স্নায়ুযুদ্ধের স্মৃতি জাগিয়ে কিউবায় রুশ রণতরী-পারমাণবিক সাবমেরিন

কিউবায় রাশিয়ার রণতরী গোর্শকভ ও সাবমেরিন কাজান। ছবি: এএফপি
কিউবায় রাশিয়ার রণতরী গোর্শকভ ও সাবমেরিন কাজান। ছবি: এএফপি

রুশ সামরিক বাহিনীর রণতরী ও একটি পারমাণবিক সাবমেরিন কিউবার বন্দরে এসে ভিড়েছে। স্নায়ুযুদ্ধের আমল থেকে রাশিয়া-কিউবার ঘনিষ্ঠ মিত্রতার সর্বশেষ নিদর্শন হিসেবে এই উদ্যোগ এসেছে বলে মত দিয়েছেন বিশ্লেষকরা। 

গতকাল বুধবার এই তথ্য জানায় মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন। 

হাভানার উপকূলে পৌঁছে রুশ রণতরী অ্যাডমিরাল গোর্শকভ ২১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে অভিবাদন জানায়। কিউবানরা ১৮ শতকের ঔপনিবেশিক আমলে নির্মিত দুর্গ থেকে একই কায়দায় এই অভিবাদনের জবাব দেয়।

স্প্যানিশরা হাভানা বন্দরের সুরক্ষায় এই দুর্গ নির্মাণ করেছিল।

রুশ নৌবাহিনীর সবচেয়ে উন্নত জাহাজের অন্যতম গোর্শকভ। এই জাহাজের সঙ্গে কিউবা এসেছে পরমাণু শক্তিতে চালিত ডুবোজাহাজ কাজান এবং একটি তেলবাহী ট্যাংকার।

হাভানার তীরে সাবমেরিন কাজান ও রণতরী গোর্শকভ। ছবি: এএফপি
হাভানার তীরে সাবমেরিন কাজান ও রণতরী গোর্শকভ। ছবি: এএফপি

কিউবান জেলে ও অন্যান্য নাগরিকরা বন্দরে দাঁড়িয়ে জাহাজগুলোকে উপকূলে ভিড়তে দেখেন। সিএনএনের সাংবাদিকরা কিউবায় বসবাসরত রুশ সম্প্রদায়ের সদস্য ও কূটনীতিকদের পতাকা উড়িয়ে জাহাজের ক্রুদের স্বাগত জানাতে দেখেন।

প্রত্যক্ষদর্শীদের মধ্যে কয়েকজন সিএনএনকে জানান, তারা কখনোই হাভানার উপকূলে সাবমেরিন দেখেননি।

চার রুশ জাহাজ এ মুহূর্তে বন্দরে নোঙর করে রাখা আছে।

গত কয়েক বছরের মধ্যে রাশিয়ার দীর্ঘদিনের মিত্র কিউবার সঙ্গে পারস্পরিক সম্পর্ক প্রদর্শনের এটাই সবচেয়ে বড় উদ্যোগ। কয়েকটি পশ্চিমা গণমাধ্যমে এই উদ্যোগকে 'পেশিশক্তির প্রদর্শনী' হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, কাজান সাবমেরিনে কোনো পরমাণু অস্ত্র বোঝাই করা হয়নি।

এই নৌযানগুলো কিউবা থেকে পাঁচ দিনের আনুষ্ঠানিক সফরের জন্য ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে রওনা হবে। মার্কিন অঙ্গরাজ্য ফ্লোরিডা থেকে মাত্র ৯০ মাইল দূরে অবস্থিত এই এলাকায় এ ধরনের উদ্যোগকে রুশ সক্ষমতার প্রদর্শনী হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা, যা ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে টানাপড়েন আরও বাড়াতে পারে।

এক রুশ কূটনীতিক সূত্র সিএনএনকে জানিয়েছে, জাহাজগুলো কিউবায় থাকাকালীন সময় কিউবান নাগরিকরা এগুলো ঘুরে দেখার অনুমতি পাবেন।

রুশ কূটনীতিক সিএনএনকে জানান, বৃহস্পতিবার থেকে তিন দিনের জন্য দিনে চার ঘণ্টা করে কিউবার 'সাধারণ জনগণ' গোর্শকভ রণতরী পরিদর্শন করতে পারবেন।

সামরিক বিশ্লেষকদের মতে, এই রণতরী দূর-পাল্লার অভিযান, সাবমেরিনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ও সারফেস টু সারফেস এবং সারফেস টু এয়ার ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপে সক্ষম। পাশাপাশি এতে অন্যান্য অস্ত্রও রয়েছে।

