নারীবান্ধব ক্যাম্পাস বিনির্মাণে কাজ করব: তাসনিম জাহান শ্রাবণ

জয়ী হলে নারীবান্ধব ক্যাম্পাস বিনির্মাণে কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনে 'বিনির্মাণ শিক্ষার্থী ঐক্য' প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থী চৌধুরী তাসনিম জাহান শ্রাবণ।
দ্য ডেইলি স্টারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে চবির ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের পদার্থবিদ্যা বিভাগের এই শিক্ষার্থী বলেন, 'দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে আমি নির্বাচনে দাঁড়িয়েছি। এত বছর ধরে জনগণের টাকায় এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছি। বিশ্ববিদ্যালয়কে দেওয়ার মতো অনেক কিছু আছে।'
তিনি বলেন, 'আমার অনেক আইডিয়া আছে, যেগুলো বাস্তবায়ন করতে পারলে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যতে রাষ্ট্রকে আরও ভালোভাবে সার্ভ করতে পারবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যাগুলো আমি কাছ থেকে দেখছি। সেগুলো সমাধান করতে হলে ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে কাজ করতে হবে।'
জয়ী হলে কী করবেন, জানতে চাইলে শ্রাবণ বলেন, 'প্রথমেই আমার উদ্দেশ্য থাকবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি থেকে মুক্ত করা। চাকসুকে অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডারে যুক্ত করার মাধ্যমে আমি এ কাজটি করব। চাকসু নিয়মিত হলে লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি শূন্যের কোটায় চলে আসবে।'
'এরপর আসি আবাসন সংকটের দিকে। এখানে দুই রকমের সমাধান আছে। একটা স্বল্পমেয়াদি, আরেকটা দীর্ঘমেয়াদি। প্রথমে আশেপাশের কটেজ বা বিল্ডিংগুলো বিশ্ববিদ্যালয় ভাড়া নিয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করতে পারে, যেটা স্বল্পমেয়াদেই করা সম্ভব। দ্বিতীয়ত বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিত্যক্ত ভবন বা জায়গাগুলো কাজে লাগিয়ে আবাসনের ব্যবস্থা করা। এটা দীর্ঘমেয়াদি, কিন্তু শুরুটা করে ফেলতে কাজ করব। এরপর আসে পরিবহন ব্যবস্থা। এটাকে শিক্ষার্থীদের জন্য সহজ করে তুলব।'
'এ ছাড়া, মেডিকেল সার্ভিস, ওষুধ সেবা, খাবারসহ মৌলিক যে সংকটগুলো আছে, সেগুলো সমাধানের কাজ করব। এগুলো করতে পারলেই শিক্ষার্থীদের জন্য যথাযথ শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করা যাবে।'
নারী শিক্ষার্থীদের নিয়ে চৌধুরী তাসনিম জাহান শ্রাবণ বলেন, 'নারী শিক্ষার্থীদের জন্য কোনো ডে-কেয়ার নেই। শিক্ষকদের জন্য একটা আছে, শিক্ষার্থীরাও সেটাই ব্যবহার করেন। কিন্তু এটা অতটা ফলপ্রসূ হয় না। সেই কারণে নারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে যাদের সন্তান আছে, তারা ঠিকমতো পড়াশোনা করতে পারছেন না। কিন্তু তাদের অধিকার তো নিশ্চিত করতে হবে। সেজন্য প্রতিটি ফ্যাকাল্টিতে ডে-কেয়ার নিশ্চিত করা হবে। আবার আমাদের মসজিদগুলোতে নারীদের নামাজের ব্যবস্থা থাকলেও অজুর ব্যবস্থা নেই। অজুর ব্যবস্থা না থাকলে তো নামাজের ব্যবস্থা রেখে লাভ নেই। অবশ্যই সেখানে অজুর ব্যবস্থাও করা হবে।'
