ডাকসু নির্বাচন: বেলার সঙ্গে বেড়েছে অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ

ডাকসু নির্বাচন
ডাকসু নির্বাচনে ভোট দিতে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন ঢাবি শিক্ষার্থীরা। ছবি: প্রবীর দাশ/স্টার

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনে (ডাকসু) ছাত্রদল সমর্থিত ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান অভিযোগ করেছেন, 'ভোট কারচুপি হচ্ছে। যেটা কোনোভাবেই আমরা আশা করিনি। সাধারণ শিক্ষার্থীরা এগুলো পোস্ট দিচ্ছে ফেসবুকে। একটু আগেও নয়াদিগন্তে আমরা দেখেছি, শিবিরের বিরুদ্ধে প্রশাসন ভোট কারচুপির প্রমাণ পেয়েছে।'

অথচ, এই নির্বাচনে ভোট দিতে ভোর থেকেই কেন্দ্রগুলোতে পৌঁছে যান শিক্ষার্থীরা। এটাই ছিল ডাকসু নির্বাচনে দিনের শুরুর চেহারা। কিন্তু, বেলা যত বেড়েছে, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে প্রার্থীদের অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের পরিমাণ।

সকাল থেকেই শিক্ষার্থীরা দলে দলে ভোটকেন্দ্রে এসেছেন, লাইন দাঁড়িয়েছেন, সুশৃঙ্খলভাবে ভোট দিয়েছেন। ভোট দেওয়ার আগে পড়ে সবার মধ্যে ছিল উৎসবমুখর আমেজ।

তবে, দুপুরের দিক থেকে ধীরে ধীরে আসতে শুরু করে নানা অভিযোগ। মূলত ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের প্যানেলের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ওঠে।

সবচেয়ে বড় অভিযোগটি ছিল প্রার্থীর নামের পাসে ক্রস চিহ্ন দেওয়া ব্যালট পেপার ভোটারের হাতে দেওয়া নিয়ে।

কার্জন হলের একটি কেন্দ্রে একজন শিক্ষার্থীকে আগে থেকে পূরণ করা ব্যালট দেওয়ার অভিযোগে একজন রিটার্নিং কর্মকর্তাকে প্রত্যাহারও করা হয়েছে।

ছাত্রদলের ভিপি (সহ-সভাপতি) প্রার্থী আবিদুল অভিযোগ করেন, 'রোকেয়া হলে এক শিক্ষার্থীকে সাদিক কায়েম ও ফরহাদের নামে ভোট দিয়ে রাখা একটি ব্যালট পেপার দেওয়া হয়েছে।'

তিনি এ বিষয়ে তদন্ত করার জন্য আহ্বান জানান।

বিপরীতে ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের জিএস (সাধারণ সম্পাদক) প্রার্থী এস এম ফরহাদ অভিযোগ করেন, 'সকাল থেকে এক নাটক মঞ্চায়ন দেখছি। বিএনপিপন্থী শিক্ষক এবং কর্মচারী-কর্মকর্তারা তাদের কাছ থেকে চমৎকার নাটক মঞ্চায়ন লক্ষ্য করছি।'

তিনি বলেন, 'একুশে হলে জিয়াউল নামে এক কর্মকর্তা পূর্ণাঙ্গরূপে ছাত্রদলের নামে পূরণ করা ব্যালট দিয়েছে। সেটা নিয়ে যখন আলোচনা চলছে, তখন সেটা ঢাকার জন্য টিএসসিতে বিএনপিপন্থী আরেক কর্মকর্তা আমাদের নামে ব্যালট পূরণ করে সেটা দিয়েছে।'

তিনি আরও অভিযোগ করেন, ছাত্রদল প্রার্থীরা বারবার নিয়মভঙ্গ করছেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্যানেলের পক্ষ থেকে জিএস প্রার্থী আবু বাকের মজুমদার অভিযোগ করেন, আগে থেকে ভোট দিয়ে রাখা ব্যালট পেপার ভোটারদের হাতে দেওয়া হয়েছে এবং নির্বাচনে 'ইঞ্জিনিয়ারিং' করা হচ্ছে।

এই প্যানেলের ভিপি প্রার্থী আব্দুল কাদের বলেন, 'মনোনয়নের সময় শেষ হয়ে গেলে কারও সঙ্গে যোগাযোগ না করে শুধুমাত্র ছাত্রদলকে সুযোগ দেওয়ার জন্য রাত সাড়ে ৯টার দিকে নির্বাচন কমিশন একদিন সময় বাড়িয়ে দিয়েছিল। এই ওহি কোথা থেকে এসেছিল? লন্ডন থেকে?'

