শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিতে কাজ করব: মাহফুজুর রহমান

জয়ী হলে নারীসহ সব শিক্ষার্থীর জন্য নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিতে কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনে 'স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন' প্যানেলের সহসভাপতি (ভিপি) প্রার্থী মাহফুজুর রহমান।
দ্য ডেইলি স্টারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক এই সমন্বয়ক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর থেকেই গতানুগতিক রাজনীতির একটি ধারা দেখছি। ছাত্ররাজনীতি একটি নির্দিষ্ট ধারায় বন্দি ছিল। কয়েকজন ছাত্রনেতা প্রভু হয়ে উঠত। তারা চাইলে কাউকে সিট দিত, তারা চাইলে বেরও করে দিতে পারত, এমনকি ক্যাম্পাসে ঢোকাও বন্ধ করে দিত। সেই সময় থেকেই আমি শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়াতে শুরু করেছি, তাদের অধিকার নিয়ে কথা বলছি। এরপর অভ্যুত্থানের সময় সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছি।
তিনি বলেন, অভ্যুত্থানের পরও থেমে থাকিনি। নিজের জায়গা থেকে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। যেকোনো প্রয়োজনে শিক্ষার্থীদের পাশে থাকার চেষ্টা করছি। এত কিছু করতে যেয়ে অনুভব করছি যে, একটা অথরিটিক্যাল পাওয়া বা বৈধ প্রতিনিধিত্ব থাকলে আরও ফলপ্রসূভাবে শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করতে পারব। সেজন্যই নির্বাচন করছি।
'আমাদের এই প্যানেল কোনো দলীয় নয়, স্বতন্ত্র। সেই জায়গা থেকে আমাদের একমাত্র এজেন্ডা শিক্ষার্থীদের হয়ে কথা বলা, কোনো দলের নয়। কোনো দলের হয়ে প্যানেল দিলে নির্বাচনের সময় তাদের থেকে সুবিধা নিতাম, আবার পরে তাদের হয়েই কাজ করতে হতো। সেই ভাবনা থেকে দলীয় পরিচয়কে একপাশে রেখে শিক্ষার্থীদের জন্য স্বতন্ত্র প্যানেলে আসা। শিক্ষার্থীরাও আমাকে চেনেন, তাদের পাশে পেয়েছেন। তারাই যোগ্য প্রার্থীকে বেছে নেবেন।'
জয়ী হলে কী করবেন, জানতে চাইলে মাহফুজুর রহমান বলেন, আমাদের এখানে আবাসন সংকট প্রকট। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এই সমস্যা সমাধানে কাজ করব। আরেকটা প্রকট সংকট পরিবহন। ছয় মাসের মধ্যেই পরিবহন ব্যবস্থার উন্নতি করব। খাবার অত্যন্ত মৌলিক প্রয়োজন। অথচ আমাদের এখানে খাবারের মান অত্যন্ত নিম্ন। আমরা একটি মনিটরিং সেল গঠনের মাধ্যমে স্বাস্থ্যকর খাবার নিশ্চিত করব। সব শিক্ষার্থী যাতে মানসম্পন্ন খাবার পায়, ভর্তুকি দেওয়াসহ যেকোনো উপায়েই হোক আমরা তা নিশ্চিত করব। আমরা একটি আধুনিক মেডিকেল সেন্টার চাই। আমাদের মেডিকেল সেন্টারকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করব।
'এরপর যদি শিক্ষার দিকে তাকাই, আমাদের শিক্ষার্থীরা গবেষণার সুযোগ পায় না। অথচ আধুনিক বিশ্বে গবেষণাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হয়। জয়ী হলে এই সংকট সমাধানে কাজ করব। অন্যদিকে অনেক সময় শিক্ষকদের অবহেলার কারণে সেশন জট সৃষ্টি হয়। তারা ইচ্ছে হলে ক্লাস নেন, ইচ্ছে না হলে নেন না। আমরা একটা শিক্ষক মূল্যায়ন পদ্ধতি চালু করতে চাই। যার ফলে তাদেরও একটি জবাবদিহির জায়গা নিশ্চিত হবে। আইনে শিক্ষকদের একচেটিয়া ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ রাখা হয়নি। কিন্তু আমি সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে কাজ করব।'
তিনি আরও বলেন, আমার ইশতেহারের আরেকটা বড় দিক নারীদের জন্য ক্যাম্পাসকে সম্পূর্ণ নিরাপদ করে তোলা। নারীসহ সব শিক্ষার্থীর জন্যই আমি একটি নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিতে কাজ করব।
চাকসু নিয়ে মাহফুজুর বলেন, লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতির কারণে চাকসু নির্বাচন হতে দেওয়া হয়নি। যে রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতায় ছিল, তারা এটি হতে দেয়নি। একটি রক্তাক্ত অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। সেই জায়গা থেকে অভ্যুত্থানের পরই প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। তা বিবেচনায় এখন দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। কিন্তু তা হয়নি। সেই জায়গা থেকে আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে যে এই নির্বাচন নিয়মিত হবে কি না। আমি নির্বাচিত হলে সবচেয়ে বড় ম্যান্ডেট থাকবে এক বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই আরেকটা তফসিল আদায় কর। যেভাবেই হোক সেটা নিশ্চিত করব।
নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে তিনি বলেন, আমরা দেখেছি যে, একটি ছাত্র সংগঠনকে সুবিধা দেওয়ার জন্য বয়সসীমা তুলে দেওয়া বা মাস্টার্স-এমফিল-পিএইচডিকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বড় দুইটা ছাত্র সংগঠনের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ পাওয়ার পরেও কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সেই জায়গা থেকে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন আছে। সবমিলিয়ে সুষ্ঠু-গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিয়ে আমাদের মধ্যে শঙ্কা আছে।
সবশেষে মাহফুজুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীদের মতামতের ওপর আমার শতভাগ আস্থা আছে। তাদের মতামতকে আমি শ্রদ্ধা করি। কে তাদের জন্য যোগ্য, যেকোনো প্রয়োজনে কাকে তারা পাশে পান, কে তাদের অধিকার নিয়ে প্রতিনিয়ত কথা বলে, কোনো ধরনের আপস করে না, সেটা তারা ভালোভাবেই জানেন। সব বিষয় বিবেচনা করেই তারা তাদের প্রতিনিধিকে নির্বাচিত করবেন।
Comments