'অন্যদিকে প্রতিটি ফ্যাকাল্টিতে নারীদের জন্য স্যানিটারি প্যাড রাখার ব্যবস্থা করব, যাতে তাদের ভোগান্তি কম পোহাতে হয়। এ ছাড়া, তাদের চিকিৎসার ব্যাপারটিও অত্যন্ত জটিল। তাদের চিকিৎসার ব্যাপাটি সহজ করতে কাজ করব। নারীদের নিরাপত্তাও আরেকটি শঙ্কার বিষয়। তারা যাতে নিরাপত্তা যথাযথভাবে নিরাপত্তা পান, তা নিশ্চিত করবে। নারীদের জন্য কার্যকর যৌন নিপীড়ন-বিরোধী সেল গঠন করব। সর্বোপরি একটি নারীবান্ধব ক্যাম্পাস বিনির্মাণে কাজ করব।'
তিনি আরও বলেন, 'আমি কোনো রাজনিতীবিদ না, একাডেমিক ব্যক্তি। সেই জায়গা থেকে আমি বুঝি যে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক জায়গাটায় একটা সংস্কার প্রয়োজন। শিক্ষার জন্য পরিবেশটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। "রাষ্ট্রচিন্তা"সহ বেশকিছু সংগঠনের সঙ্গে আমি কাজ করেছি। সাংগঠনিক সেই দক্ষতা আমি অর্জন করেছি। সেই জায়গা থেকে ব্যাকগ্রাউন্ডের সমস্যাগুলো আমি সহজে ধরতে পারি। চাকসু গঠনতন্ত্র বা বিধিমালা কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় আইনেই যে সমস্যাগুলো আছে, সেগুলো আইডেন্টিফাই করতে না পারলে সমস্যার সমাধান করা যাবে না। সেখান থেকেই কাজটা করতে হবে। কারণ পলিসি সংশোধন করতে না পারলে মূল সমস্যা থেকেই যাবে।'
'সর্বোপরি জিএসের কাজ হচ্ছে সব কাজের তদারকি করা। মানে আমি মানুষকে দিয়ে কাজ করাবো, সেই কাজে যাতে কেউ ফাঁকি দিতে না পারে, তা নিশ্চিত করব।'
নিজের প্যানেলের ব্যাপারে তিনি বলেন, 'আমাদের প্যানেলে সব ধরনের মানুষ আছেন। কেউ কেউ রাজনীতি করেছেন, কেউ কেউ করেননি। কিন্তু যিনি যে খাতে যোগ্য, তাকে সেই পদে দেওয়া হয়েছে। যোগ্যতাই এখানে প্রাধান্য পেয়েছে। এর মাধ্যমে একটি সহাবস্থানের বার্তা পাওয়া যায়। আবার ইশতেহারেও আমরা অলীক কিছু রাখিনি, বাস্তবায়নযোগ্য সব রেখেছি। আশা করি শিক্ষার্থীরা সেগুলো দেখে সব বিবেচনা করে তাদের সিদ্ধান্ত নেবেন।'
নির্বাচন নিয়ে শ্রাবণ বলেন, 'নির্বাচন কমিশন বলেছে, ভোট গণনার সময়টা লাইভ টেলিকাস্ট করা হবে। এখন সেটা নিরবচ্ছিন্ন হতে হবে। কোনোভাবেই এক মুহূর্তের জন্যের সেটা যাতে বন্ধ না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। ১০ মিনিটের জন্যেও যদি সেটা বন্ধ হয় কোনো কারণে, এর মধ্যেই অনেককিছু ঘটে যাওয়া সম্ভব।'
'আরেকটি প্রস্তাব আমরা করেছি, ভোটকেন্দ্রের রুমের একপাশে প্রিসাইডিং অফিসার, আরেক পাশে যদি পোলিং এজেন্ট, আর মাঝে যদি ভোট দেওয়ার জায়গা রাখা হয়, তাহলে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা যাবে, কোনো ধরনের কারচুপির সুযোগ থাকবে না। এই বিষয়গুলো নিশ্চিত করা গেলে ভোট সুষ্ঠু হবে।'
সবশেষে তিনি বলেন, 'আমি যেহেতু কোনো রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে আসিনি, তাই নির্বাচনে আমার ফিক্সড কোনো ভোট নেই। কিন্তু শিক্ষার্থীরা আমাকে চেনেন, জানেন। আমি তাদের কাছে যাচ্ছি, আমার কথাগুলো বলছি। আমার বিশ্বাস শিক্ষার্থীরা যোগ্য প্রার্থীকেই নির্বাচিত করবে।'
Comments