উদীচী কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ ‘বাকস্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক অধিকারের ওপর আঘাত’
বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগের ঘটনাকে 'বাকস্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক অধিকারের ওপর আঘাত' হিসেবে আখ্যায়িত করে প্রতিবাদ মিছিল ও সমাবেশ করেছে সংগঠনটি।
সমাবেশ থেকে হামলার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবি জানানো হয়। একই সঙ্গে সাংস্কৃতিক ও গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়।
আজ শনিবার সকাল ১১টায় রাজধানীর পল্টন মোড় থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবের বিপরীতে উদীচীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে 'সত্যেন সেন চত্বরে' গিয়ে শেষ হয়। এতে শিল্পী, সাংস্কৃতিক কর্মী, সাংবাদিকসহ সংগঠনটির সমর্থকরা অংশ নেন।
উদীচীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, অগ্নিসংযোগের ঘটনায় সংগঠনটির ৫৫ বছরের সাংস্কৃতিক আর্কাইভ ধ্বংস হয়ে গেছে। নেতারা একে দেশের প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মূলে আঘাত হিসেবে উল্লেখ করেন। তাদের মতে, এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়; বরং একাত্তরের চেতনা ও সাংস্কৃতিক প্রতিরোধের ওপর ধারাবাহিক হামলার অংশ।
সমাবেশে উদীচীর সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে বলেন, 'দ্য ডেইলি স্টার, প্রথম আলো ও ছায়ানটের ওপর যেভাবে হামলা হয়েছে, ঠিক সেভাবেই আমাদের কার্যালয়ে ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এগুলো কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়; এগুলো বাকস্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক অধিকারের ওপর পরিকল্পিত আঘাত।'
তিনি আরও অভিযোগ করেন, গণমাধ্যম ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর আগের হামলার পর থেকেই একটি গোষ্ঠীগুলো প্রকাশ্যে উদীচীর ওপর হামলার ঘোষণা দিয়েছিল। আগাম তথ্য থাকা সত্ত্বেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি। এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন উদীচীর সাধারণ সম্পাদক।
উদীচীর আর্কাইভ ধ্বংসের ঘটনাকে 'সাংস্কৃতিক বিপর্যয়' আখ্যা দিয়ে অমিত রঞ্জন দে বলেন, 'কয়েক দশক ধরে সংগৃহীত গান, নাটকের স্ক্রিপ্ট, আলোকচিত্র ও সাংস্কৃতিক প্রতিরোধের ইতিহাস এক রাতেই ধ্বংস হয়ে গেছে। এটি শুধু একটি ভবনে হামলা নয়; এটি স্মৃতি মুছে ফেলার চেষ্টা।'
সমাবেশে বক্তারা সতর্ক করে বলেন, এ ধরনের হামলার বিষয়ে রাষ্ট্রীয় নিষ্ক্রিয়তা অব্যাহত থাকলে চরমপন্থী শক্তি আরও উৎসাহিত হবে।
উদীচী নেতারা স্মরণ করিয়ে দেন, ১৯৬৮ সালে সত্যেন সেন ও রণেশ দাশগুপ্তের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত সংগঠনটি দীর্ঘদিন ধরে সংগীত, নাটক ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মাধ্যমে সাম্প্রদায়িকতা, স্বৈরতন্ত্র ও শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে। এ ইতিহাসের কারণেই উদীচী বারবার হামলার শিকার হয়েছে—১৯৯৯ সালে যশোরে, ২০০৫ সালে নেত্রকোনায় বোমা হামলা এবং সর্বশেষ ঢাকায় অগ্নিসংযোগের ঘটনা তার প্রমাণ।
জবাবদিহি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে অমিত রঞ্জন দে বলেন, 'এই মিছিলই শেষ নয়; বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথে থাকব।'


Comments