লালমনিরহাটে বিশেষ ট্রেনের দাবিতে রেলপথ অবরোধ, ট্রেন চলাচল বন্ধ
তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে লালমনিরহাট থেকে ঢাকায় যেতে বিশেষ ট্রেন বরাদ্দের দাবিতে লালমনিরহাটে রেলপথ অবরোধ করেছেন বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা।
আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে লালমনিরহাট রেলস্টেশনে রেললাইনের ওপর অবস্থান নিয়ে অবরোধ কর্মসূচি পালন করায় জেলাটি থেকে থেকে দেশের বিভিন্ন রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। দাবি পূরণ না হলে অনির্দিষ্টকালের জন্য রেলপথ অবরোধ অব্যাহত রাখার হুঁশিয়ারিও দিয়েছে দলটির নেতাকর্মীরা।
জানা গেছে, রেলপথ অবরোধের কারণে ঢাকা, বুড়িমারী, পার্বতীপুর, রংপুর, সান্তাহার, কুড়িগ্রাম ও দিনাজপুর রুটে সব ধরনের ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। স্টেশনে আটকে পড়েছে ঢাকাগামী আন্তঃনগর ট্রেন 'লালমনি এক্সপ্রেস'।
হঠাৎ ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন শত শত যাত্রী। অনেক যাত্রী দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পর বাধ্য হয়ে টিকিট ফেরত দিয়ে টাকা ফেরত নিয়েছেন।
বিএনপি নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, আগামী ২৫ ডিসেম্বর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে ফিরবেন। এ উপলক্ষে তারা নিজ খরচে ভাড়া পরিশোধ করে ঢাকায় যাওয়ার জন্য রেল কর্তৃপক্ষের কাছে বিশেষ ট্রেন বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করেছিলেন। প্রাথমিকভাবে রেল কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দিলেও সোমবার রাতে কোনো কারণ না জানিয়ে সেই সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে তারা আন্দোলনে নামতে বাধ্য হয়েছেন।
জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন বলেন, রেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একাধিক দফা আলোচনা করে আমরা ট্রেন বরাদ্দের বিষয়ে আশ্বস্ত হয়েছিলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। বিশেষ কোনো মহলের ইশারায় এই বরাদ্দ বাতিল হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
জেলা যুবদলের আহ্বায়ক আনিসুর রহমান আনিস বলেন, আজ ট্রেনযাত্রীদের যে ভোগান্তি হয়েছে, তার দায় রেল কর্তৃপক্ষের। তারা যদি আমাদের আশ্বস্ত না করত, তাহলে এমন কর্মসূচি দিতে হতো না। বিশেষ ট্রেন বরাদ্দ নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আমরা অবরোধ তুলে নেব না।
এদিকে অবরোধের কারণে দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। ঢাকাগামী যাত্রী মনসুর আলী বলেন, সকাল ৯টায় স্টেশনে এসে দেখি রেলপথ অবরোধ চলছে। দুপুর ১টা পর্যন্ত অপেক্ষা করার পর বাধ্য হয়ে টিকিট ফেরত দিয়ে টাকা নিই।
বুড়িমারীগামী যাত্রী রমিজা বেওয়া বলেন, সকাল ৮টায় স্টেশনে এসেছি। দুপুর ১২টা পর্যন্ত অপেক্ষা করেও ট্রেন ছাড়েনি। ঠান্ডায় খুব কষ্ট করেছি। সঙ্গে তিনজন ছোট নাতি-নাতনি ছিল, তারাও ঠান্ডায় কষ্ট পেয়েছে।
লালমনিরহাট রেলস্টেশনের স্টেশন মাস্টার মোহাম্মদ নুরনবী জানান, বিশেষ ট্রেন বরাদ্দের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জানেন। এ বিষয়ে তিনি অবগত নন।
অবরোধের কারণে মঙ্গলবার সকাল থেকে লালমনিরহাট স্টেশন থেকে কোনো রুটেই ট্রেন চলাচল করেনি বলে জানান নুরনবী। তিনি আরও বলেন, প্রতিদিন এই স্টেশন থেকে বিভিন্ন রুটে ১৬ জোড়া ট্রেন চলাচল করে। আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিটধারীদের টিকিট ফেরত দিয়ে টাকা ফেরত নেওয়ার জন্য মাইকিং করে জানানো হয়েছে।
লালমনিরহাট বিভাগীয় রেলওয়ের বিভাগীয় কমার্শিয়াল অফিসার (ডিসিও) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, লালমনিরহাট থেকে বিশেষ ট্রেন বরাদ্দ দেওয়ার মতো বাড়তি ইঞ্জিন, কোচ ও জনবল নেই। বিশেষ ট্রেন দিতে হলে নিয়মিত যাত্রীবাহী ট্রেন বাতিল করতে হবে, যা সম্ভব না।
তিনি জানান, বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চলছে এবং নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


Comments