দণ্ড দিয়ে কারাগারে পাঠিয়ে শেষ রক্ষা করতে পারবেন না: মির্জা ফখরুল

শুক্রবার বিকেলে নয়াপল্টনে সমাবেশে বক্তব্য দিচ্ছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল। ছবি: প্রবীর দাশ/স্টার

নেতাকর্মীদের সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠিয়ে সরকারের শেষ রক্ষা হবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

আজ শুক্রবার বিকেলে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত সমাবেশে তিনি এ মন্তব্য করেন।

নেতাকর্মীদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, 'এবার সেই মরণপণ সংগ্রাম, মরণপণ যুদ্ধ। মরণপণ যুদ্ধ করে এবার আমাদের পুরো জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে এদের পরাজিত করতে হবে, সরাতে হবে।'

তিনি বলেন, 'স্বৈরাচারী সরকারকে আরেকটা ধাক্কা লাগাও, আমাদের সামনে বিকল্প কোনো পথ নাই। আমাদের ফিরে যাওয়ার কোনো পথ নাই। আমাদের অস্তিত্বের জন্য, জাতির অস্তিত্বের জন্য আজ আমাদের সবাইকে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। এই ভয়াবহ দানবকে সরিয়ে সত্যিকার অর্থে একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, জনগণের রাষ্ট্র, জনগণের সরকার, জনগণের পার্লামেন্ট গঠন করতে হবে।'

মির্জা ফখরুল বলেন, 'এই যে মামলা-মোকদ্দমা-রায় এই সবকিছু চলে যাবে যেদিন আমরা এই সরকারকে বিদায় করতে পারব। আসুন আমরা সবাই মনের মধ্যে সেই দৃঢ়তা নিয়ে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে সামনের দিকে এগিয়ে যাই।'

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাজা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'তারেক রহমানের বিরুদ্ধে যে মামলা হয়েছে, সাজা দিয়েছে, এখনো বন্দি বেগম খালেদা জিয়াকে সাজা দিয়েছে, আমাদের ৪০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে যে মিথ্যা মামলা দিয়েছে, এগুলোকে অপসারণ করতে করতে একটাই পথ, এই সরকারকে সরাতে হবে।'

দুর্নীতি মামলায় তারেক রহমান ও তার স্ত্রী জোবায়দা রহমানের বিরুদ্ধে কারাদণ্ডের রায়ের প্রতিবাদে দুপুর আড়াইটায় সমাবেশ শুরু হয়।

বৃষ্টির মধ্যে সমাবেশে বিপুল নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে সাধুবাদ জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'আপনারা অনেক কষ্ট করেছেন, পরিশ্রম করছেন। পানির মধ্যে দাঁড়িয়ে আছেন, বৃষ্টির মধ্যে দাঁড়িয়ে আছেন। রাতে ঘুমাতে পারেন না পুলিশ হানা দিচ্ছে।'

'এরা দিনের বেলা বলবে আমরা তো সুষ্ঠু-অবাধ নির্বাচন করতে চাই, আমরা কারো প্রতি কোনো অন্যায় করছি না। আর হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে বের হলেই গ্রেপ্তার করে। কত ভীরু হলে, কাপুরুষ হলে, ভয় পেলে তারা এটা করতে পারে,' বলেন তিনি।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, 'তারা বক্তব্যে বলে খেলতে চাও, খেলতে চাও, ডিসেম্বরে খেলতে চাও। এসব বাদ দিয়ে, ক্ষমতা বাদ দিয়ে, চেয়ারটা ছেড়ে দয়া করে একটু তাড়াতাড়ি আসুন।'

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, 'মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কী বলল বা যুক্তরাজ্য কী বলল বা ভারত কী বলল, এটা নিয়ে আমাদের মাথা ঘামানোর দরকার নেই। আমাদের দরকার আমাদের জনগণ কী বলছে। জনগণ পরিষ্কার করে বলছে, বিদায় হও। যেতেই হবে তোমাদের।'

বিচার বিভাগের উদ্দেশে তিনি বলেন, 'সবচেয়ে বেশি আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে বিচারকদের। সে যদি ন্যায়বিচার করে, অন্যায়ভাবে কাউকে শাস্তি দান করে, সেই বিচারককে আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে।'

'অতীতের কথা স্মরণ করবেন। সেই ব্রিটিশ আমল থেকে এ দেশের মানুষ ন্যায়ের জন্য ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করেছে, লড়াই করেছেন এবং বিজয়ী হয়েছে। এদেশের মানুষ সেই পাকিস্তান আমলে আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে গান বানিয়েছিল বিচারপতি তোমার বিচার করবে যারা আজ জেগেছে এই জনতা,' বলেন তিনি।

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, 'আজ তারেক রহমান, জোবাইদা রহমান, বেগম খালেদা জিয়া, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, আমান উল্লাহ আমানসহ অন্যান্য যাদেরকে আপনারা সাজা দেওয়ার জন্য ঠিক করেছেন তাদের সাজা দেওয়ার আগে চিন্তা করবেন এ দেশের মানুষ আপনাদেরও হিসাব নেবে, জবাবদিহি করতে হবে একদিন।'

সাতক্ষীরার সাবেক সাংসদ হাবিবুল ইসলাম হাবিবকে মিথ্যা মামলায় ৭০ বছর কারাদণ্ড এবং ঈশ্বরদীতে আরেক মিথ্যা মামলায় বিএনপির স্থানীয় ৯ জনকে মৃত্যুদণ্ডের রায়ের ঘটনাকে 'ভয়াবহ' বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, 'এভাবে সাজা দিয়ে, মৃত্যুদণ্ড দিয়ে কারাগারে পাঠিয়ে আপনারা শেষ রক্ষা করতে পারবেন না।'

'আমরা রাস্তায় নেমেছি। আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে আমাদের অধিকারের জন্য সংগ্রাম করছি, লড়াই করছি। আমাদের মানুষজন দূরদূরান্ত থেকে ছুটে এসেছে ঢাকায় একটা মাত্র উদ্দেশ্যে। আর তা হলো আমরা এই সরকারের পতন চাই। রিকশাচালক চায় এই সরকারের পতন। কারণ তারা এখন পরিবারকে দুই বেলা খাবার তুলে দিতে পারেন না। চাল-ডাল-তেলসহ প্রতিটি জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে।

সমাবেশে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, 'নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন সমাগত। কারণ এই সরকার জানে, তারা জনগণের এই উপস্থিতিতে, জনগণের এই চাপের মুখে ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবে না।'

তিনি বলেন, 'তারেক রহমান ও জোবায়দা রহমানের বিরুদ্ধে এই রায় আমরা মানি না। আমরা এটাকে প্রতিহত করব আন্দোলনের মাধ্যমে। আমরা নিপীড়নকে প্রতিহত করব।'

মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে উত্তরের সদস্যসচিব আমিনুল হক ও দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সদস্যসচিব তানভীর আহমেদ রবিনের সঞ্চালনায় সমাবেশে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালাম বক্তব্য রাখেন।

Comments

The Daily Star  | English

Dozens of zombie firms still trading as if nothing is wrong

Nearly four dozen companies have been languishing in the junk category of the Dhaka Stock Exchange (DSE) for at least five years, yet their shares continue to trade on the country’s main market and sometimes even appear among the top gainers. 

1h ago