অভিযোগ উঠেছে বহিরাগত প্রবেশ করতে দেওয়া এবং পোলিং এজেন্ট বের করে দেওয়ারও। জিএস প্রার্থী ফরহাদকে টেলিফোনে একজন নির্বাচন কর্মকর্তাকে বলতে শোনা যায়, 'কার্ড চেক না করে বহিরাগতদের ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে।'

তিনি একই ফোন করে আরও অভিযোগ করেন, একটি কেন্দ্র থেকে ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের পোলিং এজেন্টকে বের করে দেওয়া হয়েছে।

ভোটকেন্দ্রের ১০০ গজের মধ্যে প্রচারণা করায় নিষেধ থাকলেও সেটা করা হয়েছে। প্রার্থীদের অনেকেই আচরণবিধি লঙ্ঘন করেও লিফলেট বিতরণ করেছেন।

ছাত্রশিবির সমর্থিত ভিপি প্রার্থী সাদিক কায়েম অভিযোগ করেন, কোনো ডেস্ক বসানো নিষেধ থাকলেও ছাত্রদলের কয়েকজন প্রার্থীকে তিনি দেখেছেন ডেস্ক বসাতে। এর বাইরেও ছাত্রদল আরও আচরণবিধি ভঙ্গ করেছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

আচরণ বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ সম্পর্কে ভিপি প্রার্থী আবিদুল বলেছেন, 'আমাদেরকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়ে অসংখ্য প্রোপাগান্ডার শিকার করা হয়েছে। কেউ নোংরামি করলে তার প্রতিবাদ তো নোংরামি করে করা যায় না, আমরা সত্য-সুন্দর দিয়ে প্রতিবাদ জানাতে চাই।'

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় টিএসসিতে প্রতিবাদ মিছিলও করেছে ছাত্রদল। সেখানে ছাত্রদল সমর্থিত জিএস প্রার্থী শেখ তানভীর বারী হামিম অভিযোগ করেন, ভোটকেন্দ্র এলাকায় একটি নির্ধারিত ছাত্র সংগঠনের প্রার্থীদের প্রচারণা করতে দেওয়া হলেও, তাদের প্যানেলের প্রার্থীকে সেখান থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, 'এখানে দায়িত্ব প্রাপ্ত মোনামি ম্যাম আমাদের নারী প্রার্থীদের কটাক্ষ করছে এবং তাদের আইডেন্টিফাই করতে চাচ্ছে। কিন্তু, স্বতন্ত্র প্রার্থী বা শিবির যখন ব্যালট নম্বর দিচ্ছে, তাদের জন্য কোনো প্রতিবাদ বা বাধা নেই।'

'প্রতিরোধ পর্ষদ' প্যানেলের জিএস প্রার্থী মেঘমল্লার বসু বলেছেন, 'ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অভিযোগ আমরা পাচ্ছি। বড় দলগুলোর প্রতি পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ আছে, সেটা মেনে নিয়েই আমরা মাঠে নেমেছি।'

তবে, শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে আনন্দ প্রকাশ করেন তিনি।

ঢাবি উপাচার্য সাংবাদিকদের বলেছেন, উচিত হবে বিজয়ী এবং বিজিত উভয়েরই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা।

গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলা অধিকাংশ ভোটারের অভিমত, তারা শান্তিপূর্ণভাবেই ভোট দিতে পেরেছেন এবং সবকিছু বেশ গোছানোভাবেই করার চেষ্টা হয়েছে। সকালের দিকে ভোটারদের অনেকে আজকের এই ভোটের দিনটাকে ঈদের আমেজের সঙ্গেও তুলনা করেছেন।

Comments