভরশীল পেশাজীবী জেলেরা। তারা বলছেন, আমদানি করা অবৈধ 'মরণ জালে'র কারণে এই আকাল সৃষ্টি করেছে।

এই 'মরণ জাল' স্থানীয়ভাবে 'চায়না জাল', 'রিং জাল' বা 'চায়না দুয়ারী জাল' নামেও পরিচিত। সূক্ষ্ম বুনন নকশার কারণে ছোট-বড় মাছ ও জলজ প্রাণী এতে ঢুকলেও বের হতে পারে না। এতে পোনা ও মা মাছ ধরা পড়ছে। এতে প্রাকৃতিক বংশবৃদ্ধি ব্যাহত হচ্ছে। 

স্থানীয় পেশাদার জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা এ জাল ব্যবহার করেন না, কারণ এতে মা ও পোনা মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তবে অপেশাদার জেলেরা সহজ লাভের আশায় ব্যাপক হারে এই জাল ব্যবহার করছেন।

একেকটি 'মরণ জাল' কিনতে খরচ হয় ৫০ হাজার থেকে এক লাখ ২০ হাজার টাকা। পেশাদার জেলেদের পক্ষে এত টাকা বিনিয়োগ করা সম্ভব নয়। ফলে তারা ধীরে ধীরে জীবিকা হারানোর ঝুঁকিতে পড়ছেন।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ধরলা নদীর পাড়ের সারডোব গ্রামের কৃষক সুলতান আহমেদ বলেন, 'আগে নদী আর খাল-বিলে দেশি মাছের প্রাচুর্য ছিল। পাঁচ-ছয় বছর আগে চায়নার এই মরণ জাল চালু হওয়ার পর থেকে মাছ কমতে শুরু করেছে। এখন জলাশয়ে তেমন মাছই পাওয়া যায় না। নিষিদ্ধ হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অভিযান নেই বললেই চলে। প্রতিবাদ করতে গেলেও ভয় পাই।'

কুড়িগ্রামের রাজারহাটের চাকিরপশার গ্রামের কৃষক দিদারুল হক বলেন, 'এই জাল দেশি মাছের বংশই ধ্বংস করে দিচ্ছে। আইনের কঠোর প্রয়োগ ছাড়া এ জাল বন্ধ করা সম্ভব নয়। তা না হলে কয়েক বছরের মধ্যে জলাশয়গুলো থেকে দেশি মাছ পুরোপুরি হারিয়ে যাবে।'

একই এলাকার জেলে সুরেশ চন্দ্র দাস বলেন, 'আমরা পৈতৃক পেশায় মাছ ধরি। পোনা ও মা মাছ বাঁচলেই মাছের বিস্তার হবে, তাই আমরা সেগুলো কখনো ধরি না। কিন্তু অপেশাদার জেলেরা অবৈধ জাল দিয়ে নির্বিচারে শিকার করছেন। এতে আমাদের জীবিকা মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে।'

কুড়িগ্রামের সারডোব এলাকার বাসিন্দা সহিদার রহমান বলেন, 'আমরা জানি জালটি নিষিদ্ধ। তবু বাজারে সহজলভ্য হওয়ায় অনেকেই ব্যবহার করছেন। চায়না থেকে এ জাল দেশে ঢুকছে কীভাবে, সেটাই বড় প্রশ্ন।'

কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলা মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি শুটকু দাস বলেন, 'মরণ জাল আমদানি, বিক্রি ও ব্যবহার সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করতে দ্রুত সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। না হলে নদী ও জলাশয়গুলো থেকে দেশি প্রজাতির মাছ হারিয়ে গেলে শুধু জেলেদের জীবিকা নয়, দেশের মৎস্যসম্পদও ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে।'

কুড়িগ্রাম জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মুক্তাদির খান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'চায়নার মরণ জাল মাছের জন্য বড় হুমকি। এ জালের কারণে পোনা ও মা মাছ নির্বিচারে ধরা পড়ছে, ফলে প্রাকৃতিক বংশবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।' 

তিনি বলেন, 'আমরা বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে জাল জব্দ ও ধ্বংস করছি। তবুও ব্যবহার ঠেকানো যাচ্ছে না। মন্ত্রণালয়কে লিখিতভাবে জানিয়েছি এবং কঠোর আইনি ব্যবস্থার আবেদন করেছি।'

Comments

The Daily Star  | English

Khaleda Zia’s body taken to Parliament Complex ahead of janaza

Janaza will be held at Manik Mia Avenue at 2pm

2h ago