আঁতাত করে ছাত্রলীগের সব ভোট জামায়াত পেয়েছে, ডাকসু নির্বাচন প্রসঙ্গে মির্জা আব্বাস

ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে আঁতাত করে ছাত্রলীগের সব ভোট জামায়াত পেয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস।

তিনি আরও অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে জামায়াতের এখনো সম্পর্ক রয়েছে।

আজ বুধবার চট্টগ্রামে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী আবদুল্লাহ আল নোমানের শোকসভায় তিনি এ কথা বলেন।

মির্জা আব্বাস বলেন, 'গতকাল আপনারা দেখেছেন, আমাদের ডাকসু ইলেকশন হয়েছে। ইলেকশনে বিএনপি হেরে গেছে এটা আপনারা বলতে পারেন। আমি বলতে পারি না যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জামায়াতে ইসলামীর এত ভোট কোত্থেকে আসলো! আমার তো হিসেবে মিলে না! আমি বলতে চাই না যে কারচুপি করেছে। আমি বলতে চাই, দেশে একটা গভীর ষড়যন্ত্রের আভাস পাচ্ছি আমি।'

'কারণ আমরা যখন বিভিন্ন দল একসঙ্গে বসি, তখন আমাদের যে ইসলামী নেতারা, বারবার আমাদেরকে বলেন, ভাই খেয়াল রাইখেন আওয়ামী লীগ যাতে আর ক্ষমতায় আসতে না পারে, আওয়ামী লীগ ঠেকান—সব সময়। আওয়ামী লীগ আসলে সবাইকে কচুকাটা করবে। এটা তাদের ডায়ালগ। আমরা সেভাবেই চললাম, আর তলে তলে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করে ছাত্রলীগের সকল ভোট জামায়াত নিয়ে নিলো,' বলেন তিনি।

বিএনপি নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, 'বুঝতে পারছেন এখন, বিএনপির বিরুদ্ধে দেশে এবং দেশের বাইরে ষড়যন্ত্র হচ্ছে? কারণ বিএনপি একটি মাত্র দল বাংলাদেশে, যে দলের হাতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা নিরাপদ, সার্বভৌমত্ব নিরাপদ, মানুষের জানমাল নিরাপদ। আপনি বলতে পারেন যে হ্যাঁ, ৫ আগস্টের পরে তো বিএনপির লোকেরা অনেক অত্যাচার করতেছে ইত্যাদি ইত্যাদি। কথাটা সঠিক নয়।'

'বিএনপির সঙ্গে আওয়ামী লীগ মিশে অপকর্ম করছে, আবার জামায়াতের সঙ্গে আওয়ামী লীগ মিশে অপকর্ম করছে, সমস্ত দোষ বিএনপির ওপরে আসছে। বিএনপির ছেলেরা? তারা কিছুই বোঝে না তা আমি বলব না। বোঝে, তারা এই লোভ সামাল দিতে পারে নাই হয়তোবা,' যোগ করেন তিনি।

মির্জা আব্বাস বলেন, 'আমাদের নেতা তারেক রহমান সাহেব পরিষ্কার ভাষায় বলেছেন, বিএনপিতে কোনো সন্ত্রাসী, কোনো চাঁদাবাজ, কোনো দখলদারের জায়গা হবে না। এখনো যদি কেউ সামাল না দেন, এখনো যদি নিজেকে ঠিক না করেন, তাহলে যদি খবর আসে, ইনশাআল্লাহ, আপনাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর মনে রাখতে হবে বিএনপি স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়া রহমানের দল, মনে রাখতে হবে বিএনপি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার দল, মনে রাখতে হবে এই দেশের এখন বিএনপির নেতৃত্ব দিচ্ছে আমাদের নেতা তারেক রহমান। সুতরাং এখানে চাঁদাবাজির কোনো জায়গা নাই, এখানে দখলদারির কোনো জায়গা নাই।'

নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, 'মঞ্চে দাঁড়িয়ে কিন্তু আমাদের ওখানে দখলদাররা বক্তৃতা দেয়—দখলদারি করা যাবে না। বুঝতে পারছেন আমাদের অবস্থাটা? মঞ্চে দাঁড়িয়ে চাঁদাবাজি বিরুদ্ধে কথা বলে, আর বাইরে গিয়েই এই অপকর্মটা শুরু করে। এই ধরনের লোকগুলোকে কিন্তু আমরা চিনি, আমরা জানি। সাবধান হয়ে যাবেন। চাঁদাবাজের জায়গা বিএনপিতে নাই এবং যারা করছেন তারা বিএনপির লোক না।'

ডাকসু ইলেকশন থেকে নেতাকর্মীদের শিক্ষা নেওয়া পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, 'ডাকসু ইলেকশনে দুটি কাজ হইছে—ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং ২০০৮ সালের মতো, আবার ছাত্রলীগের ভোট। দেখেন, এরা কত বড় মুনাফিকের দল। এদের কারণে ২০০৮ সালে নির্বাচন হয়েছিল। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া নির্বাচনে যেতে চান নাই। জোর করে মুজাহিদ সাহেব (জামায়াতের তৎকালীন সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ) নির্বাচনে নিয়ে গেলেন। তার ফল কী হলো? জামায়াতে ইসলামীর চার থেকে পাঁচজন লোকের ফাঁসি হয়ে গেল। আর আমাদের কাছ থেকে চলে গেল সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী।'

জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীর সঙ্গে কারাগারের স্মৃতিচারণ করে আব্বাস বলেন, 'নিজামী, মুজাহিদ সাহেব, ডাক্তার আবু তাহের এবং পরে যে চারজনের ফাঁসি হয়েছে, আমরা কিন্তু একসঙ্গে ছিলাম। আমি একদিন নিজামী সাহেবকে জিজ্ঞাসা করলাম, হুজুর আপনি নির্বাচনে কেন গেলেন বলেন তো? নিজে তো গেলেন, আমাদেরও নিয়ে গেলেন, মারলেন তো আমাদেরও! উনি বললেন, আমি ভাই এই ব্যাপারে কিছু বলবো না, নীরব থাকলেন। পাশে ছিলেন মুজাহিদ সাহেব, উনার সঙ্গে আমার বয়সের খুব একটা তফাৎ ছিল না। উনাকে আমি জিজ্ঞেস করলাম, এই যে মুজাহিদ সাহেব, নির্বাচনে গেলেন কেন? উনি বললেন, আপনি বুঝবেন না, কেন গেছি। আজকে দুর্ভাগ্য এই, ওই নির্বাচন কিন্তু উনাদেরকে ফাঁসির দিকে নিয়ে গেল। উনাদের পাঁচ থেকে ছয়জন লোকের ফাঁসি হলো, তারপরও দেখেন আওয়ামী লীগের সঙ্গে তাদের প্রেম কিন্তু ছোটে না। এখনো আওয়ামী লীগের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক আছে।

'এই (ডাকসু) নির্বাচনেও ভারতে বসে বসে তারা নির্দেশ দিয়েছে জামায়াতকে ভোট দিতে হবে। অর্থাৎ বিএনপিকে ধ্বংস করলে পরে আর কোনো সমস্যা থাকে না জামায়াত ইসলামের। আওয়ামী লীগ বাইরে বসে জামায়াতকে বলবে, এই যে মৌলবাদী দেশে আছে, সুতরাং এই দেশটাকে দখল করতে হবে। এ রকম চিন্তা-ভাবনা আওয়ামী লীগের ভেতরে আছে। কিন্তু কিছুই বুঝতে পারছে না দেশটা কোন দিকে যাচ্ছে।

ডাকসু নির্বাচনে বিজয়ীদের স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, 'আমি আশা করব যে, এই কমিটি, ওরা যেন দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে রক্ষার জন্য চেষ্টা করে এবং তাদের যে সিনিয়র নেতারা ভুল পথে দেশটাকে পরিচালনা করার চেষ্টা করছে, সেখান থেকে তারা যেন তাদেরকে রক্ষা করে।'

Comments

The Daily Star  | English

Making sense of the numbers

What Ducsu vote counts reveal about Shibir’s dominance

1h ago