নখদন্তহীন ব্যাটিংয়ে ৮১ রানে হারল বাংলাদেশ, সিরিজ আফগানিস্তানের

ছবি: আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ড এক্স

মাত্র চার ব্যাটার পৌঁছালেন দুই অঙ্কে, তাদের কেউই আবার ত্রিশের ঘরে যেতে পারলেন না। নিয়মিত আসা-যাওয়া চলতে থাকায় জমে উঠল না কোনো জুটি। আফগানিস্তানের লেগ স্পিনার রশিদ খানের ঘূর্ণিতে পুরোপুরি নাকাল হলো বাংলাদেশ। নিদারুণ ব্যাটিং ব্যর্থতায় কোনোমতে একশ পেরিয়ে গুটিয়ে গিয়ে সিরিজ হারল তারা।

শনিবার আবুধাবিতে তিন ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৮১ রানের বড় ব্যবধানে হেরেছে বাংলাদেশ। টস জিতে আগে ব্যাট করে ৪৪.৫ ওভারে ১৯০ রানে অলআউট হয় আফগানরা। জবাবে মাত্র ২৮.৩ ওভার টিকতে পারা টাইগাররা থামে ১০৯ রানে। ফলে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ জিতে নিয়েছে হাশমতউল্লাহ শহিদির দল।

ওয়ানডেতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে এটাই বাংলাদেশের সর্বনিম্ন দলীয় সংগ্রহ। এর আগে একই ভেন্যুতে ২০১৮ সালের এশিয়া কাপে তারা অলআউট হয়েছিল ১১৯ রানে।

মেহেদী হাসান মিরাজের দলকে ধসিয়ে দেওয়া রশিদ ৮.৩ ওভারে স্রেফ ১৭ রানে নেন ৫ উইকেট। ওয়ানডেতে এই নিয়ে ষষ্ঠবার ৫ উইকেটের স্বাদ নিলেন তিনি। হ্যাটট্রিকও হতে পারত তার। ২৩তম ওভারে টানা দুই বলে নুরুল হাসান সোহান ও তানজিম হাসান সাকিবকে ফেরানোর পর রিশাদ হোসেনের বিপক্ষে এলবিডব্লিউয়ের আবেদনে সাড়া পেয়েছিলেন রশিদ। কিন্তু রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান রিশাদ। পরে রিশাদকেই স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলে ৫ উইকেট পূর্ণ করেন তিনি। সঙ্গে ইতি ঘটে বাংলাদেশের ছন্নছাড়া ইনিংসের।

রশিদকে যোগ্য সঙ্গ দেন আজমতউল্লাহ ওমরজাই। তিনি ২৭ রান খরচায় নেন ৩ উইকেট। নাঙ্গেলিয়া খারোতেও পান উইকেটের দেখা। বাকিটি রানআউট।

রান তাড়ায় বাংলাদেশের ব্যাটারদের কোনোকিছুই যেন ঠিক হয়নি! টেকনিকের দুর্বলতার পাশাপাশি বাজে শট নির্বাচন যেমন ভুগিয়েছে, তেমনি প্রকটভাবে দেখা গেছে ম্যাচের পরিস্থিতি নিয়ে সচেতনতার অভাব। সবকিছু মিলিয়ে ব্যর্থতার এক অপ্রত্যাশিত কিন্তু নিয়মিত ছবি আরেকবার আঁকে তারা।

প্রথম ওভার থেকেই শুরু হয় দুর্দশা। স্কোরবোর্ডে কোনো রান জমা হওয়ার আগেই বিদায় নেন তানজিদ হাসান তামিম (৫ বলে শূন্য)। ওমরজাইয়ের শর্ট বল পুল করার চেষ্টায় তিনি ধরা পড়েন ফাইন লেগের সীমানায়। নাজমুল হাসান শান্ত (৯ বলে ৭ রান) ডাবল নেওয়ার চেষ্টায় অযথা রানআউটে কাটা পড়েন। সাইফ হাসান (২৩ বলে ২২ রান) সাজঘরে ফেরেন আক্রমণাত্মক হতে গিয়ে। ওমরজাইকে টানা চার ও ছক্কার মারার পর আপার কাট খেলে থামতে হয় তাকে।

মিরাজ (৭ বলে ৪ রান) আউট হন ওমরজাইয়ের ভেতরে ঢোকা বলে এলবিডব্লিউ হয়ে। তিনি রিভিউ নিলেও বল ট্র‍্যাকিংয়ে তিনটি লাল রং জ্বলে ওঠায় সেটা নষ্ট হয়। ৫০ রানে ৪ উইকেট খুইয়ে চাপে পড়ার পর দরকার ছিল জুটি, দরকার ছিল দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ের। তবে থিতু হয়ে যাওয়া তাওহিদ হৃদয় সেই পথে হাঁটেননি। মনোযোগ হারিয়ে আচমকা রশিদকে স্লগ করতে গিয়ে বোল্ড হন তিনি (৩৪ বলে ২৪ রান)।

হৃদয়কে দেখে শিক্ষা নেননি নুরুল হাসান সোহান। তিনিও বিলাসী শট খেলতে গিয়ে স্টাম্প হারান (২০ বলে ১৫ রান)। ঠিক পরের বলে তানজিম এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে পড়ে গোল্ডেন ডাকের তেতো স্বাদ নেন। খারোতের বলে এরপর রশিদকে ক্যাচ শিখিয়ে বিদায় নেন শেষ ভরসা জাকের আলী (৪৩ বলে ১৮ রান)। ৫ উইকেটে ৯৯ থেকে ৮ উইকেটে ৯৯ রানের দলে পরিণত হয় বাংলাদেশ।

বাকিটা সারেন রশিদই। তানভির ইসলাম (৮ বলে শূন্য) ও রিশাদকে (১৫ বলে ৫ রান) ঝুলিতে ঢুকিয়ে নিশ্চিত করেন বাংলাদেশের বিপক্ষে আফগানিস্তানের টানা তৃতীয় ওয়ানডে সিরিজ জয়।

ম্যাচসেরার পুরস্কার অবশ্য জেতেন ইব্রাহিম জাদরান। সেঞ্চুরির আশা জাগানো ডানহাতি ওপেনার ব্যাটিংয়ে একাই টানেন আফগানদের। ৪৪তম ওভার পর্যন্ত টিকে থেকে তিনি খেলেন ৯৫ রানের ইনিংস। ১৪০ বল মোকাবিলায় তার ব্যাট থেকে আসে তিনটি চার ও একটি ছক্কা।

Comments

The Daily Star  | English

Khaleda Zia laid to eternal rest

Buried with state honours beside her husband Ziaur Rahman

9h ago