১২ বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় ১ লাখ ১৬ হাজারেরও বেশি মৃত্যু: যাত্রী কল্যাণ সমিতি

২০১৪ থেকে ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এক যুগে দেশে ৬৭ হাজার ৮৯০টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১ লাখ ১৬ হাজার ৭২৬ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে ১ লাখ ৬৫ হাজার ২১ জন।
ইসরায়েল-ফিলিস্তিন বা ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে যত মানুষ মারা গেছে, তারচেয়েও এই দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
আগামীকাল জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস-২০২৫ উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরে সংগঠনটির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী।
সংগঠনটি শুধু দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমের তথ্য বিশ্লেষণ করে এই প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছে।
লিখিত বক্তব্যে মোজাম্মেল হক চৌধুরী জানান, সড়ক পরিবহন খাতে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার সীমাহীন অনিয়ম ও দুর্নীতি করেছে। অব্যবস্থাপনা, মালিক-শ্রমিকদের চাঁদাবাজি ও নৈরাজ্য, ফিটনেসবিহীন যানবাহনের অবাধ চলাচল, লাইসেন্সবিহীন ও অপ্রাপ্তবয়স্ক চালক, সড়কের ত্রুটি, মাদকাসক্ত চালক ও বেপরোয়া গতি—এসব কারণেই এই সময়কালে এত হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।
সংগঠনটি দাবি করে, স্বাধীনতার পর থেকে দাতা সংস্থার 'প্রেসক্রিপশন'মেনে একের পর এক সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের নামে হয়েছে বেহিসেবি লুটপাট।
নৌ ও রেল যোগাযোগের বিকল্প ব্যবস্থা গড়ে না তুলে নতুন সড়ক নির্মাণের মাধ্যমে দেশের ৮০ শতাংশ যাতায়াত সড়কনির্ভর করে তোলায় দুর্ঘটনাও বেড়েছে প্রায় ৮০ শতাংশ।
সংগঠনটির ভাষায়, 'সড়কে এই গণহত্যার জন্য' বিগত সরকারের দুর্নীতি ও ভুলনীতি দায়ী। তবে এখনো পরিবহন খাতে দৃশ্যমান পরিবর্তন না আসায় বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগও প্রশ্নবিদ্ধ বলে মনে করে যাত্রীকল্যাণ সমিতি।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সরকার পরিবর্তনের পরও সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়, বিআরটিএ ও ট্রাফিক বিভাগে নীতিগত সংস্কার না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছে সংগঠনটি।
তাদের মতে, এসব প্রতিষ্ঠানে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত না হলে সড়ক খাতে দৃশ্যমান অগ্রগতি সম্ভব নয়।
নিরাপদ সড়ক দিবসকে সামনে রেখে জরুরিভিত্তিতে ১২ দফা সুপারিশ পেশ করেছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। এর মধ্যে রয়েছে নৌ ও রেলপথ সড়কের সাথে সমন্বয় করে সমন্বিত যাতায়াত নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা।
চাদাঁবাজি ও অনিয়ম-দুর্নীতি এবং মালিক-শ্রমিকদের দৌরাত্ম্য বন্ধে পরিবহনখাত সংস্কার করা।
প্রতিটি বিভাগীয় শহরে সরকারি উদ্যোগে ম্যাস ট্রানিজটের (পাতাল মেট্রোরেল) ব্যবস্থা করা। বিভাগীয় শহরগুলোতে সরকারি উদ্যোগে ডিজিটাল লেনদেনের ভিত্তিতে কমপক্ষে দুটি বাস র্যাপিড ট্রানজিট লেন চালু করা।
সারাদেশে জেলা শহর থেকে উপজেলায় শক্তিশালী বাস নেটওর্য়াক গড়ে তোলা। মোটরসাইকেল ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা আমদানি ও বিপণন বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া।
উন্নত কারিকুলাম তৈরি করে পরিবহন চালকদের রাষ্ট্রের খরচে প্রশিক্ষণ দেওয়া। ট্রাফিক পুলিশের কার্যক্রম ডিজিটাল করা ও ট্রাফিক ট্রেনিং একাডেমি গড়ে তোলা। সড়ক দুর্ঘটনার মামলা সরকারি উদ্যোগে আমলে নেওয়া এবং হতাহত ব্যক্তিকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া।
যাত্রীস্বার্থে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রতিটি ফোরামে যাত্রী প্রতিনিধি তথা ভুক্তভোগীর মতামত ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। সড়ক খাতে আইনের সুশাসন নিশ্চিত করা। দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের জবাবদিহির আওতায় আনা। সারাদেশে সাইক্লিস্ট ও পথচারীদের জন্য পৃথক লেন ও নিরাপদ ফুটপাতের ব্যবস্থা করা।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন সমিতির সভাপতি শরীফ রফিকুজ্জামান, বারভিটার সভাপতি আবদুল হক, ড্রাইভার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান বাদল আহমেদ প্রমুখ।
Comments