বাগেরহাট

ইলিশে নিষেধাজ্ঞায় বেড়েছে দেশি মাছের দাম, ‘পালিয়েছেন’ ক্রেতারা

ক্রেতাশূন্য বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার সাইনবোর্ড বাজার। ছবি: স্টার

সারি সারি মাছের দোকান খালি পড়ে আছে। ছেঁড়া নীল ত্রিপলের নিচে হাতে গোনা কয়েকজন বিক্রেতা সামান্য কিছু দেশি মাছ নিয়ে বসে আছেন। ক্রেতাদের আনাগোনা নেই বললেই চলে। গত ৪ অক্টোবর থেকে ইলিশ ধরা বন্ধ হওয়ায় বাজারের এই প্রাণচাঞ্চল্য হারিয়ে গেছে।

এই চিত্র বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার সাইনবোর্ড বাজারের। জেলার অন্যান্য মাছ বাজারের অবস্থাও এর থেকে খুব আলাদা নয়।

বাজার ঘুরে দেখা যায়, এক সপ্তাহের ব্যবধানে পাবদা, ট্যাংরা, কৈয়ের মতো দেশি মাছের দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। মাছ কিনতে আসা স্থানীয় বাসিন্দা সুফিয়া বেগম বলেন, 'আগে এক কেজি ট্যাংরা মাছ ৫০০ টাকায় কিনতাম, এখন ৭০০ টাকার নিচে পাওয়া যায় না। প্রতিদিন এত দামে মাছ কেনা তো সম্ভব না।'

ইলিশ ধরার ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞায় বাগেরহাটের প্রায় ২০ হাজার জেলে ও ক্ষুদ্র মাছ ব্যবসায়ী কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা থাকায় জেলেরা সাগরে যাচ্ছেন না। এতে শুধু ইলিশই নয় বন্ধ হয়ে আছে সব ধরনের সামুদ্রিক মাছের সরবরাহ।

এই সময়টায় জেলেদের জন্য সরকারিভাবে চাল বরাদ্দ থাকে। কিন্তু যারা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী তারা কিছুই পাচ্ছেন না। উপার্জন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পরিবার নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে তাদের।

মাছ বিক্রেতা হাসান মোল্লা (২৫) হতাশা প্রকাশ করে বলেন, 'সাগর বা নদীর মাছ না এলে আমাদের ব্যবসা চলে না। এখন মাছও পাই না, ক্রেতাও আসে না। ব্যবসা খুব খারাপ অবস্থায় আছে। আমরা তো সরকারি কোনো সাহায্যের আওতায়ও পড়ি না। এখন খাব কী?'

তার পাশেই বসা আল-আমিন শেখ (৪৫) বলেন, 'জেলেদের সাগরে যাওয়া বন্ধ থাকায় অন্য সামুদ্রিক মাছও আসছে না। দেশি মাছের দাম অনেক বেশি, কিন্তু এত দামে ক্রেতারা কিনতে চান না। লাভ তো দূরের কথা, টিকে থাকাই এখন কঠিন।'

আরেক বিক্রেতা টিটু শেখ (৩৫) আক্ষেপ করে জানালেন, 'নিবন্ধিত জেলেরা অন্তত ২৫ কেজি করে চাল পাচ্ছে, কিন্তু আমরা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা কিছুই পাচ্ছি না। বাজারে মাছ কম থাকায় দাম আকাশছোঁয়া, তাই ক্রেতারাও তেমন আসছেন না।'

এ বিষয়ে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা রাজ কুমার বিশ্বাস বলেন, 'ইলিশের প্রজনন মৌসুম সফল করতে এই নিষেধাজ্ঞা জরুরি। সরকারের পক্ষ থেকে বাগেরহাটের ৯,৮৫৯ জন নিবন্ধিত জেলেকে ২৫ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে। প্রকৃত জেলেরা যেন সহায়তা পান, সে বিষয়টি আমরা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি।'

তবে ক্ষতিগ্রস্তদের দাবি, এই সহায়তা প্রয়োজনের তুলনায় সামান্যই। জেলে হাসান মোল্লা বলেন, 'শুধু চাল দিয়ে তো আর সংসার চলে না। আমরাও চাই ইলিশ রক্ষা হোক, কিন্তু আমাদেরও তো বাঁচতে হবে। আমাদের জন্যেও কিছু সহযোগিতা দরকার।'

সন্ধ্যা নামতেই সাইনবোর্ড বাজারে নেমে আসে নীরবতা। খালি দোকান, নিভে যাওয়া আলো আর মাছের গন্ধহীন বাতাস যেন বলে যায়—জাতীয় মাছ ইলিশ রক্ষার উদ্যোগের ভার বইতে হচ্ছে প্রান্তিক জেলে ও মাছ বিক্রেতাদেরকে।

Comments