নির্বাচিত হলে চাকসু প্রতিনিধি হয়ে কাজ করব, সংগঠনের হয়ে নয়: সাঈদ

সাঈদ বিন হাবিব। ছবি: সংগৃহীত

জয়ী হলে শুধুই শিক্ষার্থীদের নির্বাচিত প্রতিনিধি হয়ে কাজ করবেন বলে অঙ্গীকার করেছেন আসন্ন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনে ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থী সাঈদ বিন হাবিব।

দ্য ডেইলি স্টারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ইতিহাস বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী সাঈদ বলেন, 'চাকসু নির্বাচনে জয়ী হলে আমি কোনো রাজনৈতিক দলের হয়ে নয়, বরং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি হয়ে তাদের প্রত্যাশা পূরণে, তাদের অধিকার আদায়ে কাজ করব। চাকসুকে কোনো রাজনৈতিক দলের এজেন্ডা বাস্তবায়নে ব্যবহার করতে দেবো না এবং যেকোনো রাজনৈতিক দলের প্রভাব থেকে মুক্ত রাখব।'

ছাত্রশিবির মনোনীত 'সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোট' প্যানেলের এই প্রার্থী বলেন, 'দীর্ঘ প্রায় ৩৬ বছর চাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে, এটা জুলাই পরবর্তী বাংলাদেশের একটা বড় সফলতা। এর মাধ্যমে আমরা ছাত্র সংসদভিত্তিক রাজনীতির একটি স্বপ্ন দেখতে পাচ্ছি। আমরা চাইব চবির একাডেমিক ক্যালেন্ডারে চাকসু নির্বাচন যুক্ত হোক।'

নিজেদের প্যানেল সম্পর্কে ছাত্রশিবির চবি শাখার সাহিত্য ও মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক সাঈদ বলেন, 'যেহেতু আমাদের ক্যাম্পাসের ডাইভার্সিটি অনেক বেশি, তাই আমরা সবাইকে নিয়ে এই ক্যাম্পাসকে সাজাতে চাই। এজন্য আমরা প্যানেলের নাম দিয়েছি "সম্প্রীতি শিক্ষার্থী জোট", যেখানে পাঁচজন নারী শিক্ষার্থী আছেন, একজন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী, সনাতন ধর্মের আছেন। এটি আমাদের অন্তর্ভুক্তিমূলক দৃষ্টিভঙ্গির প্রমাণ।'

জয়ী হলে কী করবেন, জানতে চাইলে বলেন, 'যিনি সাধারণ সম্পাদক হবেন তার দায়িত্ব থাকবে অন্যান্য সম্পাদকদের কর্মকাণ্ডের তদারকি। আমি জয়ী হলে সবার জবাবদিহিতা নিশ্চিত করব। প্রত্যেকের বাজেটের শতভাগ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করব। এছাড়া, যে যেই প্যানেল থেকে জয়ী হয়ে আসুক, তার দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলো যেন তিনি বাস্তবায়ন করতে পারেন, সেজন্য তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করব।'

সাঈদ আরও বলেন, 'আমাদের প্যানেল থেকে আমরা প্রথমে ২৪ দফা দিয়েছিলাম। সেগুলোর মধ্যে আবাসন, যাতায়াত, খাদ্য, চিকিৎসাসহ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সব মৌলিক সমস্যা উঠে এসেছে।'

প্যানেলের কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরে সাঈদ বলেন, 'নারী হলগুলোতে মেডিকেল সেবা ও মেনস্ট্রুয়াল হাইজিন প্রোডাক্টের ভেন্ডিং মেশিন বসানো হবে। চবির মেডিকেল সেন্টারকে হাসপাতাল রূপে গড়ে তুলব, আবাসন সংকট মোকাবিলায় হল এক্সটেনশন নির্মাণ ও বাজেট আনব, প্ল্যাটফর্ম বড় করে শাটলের বগি বৃদ্ধি ও ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা জোরদার করব।'

'এছাড়া, খেলাধুলার প্রতিটি মাঠ উন্নত করব। প্রতি মাসে চাকসুর পক্ষ থেকে টুর্নামেন্ট আয়োজন করব। এতে শিক্ষার্থীরা মাদক থেকে দূরে থাকবে। এসব টুর্নামেন্টে নারী-পুরুষ উভয়েই অংশ নিতে পারবে,' বলেন তিনি।

সাঈদ জানান, গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মৌলিক সমস্যাগুলো নিয়ে তারা ধারাবাহিকভাবে কাজ করছেন। আমরা ক্রিকেট, ফুটবল ও টেবিল টেনিস টুর্নামেন্ট আয়োজন করেছি, জলবায়ু ও গ্রিন ক্যাম্পাস নিয়ে পলিসি ডিবেট করেছি। সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর সঙ্গে একাধিক মতবিনিময় সভা করেছি। এমনকি হাসপাতাল ও ফার্মেসির সঙ্গে চুক্তির উদ্যোগও নিয়েছিলাম শিক্ষার্থীদের স্বার্থে। আমরা প্রতি মাসে দুটি পাঠচক্র করি, বই পাঠ ও রচনা প্রতিযোগিতা আয়োজন করি,' বলেন তিনি।

বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে নিজের সক্রিয় ভূমিকার কথা বলতে গিয়ে এই জিএস প্রার্থী বলেন, 'আমি ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ছিলাম। জুলাই আন্দোলনের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন পর্যায়েও আমি সক্রিয় ছিলাম। শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা মামলার দেখভাল করেছি, আইনজীবীদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে গ্রেপ্তার শিক্ষার্থীদের মুক্তিতে ভূমিকা রেখেছি।'

'অন্যান্য প্যানেল ও প্রার্থীরা তাদের ইশতেহার প্রচার করেছে। শিক্ষার্থীরা যাদের ক্যাম্পাসের জন্য কল্যাণকর ও যোগ্য মনে করবে, তাদেরকে নির্বাচিত করবে এটা আমার প্রত্যাশা। চাকসুর সঙ্গে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনকে মেলাবো না। শিক্ষার্থীদের সমস্যাগুলো সমাধানে তাদের যদি আশ্বস্ত করতে পারি, শিক্ষার্থীরা আমাকে ভোট দেবেন,' বলেন সাঈদ বিন হাবিব।

Comments