২০ বছর আগের সেই সময়ে কি ফিরে গেলেন তারা?

২০০৩-০৪ সাল, কিংবা আরও আগে। তখনো টি-টোয়েন্টি যুগ আসেনি। খেলা হতো ওয়ানডে আর টেস্ট। তাতে বাংলাদেশের ভোগান্তি থাকত চরমে। জেতার চেয়ে লক্ষ্য তখন টেস্ট হলে সেটা পাঁচদিনে নিয়ে যাওয়া, ওয়ানডে হলে পুরো ৫০ ওভার ব্যাট করা। বেশিরভাগ সময় সেই লক্ষ্য পূরণ হতো না। সম্প্রতি নতুন বোর্ড পরিচালক হওয়া সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাসুদ পাইলট অনেকগুলো উইকেট পড়ার পর টিকে থাকার প্রাণপণ চেষ্টা করতেন।
ওয়ানডেতে ২০০৪ সালে কিছু চমকপ্রদ জয় আছে বাংলাদেশ, ২০০৫ সালেও অস্ট্রেলিয়াকে হারায় তারা। তবে ২০০৭ বিশ্বকাপ দিয়েই এই সংস্করণে সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়ানো শুরু। ২০১৪ সাল পর্যন্ত হারের পাল্লা ভারি হলেও খেলার মধ্যে ছিলো দৃশ্যমান বদল। ২০১৪ থেকে বাংলাদেশ ওয়ানডেতে হয়ে উঠে সমীহ জাগানিয়া শক্তি। সেই সময়টা এখন যেন বিস্মৃত অতীত। বরং তারও আগে ফিরে গিয়ে বাংলাদেশ এখন এমন একটা ক্রিকেট প্রদর্শন করছে যাতে সমর্থকদেরই বিব্রত হতে বাধ্য।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে বাংলাদেশ দল, খেলায় এরকম হয়ে যেতেই পারেন। শেষ ওয়ানডেতে ২৯৪ রান তাড়া করতে গিয়ে ৯৩ রানে অলআউটও হতেই পারে। কত দলই তো হঠাৎ হঠাৎ এমন ধসে পড়ে যায়। আচমকা দুর্বিপাকে পড়ে ২০০ হারেও একটা ক্রিকেটীয় যুক্তি দাঁড় করানো যায়। কিন্তু না! খেলা দেখে থাকলে আপনার ভাবনা নিশ্চিতভাবেই হবে আলাদা। কেউ খেলা না দেখে থাকলে বোঝা সম্ভব না কতটা নতজানু মানসিকতায় অসহায় আত্মসমর্পণ দেখিয়েছে বাংলাদেশের এই দল।
২৯৪ রানের লক্ষ্য তাড়ায় বাংলাদেশ দল শুরু থেকে যে অ্যাপ্রোচে ব্যাট করতে নেমেছিলো, তাতে এক মুহূর্তের জন্যও মনে হয়নি তারা এই রানটা তাড়া করতে চায়। মনে হয়েছে পুরো ৫০ ওভার খেলে একটা 'সম্মানজনক' হারের লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে। সর্বশেষ ৬টি ওয়ানডেতে বাংলাদেশ ৫০ ওভার ব্যাট করতে পারেনি। অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ ম্যাচ শেষেও সেই না পরার প্রসঙ্গ টেনেছেন। টিকে থাকার লক্ষ্য নিয়ে নেমেও যদিও বাংলাদেশ দল পারেনি, এমনকি ৩০ ওভারও খেলতে পারেনি। গুনে গুনে ১৬৩ বল স্থায়ী হয়েছে ইনিংস, মজার কথা হলো এই ১৬৩ বলের মধ্যে ৯৩ বলই ডট খেলেছেন তারা!
সোশ্যাল মিডিয়ায় মজা করে কেউ কেউ তো বলছিলেন, বাংলাদেশকে আরেকবার ব্যাট করতে দিলেই এই রান তাড়া করতে পারত না। সত্যিই দুইবার ব্যাট করেও তারা পারতেন কিনা সেই সংশয় কিন্তু আছে।
ওপেনার সাইফ হাসান (৪৩) ছাড়া আর কেউ দুই অঙ্কে যেতে পারেননি, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান করেছেন দশে নামা হাসান মাহমুদ (৯)।
একটু টপ অর্ডারের দিকে তাকান, রান তাড়ার লক্ষ্য যে ছিলো না তাদের সংখ্যাও অনেকটা বলে দেয়। কোন কিছু না করেই অদ্ভুত কারণে দলে আসা নাঈম শেখ ওপেন করতে নেমে ২৪ বলে করেছেন ৭ রান। এই ২৪ বলের মধ্যে একবারই তিনি বড় শটের চেষ্টা করেছিলেন, সেই চেষ্টাতেই আউট হয়েছেন। এমনকি একটি ফ্রী হিট পেয়েও উড়িয়ে মারার কোন চেষ্টা দেখা যায়নি তার ভেতর।
তিনে নেমে নাজমুল হোসেন শান্ত ১০ বল খেলে প্রথম রান করেন, পরে আউট হন ১৬ বলে ৩ রান করে। খোলসবন্দি চেহারাগুলো এবার পরিষ্কার হওয়ার কথা।
রশিদ খান বল করতে আসবেন- এই আতঙ্কও বোধহয় বাংলাদেশের ব্যাটারদের কুঁকড়ে রাখে। রশিদ ১৭তম ওভারে এসে প্রথম বলটাই করলেন গুগলি। তাওহিদ হৃদয় (১২ বলে ৭) চরম অস্বস্তিতে পড়ে বোল্ড। নুরুল হাসান সোহানকে দেখে মনে হচ্ছিল রশিদের বলে আউট হওয়া তার স্রেফ সময়ের ব্যাপার, হলোও তাই। রশিদকে এদিন ৩টার বেশি উইকেট নেওয়ার সুযোগ দেননি মাত্র দ্বিতীয় ম্যাচ খেলা মিডিয়াম পেসার বিলাল সামি। একে একে পাঁচটা উইকেট পেয়েছেন তিনি, মাত্র দুদিন আগে বিয়ে করেছেন। উপহারও পেয়ে গেছেন ব্যাগ ভরে।
সর্বশেষ খেলা ১২ ওয়ানডের মধ্যে ১১টি হেরেছে বাংলাদেশ। সিরিজ হেরেছে টানা চারটি। ওয়ানডেতে এত বাজে সময় ১৪ বছরে আসেনি। তবে অ্যাপ্রোচগত দিক থেকে ওয়ানডেতে এরকম নতজানু ক্রিকেট বাংলাদেশ দল সর্বশেষ খেলত সেই দুই দশক আগে। যখন প্রত্যাশার মাত্রা ছিলো ৫০ ওভার ব্যাট করা কেন্দ্রিক। বাংলাদেশের বর্তমান দলটিও ৫০ ওভার টিকে থাকতে চায় আগে। অধিনায়ক মিরাজ যেমন বলছেন, 'আমাদের ৫০ ওভার ব্যাট করতে হবে।'
Comments