জিপিএ-৫ পেয়েছেন কীর্তিনাশায় ডুবে যাওয়া জুনায়েদ

রাজধানী ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ২৮ দিন চিকিৎসা নেওয়ার পর ২৭ সেপ্টেম্বর মারা যান নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থী মো. জুনায়েদ আমিন সরদার ডালিম।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে তার উচ্চ মাধ্যমিক ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল এসেছে। মানবিক বিভাগ থেকে জুনায়েদ জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন।
ছেলের ফলাফল জানতে এদিন সকালে নটর ডেম কলেজে আসেন জুনায়েদের বাবা মোর্শেদুল আমিন।
'আমার ছেলে ভালো ছিল, মেধাবী ছিল। সোশ্যাল ওয়ার্ক করতো। তার জীবনে অনেক আশা ছিল'—আমিনের কণ্ঠে এখন কেবলই হাহাকার।
স্কুলের একটি কক্ষে বসে আমিন বলতে থাকেন, 'কারও সন্তানের যেন এ রকম অকাল মৃত্যু না হয়। কোনো বাবাকে যেন এ রকম লাশ বহন করতে না হয়।'
'সে লেখাপড়া শিখবে, স্কলারশিপ নিয়ে বিদেশে পড়তে যাবে। মানুষের জন্য কাজ করবে। সমাজের জন্য কাজ করবে,' আক্ষেপের শ্বাস টেনে বলেন তিনি।

কথা বলতে গিয়ে বারবার ফুঁপিয়ে ওঠেন এই ব্যাংক কর্মকর্তা। ছেলের ভালো ফলাফলে পুত্র হারানোর শোক যেন ঢেউয়ের মতো আছড়ে পড়ছে তার বুকে।
আমিন জানান, তাদের বাড়ি শরীয়তপুরের পালং থানার চিকন্দি গ্রামে।
দুর্ঘটনার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আমার ছেলে তার চার বন্ধুর সঙ্গে নানার বাড়ি—শরীয়তপুরের জাজিরা থানার সেনেরচর ইউনিয়নে বেড়াতে গিয়েছিল। কীর্তিনাশা নদীতে তারা নৌকায় চড়েছিল।'
'হঠাৎ একজন নৌকা থেকে পড়ে যায়। তাকে বাঁচাতে আমার ছেলে নদীতে ঝাঁপ দেয়। পরবর্তীতে সেই ছেলে বেঁচে গেছে, আমার ছেলে নদীতে ডুবে গেছে। প্রায় ১০-১৫ মিনিট পরে স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে, তারপর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসে। হাসপাতাল থেকে তখন জানায়, এই মুহূর্তে লাইফ সাপোর্ট দরকার। আমাদের এখানে অ্যাভেইলেবল নাই। তখন আমরা তাকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করি, বলেন তিনি।

জুনায়েদ মানুষের কল্যাণে কাজ করতে চেয়েছিলেন জানিয়ে আমিন বলেন, মৃত্যুর আগেও তার ইচ্ছার কথা হাসপাতালে ডাক্তারদের কাছে শেয়ার করেছে। বলেছিল, "আল্লাহ যদি আমাকে বাঁচিয়ে রাখে, তাহলে আমি একটা হাসপাতাল করব। আপনারা যে রকম মানুষকে সেবা দিচ্ছেন, হাসপাতালের মাধ্যমে আমি মানুষকে সেবা দেবো"।
ভাই-বোনদের মধ্যে জুনায়েদ ছিল বড়। তার বোন পঞ্চম শ্রেণিতে এবং ছোট ভাই তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে।
গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে আমিন বলেন, 'আমি অভিভাবক হিসেবে বলবো, বন্ধুরা যত কথাই বলুক, কখনো আপনার ছেলে সন্তানকে হাতছাড়া করবেন না। একা যেতে দেবেন না। আজকে বন্ধুদের কারণেই আমার ছেলের অকাল মৃত্যু হলো। আমার জীবন থেকে সব কিছু হারিয়ে গেল।'
এই শিক্ষার্থীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন নটর ডেম কলেজের অধ্যক্ষ ড. ফাদার হেমন্ত পিউস রোজারিও। তিনি বলেন, 'ছেলেটির মৃত্যুর খবর আমরা আগেই জানি। আমরা পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছি।'
'সে ছিল ভদ্র, মেধাবী এবং দায়িত্বশীল ছাত্র। কলেজের বিভিন্ন ক্লাব ও সামাজিক কাজে সে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিল। তার পরিবারের প্রতি আমাদের গভীর সমবেদনা,' বলেন তিনি।
Comments