কিউবা আসার পথে রুশ জাহাজগুলো আটলান্টিক মহাসাগরে সামরিক মহড়ায় অংশ নিয়েছে বলে জানায় রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ।

গাড়ি থেকে রুশ সাবমেরিনের ছবি তুলছেন কিউবার নাগরিকরা। ছবি: এএফপি

৬০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত শত্রুর ওপর হামলা চালানোর প্রতীকী অভিযানে অংশ নেয় রুশ রণতরী ও ডুবোজাহাজের ক্রু। এই মহড়ায় নিখুঁতভাবে লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালাতে সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়।

মার্কিন কর্মকর্তারা সিএনএনকে জানান, মার্কিন সামরিক বাহিনী ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ ও আটলান্টিকে রাশিয়ার মহড়ার ওপর নজর রাখতে জাহাজ ও উড়োজাহাজ মোতায়েন করেছে।

মার্কিন কর্মকর্তা জানান, এসব উদ্যোগ যুক্তরাষ্ট্রের সমুদ্রসীমা সুরক্ষিত রাখার স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার অংশ।

পেন্টাগন ও মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রাশিয়ার এই উদ্যোগ অস্বাভাবিক কিছু নয় এবং এতে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কোনো ঝুঁকি নেই। তারা উল্লেখ করে, ২০১৩ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত প্রতি বছরই কিউবায় রুশ জাহাজ সফর করেছে।

তা সত্ত্বেও, বিশ্লেষকরা বলছেন, এমন সময় রুশ জাহাজ কিউবায় যাত্রাবিরতি নিয়েছে যখন ওয়াশিংটন ও মস্কোর মধ্যে সম্পর্ক বড় আকারে ফাটল ধরেছে। বিশেষত, কয়েক সপ্তাহ আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন ইউক্রেনকে রুশ ভূখণ্ডে মার্কিন অস্ত্র ব্যবহার করে হামলার অনুমতি দেওয়ার পর পুতিন এই উদ্যোগের সমালোচনায় মুখর হন।

গত ৬ জুন পুতিন পশ্চিমা বিশ্বকে সতর্ক করে বলেন, 'পশ্চিমা অস্ত্র ব্যবহার করে রুশ ভূখণ্ডের আরো গভীরে হামলা হলে তিনি যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের খুব কাছের দেশে প্রচলিত ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করতে পারেন।

সাবমেরিন ক্রুদের উদ্দেশে হাত নেড়ে অভিবাদন জানাচ্ছেন কিউবান নারী। ছবি: এএফপি
সাবমেরিন ক্রুদের উদ্দেশে হাত নেড়ে অভিবাদন জানাচ্ছেন কিউবান নারী। ছবি: এএফপি

গত সপ্তাহে কিউবা জানায়, বন্ধুত্বপূর্ণ দেশ থেকে হাভানায় জাহাজ আসা খুবই স্বাভাবিক ঘটনা এবং এই বন্দরে যাত্রাবিরতির ঘটনা সমগ্র অঞ্চলের জন্য কোনো হুমকি সৃষ্টি করে না।

কিউবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, 'বন্ধুত্ব ও পারস্পরিক সহযোগিতামূলক মনোভাবের নিদর্শন হিসেবে ঐতিহাসিকভাবে বন্ধু দেশের নৌবাহিনীর জাহাজ আমাদের দেশে এসেছে।'

কিউবার সশস্ত্র বাহিনী এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, রাশিয়া থেকে আসা জাহাজগুলোতে কোনো পরমাণু অস্ত্র নেই।

রাশিয়ার দীর্ঘদিনের মিত্র কিউবা। স্নায়ুযুদ্ধের সময় সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ণ মিত্র হিসেবে দেশটি মস্কোর অনুরোধে পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র সংরক্ষণ করেছিল। সে সময় (১৯৬২) কিউবার ক্ষেপণাস্ত্র সঙ্কটের উদ্ভব ঘটে।

ইউক্রেন যুদ্ধ সূত্রে হাভানার সঙ্গে সম্পর্ক আরও ভাল করার চেষ্টা করছে মস্কো। কিউবা রাশিয়ার কাছ থেকে আসা তেল ও ত্রাণসামগ্রীর ওপর বড় আকারে নির্ভরশীল। গত কয়েক দশকের মধ্যে দেশটির অর্থনীতি সবচেয়ে দুর্বল অবস্থায় রয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh investment to GDP ratio 2025

Private investment sinks to five-year low

Private investment as a percentage of the gross domestic product has slumped to its lowest level in five years, stoking fears over waning business confidence and a slowdown in job creation.

11h ago